বিতর্ক কতটা আকর্ষণীয় হতে পারে তা বগুড়ায় দেখিয়ে দিল এনডিএফ বিডি

পুণ্ড্রকথা রিপোর্ট
প্রকাশ: ০২ নভেম্বর ২০১৮ ১৯:৫০ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ১৭৯৩ বার।

বিতর্ক প্রতিযোগিতা হলো যুক্তির লড়াই। সেখানে প্রতিযোগী দলগুলো নিজেদেরকে ‘শ্রেষ্ঠ তার্কিক’ প্রমাণের জন্য একে অপরকে ঘায়েল করতে এতটাই ‘তথ্য’ এবং ‘যুক্তি’ ব্যবহার করে থাকেন যে, লড়াইটা দর্শকদের কাছে তেমন আর উপভোগ্য থাকে না। যে কারণে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা যায় বিতর্ক প্রতিযোগিতার আয়োজনস্থলে প্রতিযোগী দলের সদস্য, তাদের সঙ্গে আসা অভিভাবক এবং নিজ নিজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গুটি কয়েক সহযোগী ছাড়া আর কাউকে দেখা যায় না। এমনকি লড়াইটা রস-কসহীন হয়ে পড়ে বলেই চুড়ান্ত প্রতিযোগিতার সময় দু’টি দল ছাড়া প্রতিযোগী আর কোন দলের সদস্যকেও সেখানে খুঁজে পাওয়া যায় না। কিন্তু এর ব্যতিক্রম দেখলাম ন্যাশনাল ডিবেট ফেডারেশন বাংলাদেশ সংক্ষেপে ‘এনডিএফ বিডি’র আয়োজনে।
শিশু থেকে শুরু করে, স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রী ও পেশাজীদের জন্য মোট ৮ ধরনের বিতর্ক প্রতিযোগিতার আয়োজন রেখেছিল এনডিএফ বিডি। ২ নভেম্বর শুক্রবার বগুড়া আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন) স্কুল ও কলেজ প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত রাজশাহী বিভাগীয় প্রতিযোগিতার প্রতিটি পর্বই অংশগ্রহণকারী, তাদের অভিভাবক এবং সহপাঠীসহ আমন্ত্রিত অতিথিরা দারুণ উপভোগ করেছেন। আয়োজনটি এতটাই প্রাণবন্ত ছিল যে সকালে শুরু হয়ে তা রাত পর্যন্ত দীর্ঘায়িত হলেও দর্শক কমেনি বরং ঘন্টায় ঘন্টায় নতুন নতুন অতিথি তাতে যুক্ত হয়েছেন। তবে আয়োজনটিকে উপভোগ্য করার পেছনে আয়োজক সংগঠন এনডিএফ বিডি’র সদস্যদের বৈচিত্রপূর্ণ উপস্থাপন কৌশল সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছে।
বিশেষ করে সংগঠনের কো-চেয়ারম্যান দেশ সেরা উপস্থাপক ও মিডিয়া ব্যক্তিত্ব এম আলমগীরের নান্দনিক উপস্থাপনা এক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখছে। প্রচ- বিনীয় স্বভাবের এই মানুষটি ঘন ঘন মঞ্চে গিয়ে গল্প বলে, প্রতিযোগীসহ তাদের সহপাঠী, অভিভাবক এবং অতিথিদের নিয়ে এক সঙ্গে গান গেয়ে মুখের শব্দ দিয়ে মিউজিক সৃষ্টির মাধ্যমে যেভাবে দর্শক মাতিয়েছেন তাতে তাকে ‘একাই একশ’ বললেও হয়তো ভুল হবে। বিরল প্রতিভা দেখে দর্শকদের অনেকে এম আলমগীরকে ‘লাখে একটা’ বলেই কবুল করেছেন। তাঁর সম্পর্কে বলতে গিয়ে বগুড়া থেকে প্রকাশিত দৈনিক করতোয়ার সাংবাদিক নাসিমা সুলতানা ছুটু বলেন, ‘এম আলমগীর বিরল প্রতিভার একজন মানুষ। তিনি একাধাকারে বিতার্কিক, শিক্ষক, সংগঠক, সাংবাদিক, সংবাদ পাঠক, উপস্থাপক, গায়ক এবং ভাল কমেডিয়ানও। শত শত মানুষকে একাই ধরে রাখার অসম্ভব ক্ষমতা রাখেন তিনি। তবে এতসব গুণ থাকার পরেও তিনি প্রচন্ড বিনয়ী। যেটি তিনি ক্ষণে ক্ষণে বুঝিয়ে দিয়েছেন।’

যত আয়োজনঃ
এনডিএফ বিডি আয়োজিত বিতর্ক প্রতিযোগিতায় প্রথাগত বিতর্কের পাশাপাশি প্রদর্শনী বিতর্ক রাখা হয়। ‘পেশাজীবী বিতর্ক’, ‘জুটি বিতর্ক’, ‘রম্য বিতর্ক’ ও ‘আঞ্চলিক ভাষার বিতর্ক’ নামের আয়োজনটি ছিল সবচেয়ে উপভোগ্য। শিশুদের জন্য আয়োজন করা বিতর্কের বিষয় ছিল ‘শিশুর মেধা বিকাশে টেলিভিশন নয় খেলার মাঠের ভূমিকাই মূখ্য’। এতে অংশগ্রহণ কররে বগুড়া ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল ও কলেজ এবং আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন পাবলিক স্কুল ও কলেজের ক্ষুদে বিতার্কিকরা। অংশগ্রহণকারী বিতার্কিকদের জন্য ছিল বাংলা ও ইংরেজি বারোয়ারী বিতর্ক। বিষয় বাংলা- ‘বুঝলো না কেউ তো চিনলো না, বুঝলো না আমার কি ব্যথা।’ পাবলিক স্পিকিং এর বিষয়-‘I have a dream...’ । সংসদীয় বিতর্কের বিষয়-‘নিরেপক্ষ নির্বাচন কমিশনই পারে সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করতে এতে অংশগ্রহণ করে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিতার্কিকরা অংশ নেন।

প্রদর্শনী বিতর্ক পর্বে ছিল পেশাজীবীদের জন্য বিতর্কের বিষয় ‘আমার পেশাই সেরা।’ অংশগ্রহণ করেছেন শিক্ষক, সাংবাদিক, আইনজীবী, ডাক্তার, পুলিশ, গৃহিণী ও হকারসহ বিভিন্ন পেশার সাবেক বিতার্কিকবৃন্দ। ‘প্রেমের ভুবনে আমরাই সেরা জুটি’ এই শিরোনামে আয়োজিত বিতর্কে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শেষের কবিতা’র দুই চরিত্র অমিত-লাবণ্য, শরৎ চন্দ্রের দেবদাস-এর দেবদাস-পার্বতী, এবং হুমায়ুন আমদের সৃষ্টি ‘হিমু-রুপা জুটি অংশগ্রহণ করে। রম্য বিতর্কের বিষয় ‘Love এ কোনো লাভ নাই শুধুই Loss. জেলা ভিত্তিক আঞ্চলিক বিতর্ক প্রতিযোগিতার শিরোনাম ছিল ‘আমার জেলাই সেরা’। এতে ঢাকা, রংপুর, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, পাবনা, নোয়াখালী ও খুলানা জেলার বিতার্কিকরা অংশ নেন।’

এনডিএফ বিডি’র বগুড়া জেলা কো-অর্ডিনেটর অনলাইন দৈনিক পুণ্ড্রকথার চীফ রিপোর্টার অরূপ রতন শীল জানান, ‘পুণ্ড্রনগরের  রাঙ্গামাটির পথ, ছড়িয়ে দিক যুক্তির শপথ’ শ্লোগানকে বুকে ধারণ করে তারা এই উৎসবের আয়েজন করেছেন। তিনি বলেন, ‘মূলত বিতর্ককে জনপ্রিয় করতেই আমাদের এই উদ্যোগ।'