নতুন সড়ক আইন নিয়ে আতঙ্ক

বগুড়ায় আন্তঃজেলা ও আভ্যন্তরীণ  ৬ রুটে বাস চলাচল বন্ধ

স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশ: ১৬ নভেম্বর ২০১৯ ১০:৪৩ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ২৪৪ বার।

নতুন সড়ক আইন কার্যকর হলে জেল-জরিমানা গুণতে হবে -এমন শঙ্কায় শনিবার বগুড়ার আভ্যন্তরীণ ও আন্তঃজেলার ৬টি রুটের চালকরা বাস চলাচল বন্ধ করেছেন। পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই এভাবে বাস চলাচল বন্ধ করায় দূর্ভোগে পড়েছেন যাত্রীরা। যার সুযোগ নিচ্ছে সিএনজি চালিত অটোরিকশা ও ব্যাটারি চালিত ইজিবাইক চালকরা। তারা বিভিন্ন গন্তব্যের যাত্রীদের কাছ থকে দেড় থেকে দুই গুণ ভাড়া নিচ্ছে।
যেসব রুটে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে সেগুলো হলো-বগুড়া থেকে নওগাঁ, বগুড়া-সান্তাহার, বগুড়া-আক্কেলপুর, বগুড়া-আবাদপুকুর, বগুড়া-চাঁপাপুর, বগুড়া- মোলামগাড়ি। অন্যদিকে বগুড়া-জয়পুরহাট ও বগুড়া-গাইবান্ধা রুটে বাস চলাচল সীমিত হয়ে পড়েছে। ওই দু’টি রুটে সকালে বাস চলাচল বন্ধ থাকলেও দুপুরে চলাচল করতে দেখা গেছে। 
খবর পেয়ে দুপুর ২টার দিকে বগুড়া সদর থানা পুলিশ কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে গিয়ে পরিবহন মালিক-শ্রমিক নেতৃবৃন্দের উপস্থিতিতে চালকদের সঙ্গে বৈঠক করেন। সেখানে পুলিশের পক্ষ থেকে আশ্বাস দেওয়া হয় যে, যেসব চালক বিআরটিএ অফিসে হালনাগাদ করার জন্য কাগজপত্র জমা দিয়েছেন তাদের  কোন হয়রানি করা হবে না। সদর থানার ওসি এস এম বদিউজ্জমান জনান, তাদের আশ্বাসে চালকরা বাস চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তবে বিকেল ৪টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ওই ৬টি রুটে বাস চলাচল শুরু হয়নি।
বগুড়া মোটর মালিক গ্রæপের হিসাব অনুযায়ী  আন্তঃজেলা ও আভ্যন্তরীণী রুটে প্রায় ৭০০ বাস চলাচল করে। তবে সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, এসব বাসের প্রায় ৯০ শতাংশেরই ফিটনেস নেই। এমনকি চালকদেরও লাইসেন্স নবায়ন করা হয়নি।
পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত ১ নভেম্বর নতুন সড়ক আইন কার্যকর হলেও সরকারের পক্ষ থেকে দুই সপ্তাহ তা শিথিল রাখার ঘোষণা দেওয়া হয়। শুক্রবার সেই সময়-সীমা পেরিয়ে যাওয়ায় যে কোন সময় অভিযান চালানো হবে-এমন শঙ্কা থেকেই চালকরা বাস চলাচল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেন।
বগুড়া কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে বসে থাকা নওগাঁ-বগুড়া রুটের বাস চালক মোহাম্মদ সাগর জানান, কারও চাপে নয় বরং তারা স্বেচ্ছায় মালিকের কাছে চাবি জমা দিয়ে এসেছেন। কারণ নতুন আইনে তাদের পক্ষে বাস চালানো সম্ভব নয়। তার মতে, আইন তৈরির আগে মহাসড়কে সিএনজি অটোরিকশা চলাচল বন্ধসহ পুলিশের হয়রানি বন্ধ করা দরকার।
ওই একই রুটের অপর এক বাসের হেলপার রবিউল ইসলাম জানান, সড়কে অনেক কারণেই দূর্ঘটনা ঘটে। কিন্তু নতুন আইন অনুযায়ী সব দোষ আমাদের নিতে হবে। আইন এত কঠোর করা হয়েছে যে তা আমাদের পক্ষে মানা সম্ভব নয়।
বাস চলাচল বন্ধ রাখার কারণে বগুড়া কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালের সামনে এখন সিএনজি চালিত অটোরিকশা ও ব্যাটারি চালিত ইজিবাইকের ভিড় বেড়েছে। তবে যাত্রীদের কাছ থেকে বাসের তুলনায় ভাড়া দেড় থেকে দুইগুণ আদায় করা হচ্ছে। আব্দুল কায়েম জানান, বগুড়া থেকে দুপচাঁচিয়ায় বাসের ভাড়া ৩০টাকা কিন্তু সিএনজি চালিত অটোরিকশায় ৫০ থেকে ৬০ টাকা নেওয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘এখন আমাদের কোন উপায় নেই। তারা যা চাবে তাই দিতে হবে।’
গাইবান্ধার সাঘাটা থেকে ধান কাটতে আসা সাঈদুল ইসলাম ও আশরাফ জানান, তারা ৭জন ধান কাটার জন্য সাহারপুকুরে যাবেন। বাস বন্ধ থাকায় প্রায় দ্বিগুণ ভাড়া ৮০টাকায় সেখানে যেতে হচ্ছে।
অবশ্য বগুড়া জেলা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক সামছুদ্দিন শেখ হেলাল সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, তাদেরকে না জানিয়েই কয়েকটি রুটে বাস চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। তার আশা দ্রুতই যান চলাচল আবার স্বাভাবিক হবে।
বগুড়া মোটর মালিক গ্রুপের সহ-সভাপতি তৌফিক হাসান ময়না জানান, মূলত চালকরা ভীত হয়েই বাস চলাচল বন্ধ করে দেয়। তবে পুলিশের সঙ্গে বৈঠকের পর তারা আবারও বাস চলাচলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
বগুড়া সদর থানার ওসি এস এম বদিউজ্জামান জানান, চালকদের বলা হয়েছে বিআরটিএ অফিসে কাগজপত্র জমা দিয়েছেন-এমন ডকুমেন্ট যারা দেখাতে পারবেন তাদের কোন হয়রানি করা হবে না।