'গুণধর' প্রতারক এসপিকে বললেন

'বর্তমান আইজিপি আমাকে স্যার বলে ডাকেন!'

পুণ্ড্রকথা ডেস্ক
প্রকাশ: ২৬ অক্টোবর ২০১৯ ১৩:১০ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ১৩৭ বার।

তিনি কণ্ঠ বদল করতে পারেন। প্রশাসনের ভেতরকার কিছু খবরা-খবর ঠোঁটস্থ। পদস্থ কর্মকর্তাদের নাম-ধামও মুখস্থ। কে কোথায় আছেন কিভাবে আছেন সেটিও জানেন তিনি। প্রধানমন্ত্রীর বেয়াইসহ একেক সময় একেক পরিচয়ে চাকরি দেওয়া, বদলি করার কাজও করেছেন তিনি। সেই 'গুণধর' প্রতারক অবেশেষে পুলিশের হাতে ধরা পড়লেন। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পুলিশ সুপার মো. আনিসুর রহমানকে ফোন করে ফেঁসেছেন তিনি। প্রথমবার এক ঘণ্টা দুই মিনিটের আলাপচারিতায় ওই প্রতারকের কথাবার্তা সন্দেহ হলে পিছু নেয় পুলিশ। 

বিভিন্ন ফাঁদ পেতে প্রায় দেড় মাসের চেষ্টায় গতকাল শুক্রবার বরিশাল সদর থেকে এক সহযোগীসহ তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারের পর জিজ্ঞাসাবাদেও বেরিয়ে আসে চাঞ্চল্যকর কিছু তথ্য। এসব তথ্যসহ গ্রেপ্তারকৃতদের ঠিকানা যাচাই করছে পুলিশ। শনিবার দুপুরে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পুলিশ সুপার কার্যালয়ে হওয়া সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়। 

গ্রেপ্তারকৃতরা হলো, ঝালকাঠি সদরের কোনাবাড়ি ইউনিয়নের মির্জাপুর গ্রামের মো. সোলমান খাঁর ছেলে মো. ইয়াছিন খাঁ (৪০) ওরফে খন্দকার বাবর ও তার সহযোগী কুষ্টিয়া সদরের মনোহরদিয়া গ্রামের সাহার আলীর ছেলে হাফেজ মুফতি আব্দুর রহিম (৩৩)। সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করে তাদের শনিবার আদালতে পাঠানো হয়।

সংবাদ সম্মেলন পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আনিসুর রহমান জানান, গত ৯ সেপ্টেম্বর সকালে তার কাছে ফোন আসে। এমডি সজীব পরিচয়টা এমনভাবে দেয় যে মনে হবে এমপি সজীব। এক ঘণ্টা দুই মিনিট তার সঙ্গে কথা হয়। এ সময় তিনি নিজেকে একজন বড় মাপের কেউ হিসেবে পরিচিত করার চেষ্টা করেন।

কথার একপর্যায়ে ওই ব্যক্তি বলেন, বর্তমান আইজিপিকে আমি ব্যাজ পরিয়েছি। তার আইজিপি হওয়ার পেছনে আমার ভূমিকা আছে। তিনি আমাকে স্যার বলে ডাকেন। তবে উনি যেহেতু বড় র‌্যাঙ্কের তাই আমি স্যার না ডেকে ভাই ডাকতে বলেছি।
 
পুলিশ সুপার জানান, অনেক কথা তিনি বলতে থাকলেও আসল উদ্দেশ্য তিনি বলতে চাচ্ছিলেন না। অনেক পরে ওই ব্যক্তি জানান, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরের এক যুবককে পুলিশে চাকরি দেওয়ার জন্য পুলিশের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তাকে সাড়ে তিন লাখ টাকা দিয়েছেন। কিন্তু চাকরিটা হয়নি।

পুলিশ সুপার বলেন, এসব কথা শুনে আমার সন্দেহ হয়। বিষয়টি খোঁজ নেওয়ার জন্য নবীনগর থানা সংশ্লিষ্টদের অবহিত করি। পরে জানা যায় নবীনগরের গোপালপুর গ্রামের আবু মুছার ছেলে মো. ইছহাককে চাকরি দেওয়ার কথা বলে সাড়ে তিন লাখ টাকা নেয়। ভুক্তভোগীদের সঙ্গে কথা বলে গত ২১ অক্টোবর নবীনগর থানায় মামলা দায়ের করানো হয়। এরই মধ্যে ওই প্রতারক ব্রাহ্মণবাড়িয়ার এক পুলিশের কাছেও ৫০ হাজার টাকা চায় বদলি করানোর জন্য, যদিও বদলি করানোর বিষয়টি আমরা নিজেরাই সাজিয়েছি তার প্রতারণা সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ার জন্য।

সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (নবীনগর সার্কেল) মো. মেহেদী হাসান জানান, ইয়াছিন খাঁ বিভিন্ন পরিচয়ে চাকরি দেওয়া, বদলি করাসহ বিভিন্ন বিষয়ে কাজ করার কথা বলে মানুষের কাছ থেকে টাকা-পয়সা হাতিয়ে নিচ্ছিল। নবীনগরে এ কাজে তাকে সহযোগিতা করে গ্রেপ্তার হওয়া আব্দুর রহিম। গ্রেপ্তার হওয়া দুজনকে সাত দিন করে রিমান্ড আবেদন করা হয়েছে।