সৌদিতে নির্যাতনের শিকার সুমির কান্না ভাইরাল: ফিরিয়ে আনতে উদ্যোগ

পুণ্ড্রকথা ডেস্ক
প্রকাশ: ০৩ নভেম্বর ২০১৯ ১৩:৩৪ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ১৪৭ বার।

‘ওরা আমারে মাইরা ফালাইব, আমারে দেশে ফিরাইয়া নিয়া যান। আমি আমার সন্তান ও পরিবারের কাছে ফিরতে চাই। আমাকে আমার পরিবারের কাছে নিয়ে যান। এখানে আমার ওপর অনেক নির্যাতন করা হচ্ছে। আর কিছুদিন থাকলে হয়তো মরেই যাব। তাই সবার কাছে অনুরোধ আপনারা আমাকে দেশে ফিরিয়ে নিয়ে যান’।

সৌদিতে নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে এভাবে আকুতি জানানো একটি ভিডিও সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়। সৌদিপ্রবাসী ওই নারী সাভারের সুমি আক্তার (২৬)।

সুমিকে ফিরিয়ে আনতে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম উদ্যোগ নিয়েছেন বলে জানা গেছে।

সুমির আকুতির ভিডিওটি ফেসবুকে ভাইরাল হওয়ার পর তার স্বামী নুরুল ইসলাম রাজধানীর পল্টন থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন।

সরেজমিনে সাভারের চারাবাগ এলাকায় গিয়ে প্রবাসী সুমির পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পঞ্চগড় জেলার বোদা থানা এলাকার রফিকুল ইসলামের মেয়ে সুমির ২০১৬ সালে সাভারের চারাবাগ এলাকার নুরুল ইসলামের সঙ্গে বিয়ে হয়। বিয়ের পর সুমি জানতে পারেন তার স্বামী নুরুল ইসলামের আগেও একটি বিয়ে করেছেন। বাধ্য হয়ে সুমি সংসার শুরু করেন। বিয়ের দেড় বছর পর সুমিরও একটি সন্তান হয়। এ সময় সতিনের বিভিন্ন নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে নিজের সন্তানকে মানুষ করার জন্য বিদেশ যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় সুমি।

এ জন্য চলিত বছরের জানুয়ারিতে গৃহকর্মীর ট্রেনিং শেষ করেন সুমি। পরবর্তীতে বিনা মূল্যে বিদেশে যাওয়ার সুযোগ পেয়ে দালালদের দেখানো লোভ আর বিদেশে গিয়ে ভালো টাকা আয়ের আশ্বাসে ৩০ মে ‘রূপসী বাংলা ওভারসিজ’ নামে একটি এজেন্সির মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যের সৌদি আরবে পাড়ি জমান সুমি আক্তার। 

দালালরা বিদেশে পাঠানোর কথা বলে যে তাকে বিক্রি করে দিয়েছে সে কথা জানত না সুমি। সৌদি যাওয়ার সপ্তাহখানেক পর থেকে শুরু হয় তার ওপর মারধর, যৌন হয়রানিসহ নানা নির্যাতন।

তাই সম্প্রতি ফেসবুকে কান্নাজড়িত কণ্ঠে তার সঙ্গে ঘটে যাওয়া পাশবিক নির্যাতনের কথা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফেসবুকে তুলে ধরে তাকে দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ জানান সুমি।

পরবর্তীতে ভিডিওটি ভাইরাল হয়।

সুমির স্বামী নুরুল ইসলাম বলেন, সৌদিতে যাওয়ার পরপরই আমার স্ত্রীর ওপর নানাভাবে নির্যাতন চলে। প্রথমে আমার সঙ্গে যোগাযোগও করতে দেয়নি। এরপর যখনই আমার সঙ্গে কথা হয় তখনই সুমি বাড়ি আসতে চায়। সে আর সৌদিতে আর থাকতে চায় না। পরে ঘটনাটি জানিয়ে আমি ১১ তারিখ পল্টন থানায় ‘রূপসী বাংলা ওভারসিজ’এজেন্সির মালিক আক্তার হোসেনের নামে জিডি করি। এ ছাড়া ন্যায়বিচারের জন্য জনশক্তি কর্মসংস্থান রপ্তানি ব্যুরোর মহাপরিচালকের দপ্তরে একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছি।

তিনি আরো বলেন, কিন্তু আইনি প্রক্রিয়ার মধ্যে গিয়েও আমার স্ত্রীকে বিদেশ থেকে আনার এখনো কোনো রাস্তা পেলাম না। আমার স্ত্রী খুব কষ্টে আছে যখনই সে আমাকে ফোন দেয় কান্নাকাটি করে। দেশে ফিরতে চায়। তাই সংশ্লিষ্টদের কাছে অনুরোধ আমার স্ত্রীকে যেন তাড়াতাড়ি দেশে আনা হয়। নইলে নির্যাতন সইতে না পেরে সে মরেই যাবে।

পল্টন থানার উপপরিদর্শক (এসআই) রাজিউর বলেন, প্রবাসে এক নারী নির্যাতনের ঘটনায় তার স্বামী নুরুল ইসলাম এজেন্সির মালিক আক্তার হোসেনের নামে জিডি করেছেন। আমি তাকে মামলা দায়েরের পরামর্শ দিয়েছি। মামলা দায়েরের পর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

অন্যদিকে সৌদি আরবে কাজের আশায় গিয়ে নির্যাতনের শিকার সুমি আক্তারের ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর তাকে দেশে ফেরাতে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়েছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন প্রতিমন্ত্রীর সহকারী একান্ত সচিব সিরাজুল ইসলাম রোববার বলেন, ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া ভিডিওটি দেখে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী সাড়া দিয়েছেন। সংবাদটি রিয়াদে পাঠানো হয়েছে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মিশনকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে তাকে নিয়ে আসার জন্য।