চিকিৎসা মিললেও মেলেনা ওষুধ

নওগাঁর রাণীনগরে ৯ লাখ পশু-পাখির চিকিৎসায় মাত্র চারজন চিকিৎসক

কাজী আনিছুর রহমান,রাণীনগর (নওগাঁ)
প্রকাশ: ২৬ অক্টোবর ২০১৯ ১১:২২ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ১৬৮ বার।

নওগাঁর রাণীনগর উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরে আট জন চিকিৎসকের মধ্যে প্রধান কর্মকর্তাসহ চার জন চিকিৎসকের পদই খালি রয়েছে। মাত্র চার জন চিকিৎসক দিয়ে চলছে উপজেলার প্রায় ৯ লক্ষাধীক পশু-পাখির চিকিৎসা। তবে কোন রকমে চিকিৎসা মিললেও মেলেনা ওষুধ। চিকিৎসক ও ওষুধের তীব্র সংকটে চিকিৎসা সেবা চরমভাবে ব্যহত হচ্ছে।

রাণীনগর উপজেলা প্রাণীসম্পদ দপ্তর সুত্রে জানা যায়, রাণীনগর উপজেলা জুরে পশু ও হাঁস-মুরগির চিকিৎসায় প্রাণীসম্পদ দপ্তরের আওতায় উপজেলা সদরে প্রাণীসম্পদ দপ্তর স্থাপিত হয়। দপ্তরে একজন উপজেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা, একজন ভেটেরিনারী সার্জন, একজন কৃত্তিম প্রজনন কর্মকর্তা, তিন জন প্রাণীস্বাস্থ্য কর্মকর্তা একজন ড্রেসারসহ মোট আট জন চিকিৎসককে নিয়োগ দেয়া হয়। এছাড়া একজন অফিসসহায়ক ও একজন অফিস সহকারী কাম-কম্পিউটার অপারেটরসহ মোট ১১টি পদে লোক নিয়োগ দেয়া হয়।

এর মধ্যে দীর্ঘ দিন ধরে উপজেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তাসহ দু’জন স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ও একজন ড্রেসারসহ চার জন চিকিৎসকের পদ খালি রয়েছে। দপ্তরের দেয়া তথ্য মতে,উপজেলায় বর্তমানে ৯৯ হাজার ২৪৫টি গরু, ৭৭হাজার ৭১৫টি ছাগল-ভেড়া, ১লক্ষ ৯৭ হাজার বিভিন্ন প্রজাতির হাঁস এবং ৪ লক্ষ ৬৫ হাজার ৮৪৯ টি দেশী-বিদেশী মুরগি রয়েছে। এতে উপজেলা জুওে প্রায় ৯ লক্ষ পশু-পাখি থাকলেও আটজন চিকিৎসকের মধ্যে চার জনই না থাকায় এতোগুলো পশু-পাখির চিকিৎসা দিতে হিমসিম খেতে হচ্ছে। এছাড়াও ওষুধ সংকটতো লেগেই আছে । যার ফলে একদিকে চিকিৎসক ও অন্য দিকে ওষুধের তীব্র সংকটের কারনে চিকিৎসা সেবা চরমভাবে ব্যহত হচ্ছে ।

প্রাণীসম্পদের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা শওকত হোসেন জানান, প্রতিদিন গড়ে প্রায় ১২০ থেকে ১৫০টি গরু-ছাগলকে চিকিৎসা দিতে হচ্ছে। হাসপাতালে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এসব চিকিৎসা দিতেই হিমসিম খেতে হয়। ফলে মাঠ পর্যায়ে যাওয়ার সুযোগ হয়না।

গরু-ছাগলের চিকিৎসা নিতে আসা অনেকেই জানান, জরুরি ভিত্তিতে ডাক্তার প্রয়োজ হলে খবর দিয়ে গরু-ছাগল মারা গেলেও মাঠ পর্যায়ে যাওয়ার মতো কাউকে পাওয়া যায়না। এমনকি হাসপাতালে এসে ঘন্টার পর গণ্টা অপেক্ষা করতে হয়।

বর্তমানে উপজেলায় গরুর “ল্যাম্পি স্কিন” রোগে আক্রান্ত হয়ে বেশ কিছু গরু মারা গেছে। “ল্যাম্পি স্কিন” রোগে আরো আক্রান্ত হচ্ছে। গরু-ছাগলের অন্যান্য রোগের পাশা-পাশি এই নতুন রোগের প্রভাব বেশি হওয়ায় হাসপাতালে গরু-ছাগলের ভিড় বাড়ছে।

গুয়াতা গ্রামের হামিদুল হল (বটো) জানান, তার চারটি গরুর ল্যাম্পি স্কিন ডিজিজ হয়েছিল। এ বিষয়ে রাণীনগর পশু হাসপাতালে গিয়ে জানালে আসবো বলে ডাক্তাররা আর আসেনি এবং তারা কোন প্রতিকার মূলক ব্যবস্থা নেয়নি।

তিনি আরো জানান, স্থানীয় ডাক্তার দিয়ে চিকিৎসা করাতে প্রায় সাড়ে ২৬ হাজার টাকা খরচ হয়েছে । তার পরেও একটি গরু মারা গেছে এবং প্রায় ৬০ হাজার টাকা দামের একটি গরু মাত্র চার হাজার টাকায় বিক্রি করতে হয়েছে।

উপজেলার বড়িয়া গ্রামের খামারি মহফিল হোসেন, পৌতাপাড়া গ্রামের বাবুল হোসেন, কাশিমপুর গ্রামের সাথী বিবি জানান, গরু নিয়ে এসে সকাল থেকে বসে আছি । মাত্র একজন ডাক্তার এতোগুলো গরু-ছাগলের চিকিৎসা কিভাবে দিবে। তারা অভিযোগ করে বলেন, কোন রকমে চিকিৎসা মিললেও হাসপাতাল থেকে শুধুমাত্র সামান্য পরিমানে কৃমিনাশক ও রুচির ওষুধ ছাড়া কোন ওষুধ মেলেনা। সবগুলো ওষুধ বাহিরে থেকে কিনতে হয়।

নওগাঁ জেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ডা:উত্তম কুমার দাস বলেন, 'আমরা প্রতিমাসে জনবল সংকটের কথা উল্লেখ করে মাসিক প্রতিবেদনে দাখিল করি। কিন্তু এর পরেও জনবল মিলছেনা।'

তিনি আরো বলেন, 'বছরে মাত্র একবার ওষুধের বরাদ্দ পাওয়া যায়। রাণীনগর উপজেলার জন্য যে পরিমান ওষুধের চাহিদা রয়েছে বরাদ্দকৃত ওষুধ দিয়ে সর্বোচ্চ ২-৩ মাস চলবে। চাহিদার তুলনায় বরাদ্দ না থাকায় ওইটুকু ওষুধ দিয়েই সারা বছর চালাতে হয়।'