বিভ্রান্ত না হয়ে সর্তক থাকার আহবান

বগুড়ার শেরপুরে ইউএনও’র ফোন নম্বর ক্লোন করে চাঁদা দাবির অভিযোগ

শেরপুর (বগুড়া) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৬ অক্টোবর ২০১৯ ১২:১৯ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ১৯০ বার।

বগুড়ার শেরপুরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) লিয়াকত আলী সেখের ব্যবহৃত সরকারি ফোন নম্বর ক্লোন করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন ও সরকারি প্রকল্প দেয়ার কথা বলে চাঁদা দাবির অভিযোগ উঠেছে। ঘটনাটি জানতে পেরে তিনি বুধবার দুপুরের দিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন। এতে সংঘবদ্ধ চক্রটির ব্যাপারে সবাইকে সর্তক থাকার অনুরোধ জানান তিনি। পাশাপাশি কেউ ওই চক্রটির সন্ধান পেলে উপজেলা প্রশাসন এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জানাতেও বলা হয়েছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা লিয়াকত আলী সেখ বলেন, 'তাঁর ব্যবহৃত সরকারি নম্বর ০১৭৩৩-৩৩৫৪২৭ ক্লোন করে এবং তাঁর পরিচয় দিয়ে অন্য কোন নাম্বার থেকে উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ল্যাপটপ দেয়া হবে বলে টাকা দাবি করছেন। এছাড়া সরকারি বিশেষ বরাদ্দ ও বিভিন্ন প্রকল্প দেয়ার কথা বলেও জনপ্রতিনিধিদের কাছে ফোন করে চাঁদা দাবি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ আসছে। এতে বিভ্রান্ত না হয়ে এমন কোন ফোন পেলে সঙ্গে সঙ্গে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় অথবা থানা পুলিশিকে জানাতে আহবান জানান তিনি।'

এই ধরণের ঘটনা সম্পর্কে সবাইকে সর্তক থাকতে অনুরোধ জানিয়ে ইউএনও লিয়াকত আলী সেখ আরও বলেন, 'প্রতারক চক্রটির ফোনের প্রেক্ষিতে কোন প্রকার টাকা-পয়সা কিংবা কোন ধরণের চুক্তিবদ্ধ হবেন না। কারণ উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তিনি এরুপ কোন ফোন দেননি এবং ভবিষ্যতেও ফোন দেবেন না। এমনকি অতীত ও বর্তমানে তার বিরুদ্ধে এ ধরণের কোন অবৈধ লেনদেনে জড়িত থাকার কোন রেকর্ড নেই বলেও দাবি করেন। এছাড়া সংঘবদ্ধ ওই প্রতারক চক্রটিকে ধরতে থানা পুলিশে লিখিতভাবে জানানো হবে।'

এদিকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধানদের কাছে টাকা চাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নাজমুল ইসলাম জানান, ইউএনও’র স্যারের সরকারি নম্বর থেকে শেরপুর শহীদিয়া আলীয়া মাদ্রাসার অধ্যক্ষ ও উলীপুর আমেরিয়া মহিলা ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষসহ একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধানদের ফোন দিয়ে বলা হয়, 'আপনার প্রতিষ্ঠানে ল্যাপটপ বরাদ্দ হয়েছে। কিছু টাকার প্রয়োজন। জরুরি ভিত্তিতে এই নম্বরে ৫-৬ হাজার টাকা বিকাশ পাঠান।'

এ কথা শুনে আশ্চর্য হন তারা। কারণ স্যার তো এভাবে কোনদিন কথা বলেন না। এতে সন্দেহ হয়। একপর্যায়ে বিষয়টি তাকে জানানো হয়। এরপর ইউএনও স্যারের সঙ্গে কথা বললে তিনি কোন ফোন করেননি বলে জানিয়ে দেন। মূলত এর পরপরই ঘটনাটি ফাঁস হয়ে পড়ে।

একইভাবে একাধিক জনপ্রতিনিধির কাছেও ফোন দেয়া হয়েছে। উপজেলার খামারকান্দি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল ওহাব বলেন, 'ইউএনও স্যারের ফোন নম্বর থেকে আমাকে ফোন করা হয়। স্যারের নম্বরতো আগে থেকেই আমার ফোনে সেভ করা আছে। তাই ফোন রিসিভ করার করার পর তার কণ্ঠ কেমন যেন মনে হচ্ছিল। প্রথমমেই অপর প্রান্ত থেকে নিজেকে শেরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পরিচয় দেন। এরপর হঠাৎ ফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। কিছুক্ষণ পর আবার ওই নম্বর থেকে ফোন দিয়ে বলা হয়, চেয়ারম্যান সাহেব আপনার এলাকায় কি কি সমস্যা আছে, তা দ্রুত চিহিৃত করে তালিকা দেবেন। বিশেষ বরাদ্দের ব্যবস্থা করা হবে। আপনাকে সরকারি বিভিন্ন প্রকল্প দেয়া হবে। তাই প্রকল্প তৈরির জন্য কিছু টাকা খরচ হিসেবে পাঠিয়ে দেন। কিন্তু ওই চক্রটি সম্পর্কে আগে থেকেই তার জানা থাকায় সাক্ষাতে দেখা করে কথা বলতে চাইলে ফোন কেটে দেয়া হয়। এরপর থেকে তাকে আর ফোন দেয়া হয়নি।

শেরপুর থানার দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা (ডিউটি অফিসার) পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) মোর্শেদা খাতুন বলেন, ইউএনও স্যারের পক্ষ থেকে এখনও লিখিত কোন অভিযোগ বা সাধারণ ডায়েরী করা হয়নি। তবে অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। এছাড়া এ ধরণের চক্রটিকে রুখতে হবে। এজন্য পুলিশ প্রশাসন তৎপর রয়েছেন বলেও দাবি করেন এই পুলিশ কর্মকর্তা।