৪ নভেম্বর ধুনটের গণহত্যা দিবস

আমিনুল ইসলাম শ্রাবণ ধুনট উপজেলা (বগুড়া)
প্রকাশ: ০৪ নভেম্বর ২০১৮ ০৬:৪০ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ২২০ বার।

আজ ৪ নভেম্বর বগুড়ার ধুনট উপজেলার শোকাবহ গণহত্যা দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে পাকিস্তানি সেনা সদস্যরা ২৯ জন নিরহ বাঙালীকে হত্যা করেছে। তাদের মৃতদেহ পশ্চিম ভরনশাহী গ্রামে মাটি চাপা দিয়ে রাখা হয়েছে। যা গণকবর হিসেবে পরিচিত।

গণহত্যা দিবসে নিহতরা হলেন, ভরনশাহী গ্রামের জহির উদ্দিন, কান্তনগর গ্রামের মোস্তাফিজুর রহমান, মাজবাড়ি গ্রামের একই পরিবারের দুই ভাই জিল্লুর রহমান, ফরহাদ আলী ও পর্বত আলী, চাঁন্দার পাড়ার গ্রামের আব্দুল লতিফ, শিয়ালী গ্রামের নরুল ইসলাম। এছাড়া ২১জনের নাম জানা যায়নি।

মুক্তিযোদ্ধাদের তথ্যমতে, একাত্তুরের মহান স্বাধীনতাযুদ্ধে পাক সেনারা ধুনট থানায় ক্যাম্প করে। তারা উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় নিয়মিত টহল দিতে থাকে। বাছাইকৃত কতিপয় ব্যক্তিকে নিয়ে রাজাকার বাহিনী গঠন করে। মুক্তিযোদ্ধাদের খবর অনুসন্ধানের জন্য পাক সেনারা রাজাকারদের দায়িত্ব দেয়। ১৯৭১ সালের ৩ নভেম্বর রাতে রাজাকারদের তথ্য নিয়ে মাঠে নামে পাক সেনারা। রাজাকারদের সহযোগিতা নিয়ে উপজেলার কয়েকটি স্থানে হানা দেয় পাক বাহিনী। তারা মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিযোদ্ধার আশ্রয়দাতাসহ মোট ২৯জন লোককে আটক করে থানা ক্যাম্পে নিয়ে আসে। গভীর রাত পর্যন্ত আটককৃতদের উপর শারীরিক নির্যাতন চালায় পাক সেনারা। এদের মধ্যে অজ্ঞাত একজন পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়।

পশ্চিম ভরনশাহী গ্রামের লুৎফর রহমান জানান, ধুনট থানা ভবনের পূর্বপাশে বর্তমানে চাল ব্যবসায়ী জেল হোসেনের চাতালের নিকট দু’টি গণকবর রয়েছে। পবিত্র রমজান মাসের ওই দিন দুপুরে থানা ভবন থেকে আটক ব্যক্তিদের পাকসেনারা সেখানে নিয়ে আসে। আটককৃতদের দিয়ে গর্ত খোড়া হয়। গর্ত তৈরীর কাজ শেষ হলে তার মধ্যে আটককৃতদের নামানো হয়। পবিত্র রমজানের বিকেল। পশ্চিম আকালে সূর্যটা লাল কিরন ছড়িয়ে দিচ্ছে। এমন সময় মাটির গর্তে থাকা নিরহ বাঙ্গালীদের ব্র্যাশ ফায়ার করে হত্যা করা হয়। তবে সেনাদের বুলেটের আঘাতে তখনও সকলের মৃত্যু হয়নি। এমন সময় রাজাকারদের সহযোগিতায় নিরহ বাঙ্গালীদের মাটিচাপা দেওয়া হয়। নির্মাম ভাবে সেদিন নিরহ বাঙ্গালীদের হত্যা করা হয়েছিল।

দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ইটের প্রাচীর দিয়ে গণকবর দু’টি সংরক্ষণ করা হয়েছে। এছাড়া নাম জানা শহীদদের নাম সম্বলিত একটি ফলক লাগানো হয়েছে। তবে গণকবর দু’টি অযত্ন অবহেলার শিকার। স্বাধীনতা দিবস ও বিজয় দিবসে ফলক লাগানো গণকবরটি সাদা রং দিয়ে যত্ন নেওয়া হয়। অপর একটি গণকবর অযত্নে নিশ্চিহ্নের পথে। এছাড়া স্বাধীনতা পরবর্তি সময়ে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে গণহত্যা দিবসটি পালিত হয়নি। প্রতিবছরই নিরবে কেটে যায় ধুনটের গণহত্যা দিবস