নওগাঁয় এসএসসি ফরম পূরণে অতিরিক্ত টাকা আদায়

নওগাঁ প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৭ নভেম্বর ২০১৯ ১১:১৭ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ১৫৭ বার।

নওগাঁয় এসএসসি ফরম পুরনে শিক্ষার্থীদের নিকট থেকে অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের অভিযোগ উঠেছে ‘কাটখইর উচ্চ বিদ্যালয়ের’ প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে। স্থানীয়দের অভিযোগ- ফায়দা লুটতে শিক্ষার্থীদের ইচ্ছাকৃতভাবে টেস্ট পরীক্ষায় অকৃতকার্য (ফেল) দেখানো হয়। পরবর্তীতে শিক্ষার্থীদের নিকট থেকে টাকা নিয়ে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ গ্রহনের সুযোগ করে দেয়া হয়। তবে টাকা নেয়া হলেও কোন রশিদ দেয়া হয়না। প্রত্যন্ত এলাকায় অতিরিক্ত টাকা নেয়ায় কর্তৃপক্ষের নজরদারী দাবী করেছেন স্থানীয়রা।
জানা যায়, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডে ২০২০ সালের এসএসসি পরীক্ষায় ফরম পূরণে ফি নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। মানবিক ও ব্যবসা শাখায় অনলাইন খরচসহ ফরম পূরণে ফি ২ হাজার টাকা ও বিজ্ঞান শাখায় ফি ২ হাজার ১০০ টাকা করে নেয়ার নিয়ম। কিন্তু নওগাঁ সদর উপজেলার কাটখইর উচ্চ বিদ্যালয়ে বিজ্ঞান বিভাগে ফরম পূরণে ২ হাজার ২০০ টাকা ও কোচিং ফি ১ হাজার টাকা এবং টেস্ট পরীক্ষায় কোন বিষয়ে অকৃতকার্য হলে আরো ১ হাজার টাকা নেয়া হচ্ছে। একজন শিক্ষার্থীর নিকট থেকে মোট ৪ হাজার ২০০ টাকা আদায় করা হচ্ছে। এছাড়া মানবিক ও ব্যবসা বিভাগে ৩ হাজার ১০০ টাকা ও অকৃতকার্য হলে আরো ১ হাজার টাকা নেয়া হচ্ছে। বিদ্যালয়ের ১০১ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে মাত্র ২২ জন টেস্ট পরীক্ষায় উর্ত্তীন হয়েছে।
অধিকাংশ বিদ্যালয় সরকারি নির্দেশনা উপেক্ষা করে কোচিং ফি ও উন্নয়ন ফি সহ নানা অজুহাতে শিক্ষার্থীদের নিকট থেকে অতিরিক্ত টাকা আদায় করা হচ্ছে। তবে বাড়তি টাকার জন্য কোনো রসিদ দেয়া হচ্ছে না। শিক্ষার্থীদের নিকট কোচিং ফি বাধ্যতামুলক করা হয়েছে। 
অভিভাবকরা বলছেন, জেলা শহর থেকে প্রত্যন্ত এলাকায়। যার অধিকাংশ পরিবারই দরিদ্র। ছেলেমেয়েদের কষ্ট করে লেখাপড়া শেখানো হয়। ফরম পূরনে যে পরিমাণ টাকা আদায় করা হচ্ছে তা কষ্টদায়ক। এক প্রকার জোর পূর্বক টাকা আদায় করছেন প্রধান শিক্ষক। এ ব্যাপারে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন তারা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মানবিক ও ব্যবসা শাখার দুই ছাত্র জানান, তাদেরকে কোন কোন বিষয়ে অকৃতকার্য (ফেল) দেখানো হয়েছে তা জানানো হয়নি। তবে ফরম পূরণ, কোচিং ও অকৃতকার্য বিষয়সহ মোট ৪ হাজার ১০০ টাকা নেয়া হয়েছে। তবে টাকা নেয়ার কোন রশিদ তাদের দেয়া হয়নি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিজ্ঞান বিভাগের এক ছাত্রী জানান, ফরম পূরন ও কোচিং ফি বাবদ তার কাছ থেকে ৩ হাজার ২শ টাকা নেয়া হয়েছে। কোচিং বাধ্যতামুলক করা হয়েছে। কোচিংয়ের জন্য যে টাকা নেয়া হয়েছে শিক্ষকরা ক্লাস করান না। ভালো ফলাফলের জন্য আমাদের বাহিরে প্রাইভেট পড়তে হয়।
স্থানীয় চকআবরশ গ্রামের বিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র মেহেদি হাসান বলেন, স্কুলে কোচিং বাধ্যতামুলক টাকা দিতে হবে। কিন্তু কোচিং ঠিকমতো করানো হয়না। সপ্তাহে কয়েকটা ক্লাস করিয়ে কোচিং শেষ করা হয়। তারপর আর কোন ক্লাসের হদিস পাওয়া যায় না। কোচিংয়ের জন্য টাকা না দিলে সমস্যা হবে বলে শিক্ষার্থীদের ভয় দেখানো হয়।
একই গ্রামের মোসলেম উদ্দিন মোল্লা নামে এক অভিভাবক বলেন, ছাত্রদের ফেল করে দেয়া শিক্ষকদের একটা কৌশল। ফেল করা প্রতি ছাত্রদের কাছ থেকে ১ হাজার টাকা করে নেয়া হয়। বছর শেষে শিক্ষকরা মোটা অংকের টাকা পকেটে উঠানোই তাদের উদ্যেশ্য।
এ বিষয়ে কাটখইর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জনাব আলী বলেন, এবার ১০১ জন শিক্ষার্থী এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয়ার কথা। ফরম পুরনে অতিরিক্ত কোন টাকা নেয়া হয়নি। এছাড়া কোচিংও বাধ্যতামুলক করা হয়নি। যেসব শিক্ষার্থী কোচিং করতে ইচ্ছুক তারা শিক্ষকদের সাথে কথা বলে ক্লাস করবে। জেএসসি পরীক্ষার্থীদের অ্যাডমিট কার্ড দেয়ার নামে অরিক্তি টাকা নেয়ার বিষয়টি তিনি অস্বীকার করেন।
এ প্রসঙ্গে সদর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ওয়াসিউর রহমান বলেন, বোর্ড নির্ধারিত ফি ছাড়া অতিরিক্ত কোনো টাকা নেয়ার নিয়ম নাই। যদি কোন প্রতিষ্ঠান অতিরিক্ত টাকা নেয় তাহলে অপরাধ। তারপরও খোঁজ নিয়ে বিষয়টি দেখব।
নওগাঁ সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, বিষয়টি খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
উল্লেখ্য, জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষার্থীদের (জেএসসি) প্রবেশপত্র (অ্যাডমিট কার্ড) দেয়ার নাম করে ৪শ টাকা করে আদায় করা হয়েছে।