ধানের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করার দাবি

শেরপুরে আমনের সবুজ শীষে দুলছে কৃষকের সোনালি স্বপ্ন

শেরপুর (বগুড়া) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১১ অক্টোবর ২০১৯ ১৩:৫৬ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ৩৮১ বার।

চলতি মৌসুমে বগুড়ার শেরপুরে রোপা-আমন ধানের বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। অনুকূল আবহাওয়া, রোগবালাই ও পোকার আক্রমণ না থাকায় অন্যান্য বছরের চেয়ে অনেক বেশি ধানের ফলন হবে বলে আশা সংশ্লিষ্টদের। তাই সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে দু’এক সপ্তাহ পরেই আগাম জাতের আমন ধান কাটা-মাড়াই শুরু হবে। কৃষক মেতে উঠবেন নবান্নের আনন্দে। এ অবস্থায় রোপা আমন ধানের সবুজ শীষে যেন দুলছে কৃষকের সোনালি স্বপ্ন। তবে তাদের উৎপাদিত ধানের ন্যায্যমূল্য পাওয়া নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন তারা। কারণ গত বোরো মৌসুমে কম দামে ধান বিক্রি করে প্রচ- মার খেয়েছেন। প্রতি বিঘায় চার থেকে সাত হাজার টাকা পর্যন্ত লোকসান গুণতে হয়েছে। তাই আসছে মৌসুমে আমন ধানের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করার জন্য সরকারের প্রতি দাবি জানিয়েছেন কৃষকরা।
স্থানীয় কৃষি অফিস জানায়, এই উপজেলায় চলতি মৌসুমে রোপা আমন ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ২০হাজার ৬১০ হেক্টর জমি। তবে চাষ হয়েছে ২২ হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১হাজার ৫৯০ হেক্টর জমি বেশি। এছাড়া গেল বছরের চেয়ে প্রায় ২হাজার হেক্টর জমিতে বেশি ধান চাষ করা হয়েছে। এরমধ্যে প্রায় সব জমিতেই উচ্চ ফলনশীল (উফশী) জাতের ধান লাগানো হয়েছে। যার মধ্যে ব্রি-ধান-৪৯, বিনা-৭, স্বর্ণা-৫, কাটারিভোগ, রনজিৎ জাতের হাইব্রিড জাতের ধান উল্লেখযোগ্য। এছাড়া আরও কয়েক রকমের মোটা-চিকন জাতের ধান চাষ হয়েছে কম বেশি। তবে দেশীয় জাতের ধানও চাষ করা হয়েছে। তবে তা খুবই সামান্য বলে সূত্রটি জানায়।
উপজেলার বরেন্দ্রখ্যাত এলাকা বলে পরিচিত মির্জাপুর, বিশালপুর, শাহবন্দেগী, ভবানীপুর, কুসুম্বী ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, দিগন্ত বিস্তৃত মাঠজুড়ে আমন ফসলের ক্ষেত। আগাম জাতের জমিতে ইতিমধ্যে আমনের ধানের শীষ বের হয়েছে। ক্ষেতেই উঁকি মারছে ধানের শীষগুলো। যা দেখে ভরে উঠেছে কৃষকের বুক। তাদের মুখে ফুটেছে সোনালি হাসি। আর মাত্র কয়েকদিন পরেই ঘরে তুলতে পারবেন নতুন ধান। এ অবস্থায় বাতাসে দোল খাচ্ছে কৃষকের স্বপ্নের ধান। এসময় কথা হয় উপজেলার মামুরশাহী গ্রামের কৃষক শাহাদত হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, এবার দশ বিঘা জমিতে বিনা-৭ ধান লাগিয়েছেন। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় রাসায়নিক সার কম লেগেছে, পোকামাকড় ও রোগবালাই নেই বললেই চলে। ফলে অন্যান্য বছরের তুলনায় খরচও অনেক কম হয়েছে। সবমিলিয়ে এবার আমনের বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে।
 উপজেলার ঘোলাগাড়ি গ্রামের কৃষক মতিউর রহমান মতি তাদের উৎপাদিত ধানের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করার দাবি জানিয়ে বলেন, বাজারে ধানের দাম কম। অথচ কৃষি উপকরণের দাম বাড়ছেই। এতে উৎপাদন খরচ বেশি হচ্ছে। ধান চাষে অব্যাহত লোকসান হওয়ায় কৃষক আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন। বিশেষ করে বিগত বোরো ও আউশ মৌসুমে প্রচ- মার খেয়েছেন তারা। তাই আমন ধানের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে হবে। অন্যথায় ধান চাষ থেকে কৃষক মুখ ফিরিয়ে নেবেন বলে জানান তিনি।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সারমিন আক্তার বলেন, এবার আবহাওয়া মোটামুটি আমন চাষের উপযোগী রয়েছে। তাই শেষ পর্যন্ত প্রাকৃতিক কোনো সমস্যা না ঘটলে আমন ধানের ফলন বিগত কয়েকবছরের রেকর্ড ছাড়িয়ে যাবে বলে আশাবাত ব্যক্ত করেন এই কৃষি কর্মকর্তা।