নিজেদের ভুলে ‘ডি’ ইউনিটের ফল স্থগিত করল চবি প্রশাসন

পুণ্ড্রকথা ডেস্ক
প্রকাশ: ৩০ অক্টোবর ২০১৯ ১১:২৮ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ৬৯ বার।

নিজেদের ‘ভুলে’ প্রশ্ন ছাপানোয় কারিগরি ত্রুটির কারণ দেখিয়ে ‘ডি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় ফলাফল স্থগিত করেছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) প্রশাসন। এর আগে সোমবার দুই শিফটে এ ইউনিটের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়।

বুধবার দুপুরে পরীক্ষার ফলাফল স্থগিতের বিষয়টি নিশ্চিত করে শিক্ষা অনুষদের ডিন ও ‘ডি’ ইউনিট ভর্তি পরীক্ষা কমিটির প্রধান সমন্বয়ক আবদুল্লাহ আল ফারুক বলেন, ‘ডি’ ইউনিটের পরীক্ষায় ন্যাশনাল কারিকুলামের ইংরেজি মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের প্রশ্ন ছাপানোয় ‘কারিগরি ত্রুটির’ কারণে এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এ মাধ্যমের ৪২৮ শিক্ষার্থীর পরীক্ষা ৬ নভেম্বর আবার নেয়া হবে। খবর দেশ রুপান্তর 

এ ঘটনায় চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছে ‘ডি’ ইউনিটের বেশ কয়েকজন পরীক্ষার্থী।

জানতে চাইলে পরীক্ষার্থী রাসেল আহমেদ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব ভুলের কারণে আমাদের ফলাফল পেতে দেরি হচ্ছে। প্রশাসন যদি নিয়ম মেনে পরীক্ষা নিত তাহলে এত দেরি হতো না। নিয়ম না থাকলেও পরীক্ষার দিন ন্যাশনাল কারিকুলাম ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষার্থীদের যে প্রশ্ন দেওয়ার কথা তা না দেওয়ায় আবার পরীক্ষা দিতে হচ্ছে।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে সব ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় তিন ধরনের (১. বাংলা মাধ্যম ২. ইংরেজি মাধ্যম ব্রিটিশ কারিকুলাম (বাংলা ভাষাভাষী নন) ৩. ইংরেজি মাধ্যম ন্যাশনাল কারিকুলাম।) শিক্ষার্থীরা অংশ নিয়ে থাকেন।

নিয়ম অনুযায়ী, তাদের জন্য পৃথক প্রশ্নপত্রের ব্যবস্থা করে হয়। এর মধ্যে বাংলা মাধ্যমের জন্য ইংরেজি ব্যতীত সব প্রশ্ন বাংলায় প্রণয়ন করা হয়।

তবে ব্রিটিশ কারিকুলামের শিক্ষার্থীদের প্রশ্নপত্রের ভাষা ইংরেজি হয়ে থাকে। তাদের জন্য ইংরেজিতে প্রশ্ন করা হয়।

এ ছাড়া নিয়ম অনুযায়ী ভর্তি পরীক্ষায় ন্যাশনাল কারিকুলাম (ইংরেজি মাধ্যম) শিক্ষার্থীদের প্রশ্ন ইংরেজি ভাষায় প্রণয়নের পাশাপাশি শুধু বাংলা বিষয়ের অংশ বাংলা ভাষায় প্রণয়ন করার কথা। কারণ তাদের পাঠ্যক্রমে বাংলা বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত থাকে।

তাই ভর্তি পরীক্ষায় তাদের জন্যও বাংলা বিষয়ের উত্তর দেওয়া আবশ্যক। তবে চবির ‘ডি’ ইউনিটের পরীক্ষায় তা করা হয়নি।

এ ঘটনাকে ‘নজিরবিহীন আখ্যা দিয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন শিক্ষক বলেন, প্রশ্ন তৈরির কিছু সুনির্দিষ্ট নিয়ম রয়েছে। প্রশ্ন প্রণয়ন কমিটি বিষয়টি মাথায় রেখেই প্রশ্ন তৈরি করার কথা। তবে আজ যে কারণ দেখিয়ে তারা পুনরায় পরীক্ষা নেয়ার কথা বলছেন, এর মাধ্যমে প্রশ্ন প্রণয়ন কমিটি ‘অজ্ঞতার‘ পরিচয় দিয়েছেন।

তারা বলেন, এ দিকে ফলাফল প্রকাশে বিলম্ব হওয়ায় প্রায় ৫২ হাজার শিক্ষার্থীকে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। এ ধরনে ঘটনা নজিরবিহীন। এর দায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনেও এড়াতে পারে না।

জানা যায়, এ বছর চবির ‘ডি‘ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় নিয়ম অনুযায়ী ন্যাশনাল কারিকুলামের ইংরেজি মাধ্যমের আবশ্যক বাংলা বিষয়ের কোনো প্রশ্নপত্র প্রণয়ন করা হয়নি। তাদের পরীক্ষা নেয়া হয়েছে ইংরেজি মাধ্যমের ব্রিটিশ কারিকুলামের প্রশ্নপত্রে।

নিয়মানুযায়ী, ইংরেজি মাধ্যমের ব্রিটিশ কারিকুলামের শিক্ষার্থীদের মতো তারা বিশেষ ইংরেজি বিষয়ের উত্তর দিতে পারেন না। ফলে পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী ইংরেজিমাধ্যম ন্যাশনাল কারিকুলামের ৪২৮ শিক্ষার্থীর পুনরায় পরীক্ষা নেবে চবি প্রশাসন।

বিষয়টি শিকার করে শিক্ষা অনুষদের ডিন ও ‘ডি’ ইউনিট ভর্তি পরীক্ষা কমিটির প্রধান সমন্বয়ক আবদুল্লাহ আল ফারুক বলেন, ন্যাশনাল কারিকুলাম ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষার্থীদের জন্য সরবরাহকৃত প্রশ্নের বাংলা অংশ না ছাপানোয় কিছু শিক্ষার্থী অভিযোগ করেন। তাই আবার তাদের (ন্যাশনাল কারিকুলাম-ইংরেজি মাধ্যম) পরীক্ষা নেয়া হবে। আর পরীক্ষা নেয়ার দ্রুত সময়ের মধ্যে ফলাফল প্রকাশ করা হবে।

এক প্রশ্নের জবাবে আবদুল্লাহ আল ফারুক আরো বলেন, এ ধরনের ঘটনা আরো ঘটেছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন পরীক্ষা নিলেও শিক্ষার্থীদের যাওয়া-আসার ব্যয় বিশ্ববিদ্যালয় বহন করবে না, তাদেরই বহন করতে হবে।

তবে সার্বিক বিষয়ে কথা বলতে বেশ কয়েকবার চেষ্টা করেও বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য (রুটিন দায়িত্বপ্রাপ্ত) অধ্যাপক শিরীণ আখতারের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

২৮ অক্টোবর ‘ডি’ ইউনিটের পরীক্ষায় ৪৪ হাজার ৯৯০ জন অংশ নেন। এর আগে ইউনিটের অধীনে সমাজবিজ্ঞান অনুষদ, আইন অনুষদ, ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদ (আংশিক) ও জীববিজ্ঞান অনুষদের দুটি বিভাগের (আংশিক) এক হাজার ১৫৭ আসনের বিপরীতে ৫২ হাজার ৯১৭ শিক্ষার্থী আবেদন করেছিলেন।