টনসিল অপারেশনে শিশুর মৃত্যু

বগুড়ায় আটক ডা. সাইদুজ্জামান ও নিতাই চন্দ্রকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে

স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশ: ২৫ অক্টোবর ২০১৯ ০৯:৫২ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ৪৮৯ বার।

বগুড়ায় টনসিল অপারেশন করাতে গিয়ে তাওহিদ হোসেন ইয়া বাবু (১০) নামে এক শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় আটক দুই চিকিৎসককে সাড়ে ১০ ঘন্টা পর শুক্রবার সকালে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। পুলিশ বলছে,  মৃত শিশুর পরিবারের পক্ষ থেকে আটক চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ নেই এবং মামলাও করা হবে না বলে লিখিতভাবে জানানোর পর তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়। অবশ্য ওই ঘটনায় পুলিশের পক্ষ থেকে একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) হয়েছে।
যাদের আটক করা হয়েছিল তারা হলেন- বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালের নাক কান গলা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ডা. সাইদুজ্জামান এবং অ্যানেসথেসিলজী বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ডা. নিতাই চন্দ্র সরকার। 
শিশু তাওহিদ হোসেন ইয়া বাবু জেলার শাজাহানপুর উপজেলায় মাঝিড়া এলাকার ‘শহীদ ক্যাডেম একাডেমি’ নামে বেসরকারি একটি স্কুলের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র ছিল। সে বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলার নারচি গ্রামের ব্যবসায়ী সিরাজুল ইসলাম ফিরোজের ছেলে। তারা মাঝিড়ায় ভাড়া বাসায় বসবাস করতেন।
বগুড়া শজিমেক হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক ডা. সাইদুজ্জামানের কাছে টনসিল অপারেশন করাতে গিয়ে এর আগেও একাধিক শিশুর মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এর মধ্যে চলতি বছরের ৯ এপ্রিল শহরের মালেকা নার্সিং হোমে হুমায়ারা নামে ৬ বছরের এক শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় শহরজুড়ে ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছিল। 
জনতার বিক্ষোভের মুখে সেদিন ওই ক্লিনিকের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা পালিয়ে গিয়েছিলেন। অবশ্য ডা. সাইদুজ্জামান সে সময় কৌশলে সকলকে দ্রæত ম্যানেজ করে ফেলেছিলেন। যে কারণে ওই ঘটনায় তাকে কোথাও জবাবদিহী করতে হয়নি এমনকি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেনি। তবে এবার পরিস্থিতি বেগতিক হওয়ায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী তাকে তাৎক্ষণিকভাবে আটক করেছে।
তাওহিদ হোসেন ইয়া বাবুর মামা শামছুজ্জোহা জানান, তার ভাগ্নে টনসিলের সমস্যায় ভুগছিল। তিন মাস আগে তাকে ডা. সাইদুজ্জামানের কাছে নেওয়া হলে তিনি অপারেশনের পরামর্শ দেন। এরপর বৃহস্পতিবার বিকেলে ডক্টরস্ ক্লিনিক ইউনিট-২ তে আবারও তার কাছে নেওয়া হলে তিনি সেদিনই অপারেশনের প্রয়োজনীয়তার কথা বলেন। এরপর সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে তাকে অপারেশন থিয়েটারে নেওয়া হয়। কিন্তু যখন তিন ঘন্টা পরেও যখন তার ভাগ্নে তাওহিদ হোসেন ইয়া বাবুকে বের করা হচ্ছিল না তখন তারা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। তিনি বলেন, ‘আমরা ইয়া বাবুকে দেখতে চাইলে আমাদের নিষেধ করা হয়। শুধু বলা হয় বাচ্চা ভাল আছে। এখন তার সঙ্গে দেখা করা যাবে না। তাকে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়েছে- চিকিৎসকদের এমন কথায় আমাদের সন্দেহ আরও ঘণীভূত হয়। এক পর্যায়ে আমরা ভেতরে গিয়ে দেখি সংজ্ঞাহীন ইয়াবাবুর মুখ দিয়ে রক্ত পড়ছে। তখন তার বাবা-মাসহ অন্যরা কান্নায় ভেঙ্গে পড়লে পরিস্থিতি উপ্তপ্ত হয়ে ওঠে। এর পর পরই সেখানে পুলিশ আসে।’
খালাতো ভাই গোলাপ জানান, অপারেশন থিয়েটারে যাওয়ার আগ পর্যন্ত ইয়া বাবু তার সঙ্গে মোবাইলে গেম খেলেছে। কান্না জড়ানো কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘যে ভাই আমার হাসতে হাসতে ওটিতে গেল কয়েক ঘন্টার মধ্যে তারই লাশ দেখতে হবে-এটা আমরা কখনো কল্পনাও করিনি।’
বগুড়া সদর থানার ওসি (তদন্ত) রেজাউল করিম রেজা জানান, টনসিল অপারেশনে এক শিশুর মৃত্যুতে জনতা বিক্ষুব্ধ হয়ে ডক্টরস্ ক্লিনিক ঘেরাও করছে-এমন টা শোনার পর পরই তারা ঘটনাস্থলে যান। তিনি বলেন, শিশু ইয়া বাবুর মৃত্যুর জন্য তার পরিবারের পক্ষ থেকে অপারেশন পরিচালনাকারী ডা. সাইদুজ্জামান এবং অ্যানেসথেসিস্ট ডা. নিতাই চন্দ্র সরকারকে দায়ী করা হয়েছে। তাছাড়া বিক্ষুব্ধ লোকজন অভিযুক্ত দুই চিকিৎসককে গ্রেফতারের দাবিতে ক্লিনিকটি ঘেরাও করেছিলেন। পরে ওই দুই চিকিৎসককে আটক করে থানায় আনা হলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। 
বগুড়া সদর থানার ওসি এস এম বদিউজ্জামান জানান, মৃত শিশুর পিতা সিরাজুল ইসলাম তাদেরকে লিখিতভাবে জানিয়েছেন যে, আটক চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে তার কোন অভিযোগ নেই এবং তিনি কোন মামলাও করবেন না। যে কারণে ওই দুই চিকিৎসককে শুক্রবার সকাল সাড় ১০টার দিকে  ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। তবে  তিনি বলেন, ‘আলোচিত ওই ঘটনায় পুলিশের পক্ষ থেকে একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছে।’