ইন্দোরে হতাশার দিন

পুণ্ড্রকথা ডেস্ক
প্রকাশ: ১৪ নভেম্বর ২০১৯ ১৩:৫৩ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ১৬৯ বার।

দিনের শেষ বলটা করার পর আবু জায়েদ রাহি হাসলেন। চেতশ্বর পুজারা অফ স্টাম্পের বাইরের বলটা খেলার কোনো ঝামেলাতেই যাননি। দেখেশুনে ছেড়ে দিলেন। তাই দেখে কি এই হাসি বাংলাদেশের দিনের সবচেয়ে সফল বোলারের?

ওদিকে করতালিতে সতীর্থদের অভিনন্দন জানাচ্ছিলেন বাংলাদেশের ছোটখাটো গড়নের টেস্ট অধিনায়ক ‍মুমিনুল হক। কী নিয়ে যেন একবার হাসতেও দেখা গেল তাকে।

দিনের পুরো খেলা না দেখে টেলিভিশনে শুধু এই চিত্র দুটি দেখলে ভুল বার্তা পেতেন যে কেউ। বরং ভারতীয় কোচ রবি শাস্ত্রী যে ড্রেসিং রুমে অনেকটা এগিয়ে এসে মায়াঙ্ক আগারওয়াল ও চেতেশ্বর পুজারাকে বাহাবা দিচ্ছিলেন, সেটিই দিনের আসল ছবি। শুধু আগারওয়াল ও পুজারা নয়, টিম মিটিংয়ে নিশ্চয়ই পুরো দলকেই পিঠ চাপড়ে দিতে চাইবেন শাস্ত্রী।

টস জিতে ব্যাটিং বেছে নেওয়া বাংলাদেশকে ১৫০ রানে গুটিয়ে দেওয়ার পর ১ উইকেটে ৮৬ রান করে প্রথম দিনের খেলা শেষ করেছে ভারত। ৬৪ রানে পিছিয়ে থাকলেও ৯ উইকেট হাতে। মায়াঙ্ক আগারওয়াল ৩৭ ও চেতেশ্বর পুজারা ৪৩ রানে অপরাজিত থেকে দিন শেষ করেছেন। ইন্দোর টেস্টের ফল কি হতে যাচ্ছে, প্রথম দিন শেষেই কী তা অনুমান করা যাচ্ছে?

ইন্দোরে চূড়ান্ত একটা হতাশার দিনই আসলে পার করেছে বাংলাদেশ। শুরু থেকেই ভারতীয় বোলিংয়ের সামনে ধুঁকছে ব্যাটসম্যানরা। ভারতীয় ফিল্ডাররা একের পর এক ক্যাচ ছেড়েছে। এরপরও কিনা দেড় শতে শেষ টাইগারদের ইনিংস। তিনবার জীবন পেয়েও মুশফিকুর রহিম ৪৩ রানের বেশি করতে পারেননি। ১০৫ বলে ৪ চার ও ১ ছক্কায় করা সাজানো তার ইনিংসটিই বাংলাদেশের পক্ষে সর্বোচ্চ।

মুশফিকের সঙ্গে চতুর্থ উইকেটে জুটি জমেছিল অধিনায়ক মুমিনুল হকের। সেটি অবশ্য ওই ভারতীয় ফিল্ডারদের বদৌলতেই। কিন্তু জীবন পাওয়া মুমিনুলও থেমেছেন ৩৭ রানে। এই দুজনের পর বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রানটা লিটন দাসের। ৩১ বলে ২১। দলীয় ১৪০ রানে ভারতের অষ্টম শিকার হয়ে লিটন ফেরার আগেই অবশ্য বাংলাদেশের সব আশা শেষ।

ইশান্ত শর্মা, উমেশ যাদব, মোহাম্মদ শামি, রবিচন্দ্রন অশ্বিন। কাউকেই স্বচ্ছন্দে খেলতে পারেনি টাইগাররা। ৩ উইকেট নিয়ে শামি সবচেয়ে সফল। বাকি তিনজনের শিকার ২টি করে উইকেট। রবীন্দ্র জাদেজা উইকেট না পেলেও তাইজুলকে রান আউট করায় তার অবদান আছে।

উইকেটে কি তবে দারুণ কোনো জুজু ছিল? সকালে কিছুটা ময়েশ্চার ছিল, যার ফায়দা ইশান্ত-যাদবরা নিয়েছেন। কিন্তু শুরু থেকে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা নিজেরাই ছিলেন আত্মঘাতী। ইমরুল কায়েস তো পুরোটা সময় অস্বস্তিতে ভুগেছেন। সামদান ইসলাম (৬), মোহাম্মদ মিঠুনের ব্যাটে (৬) নির্ভার ভাব ছিল না। সাকিব আল হাসান, তামিম ইকবাল ছাড়া বাংলাদেশের ব্যাটিং দৈন্যই কি তাহলে ফুটে উঠল এদিন।

বলা হয় টেস্ট ম্যাচ সেশন বাই সেশন খেলা। প্রথম দিনের তিন সেশনে বাংলাদেশ কোনোটাই নিজেদের করতে পারেনি। কোনো সেশনেই প্রতিরোধ গড়তে পারেনি। বরং নিজেদের ওপর নিজেরা শুধু চাপ বাড়িয়ে গেছেন।

মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের কথাই ধরা যাক। দ্বিতীয় সেশনে মুমিনুল-মুশফিক লড়াইয়ের চেষ্টা করলেও সেটি ব্যর্থ হলো মুমিনুল ফেরায়। মাহমুদউল্লাহ (১০) সেখানে ছয়ে নেমে অশ্বিনকে উইকেটে উপহার দিলেন। মুশফিকও যেন তা দেখে ফেরার তাড়া অনুভব করলেন। দলীয় ১৪০ রানে ভারতীয়দের পঞ্চম শিকার তিনি। বাকি ১০ রান যোগ হতে বাংলাদেশের নেই ৫ উইকেট। পর পর দুই বলে মুশফিক ও মেহেদী হাসান মিরাজকে ফিরিয়ে তো হ্যাটট্রিকের সম্ভাবনা জাগালেন শামি।

হতাশার ব্যাটিং পারফরম্যান্সের পর বোলিং আবু জায়েদ রাহি শুরুটা করলেন দারুণ। দলীয় ১৪ রানেই তুলে নিলেন ৬ রান করা রোহিত শর্মাকে। এরপর আগারওয়ালের সঙ্গে পুজারা জুটি বাঁধলেন। দিনের শেষভাগে আগারওয়াল ব্যক্তিগত ৩২ রানে স্লিপে ক্যাচ দেন। বোলার রাহি তো প্রায় উদ্‌যাপন শুরু করে দিয়েছিলেন। কিন্তু সহজ ক্যাচটা ফেলে দিলেন ইমরুল কায়েস।

ভারতীয় ফিল্ডাররা একের পর এক ক্যাচ ছেড়েছেন। কিন্তু বোলাররা সেই দুঃখগুলো বড় হতে দেননি। কিন্তু বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরাই ফের প্রতিপক্ষকে সুযোগ দিয়ে গেছেন। কিন্তু পুজারা, আগারওয়ালরা কি সেটি করবেন? বিরাট কোহলি, আজিঙ্কা রাহানেরাও তৈরি হয়ে বসে আছেন। কে জানে প্রথম ইনিংসেই সংগ্রহটা কোথায় নিয়ে যায় ভারত।