উত্তরের বেশিরভাগ রুটে চলছে না বাস

পুণ্ড্রকথা ডেস্ক
প্রকাশ: ১৮ নভেম্বর ২০১৯ ১৩:৫০ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ১৮৪ বার।

রাজশাহীতে এখনও নতুন সড়ক পরিবহন আইন কার্যকর হয়নি।। তবে এরইমধ্যে রাজশাহী বিভাগের কোনো কোনো জেলায় বাস চলাচল বন্ধ করে দিয়েছেন মোটর শ্রমিকরা। 

সোমবার সকাল থেকে রাজশাহীর সঙ্গে বিভিন্ন রুটের বাস চলাচল বন্ধ করে দেন শ্রমিকরা। ফলে রাজশাহী থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁ ও নাটোর রুটে বাস চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। 

রাজশাহী বিভাগের আট জেলাতেই প্রভাব পড়েছে নতুন আইনের। দু-একটি বাস ছাড়ার চেষ্টা করলেও শ্রমিকরা যাত্রীদের নামিয়ে দেন। এতে দুর্ভোগে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। খবর সমকাল অনলাইন

তবে সকালে ঢাকাগামী বেশ কয়েকটি বাস রাজশাহী থেকে ছেড়ে যায়। 

রাজশাহীর নগরীর শিরোইল ও নওদাপাড়া বাস টার্মিনাল এবং ভদ্রা মোড়ে অবস্থান নিয়ে মোটর শ্রমিকরা বিক্ষোভ করেন। এ সময় তারা নতুন সড়ক পরিবহন আইন প্রত্যাহারের দাবি জানান।

জেলা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম বলেন, এটা ইউনিয়নের পক্ষ থেকে ডাকা কোনো ধর্মঘট নয়। সকাল থেকে শ্রমিকরা নিজেরাই বাস বন্ধ রেখেছেন। সকালে রাজশাহীর মালিকদের বাস দু-একটি করে নাটোর ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ রুটে ছেড়ে যায়। তবে বাইরের জেলার মালিকদের বাসগুলো রাজশাহী আসার পর পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে। বাস চলছে না রাজশাহী-নওগাঁ রুটে। 

সড়ক পরিবহন নেতা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, নতুন সড়ক পরিবহন আইন কার্যকরের প্রতিবাদে শ্রমিকরা বাস বন্ধ রেখেছেন। ব্যক্তিগতভাবে আমি এটাকে সমর্থন করি না। প্রতিবাদ জানানোর আরও ভাষা আছে। এভাবে বাস বন্ধ করে যাত্রীদের দুর্ভোগে ফেলা আমি সমর্থন করি না।

বাংলাদেশ বাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মঞ্জুর রহমান পিটার বলেন, নতুন আইন চালু হওয়ায় শ্রমিকরা বাস চালাচ্ছে না। তারা অন্য পেশায় নিয়োজিত হওয়ার চেষ্টা করছে। নিজেদের আত্মরক্ষার্থে তারা এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

তিনি আরও বলেন,  মহাসড়কে অবৈধ যান চলে। তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেই। শুধু বৈধযানের বেলায় এসব নিয়ম। শ্রমিকরা বেতন পান ১০ থেকে ১৫ হাজার। দুর্ঘটনা হলে জরিমানা দিতে হবে ৫ লাখ টাকা। এত টাকা তারা কোথায় পাবেন? আমরাও চাই না কোনো দুর্ঘটনা হোক। তাই সরকার-শ্রমিক উভয় পক্ষের আলোচনায় একটি সমঝোতায় আসা উচিৎ। 

এদিকে নগর পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার অনির্বাণ চাকমা জানিয়েছেন, নতুন সড়ক পরিবহন আইন এখনও বাস্তবায়নে পুলিশ মাঠে নামেনি। নতুন আইন অনেক কঠোর হওয়ায় পুলিশ এখনও মানুষকে সচেতন করার কাজ করছে। 

তিনি বলেন, নতুন আইন হওয়ায় পুরনো আইন গত ১ নভেম্বর থেকেই বিলুপ্ত। তাই পুরনো আইনেও কোনো সাজা দেওয়া হচ্ছে না। তবে একেবারে গায়ে পড়ে কোনো দুর্ঘটনা ঘটালে বা আইন অমান্য করলে পুলিশ নতুন আইনে সাজা দিচ্ছে। তবে তা একেবারেই নগন্য। 

উল্লেখ্য, গত ১ নভেম্বর থেকে আলোচিত সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ কার্যকর করা হয়। তবে এই আইন নিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধিতে প্রয়োগের সময় শিথিল করা হয়। রোববার সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের জানান, এই আইন কার্যকর শুরু হয়েছে। এর পরদিনই বাস বন্ধ করে দেন রাজশাহীর শ্রমিকরা।

বগুড়া ব্যুরো প্রধান মোহন আখন্দ জানান, নতুন আইন সংশোধনের দাবিতে শনিবার বগুড়ার ছয়টি রুটে বাস চলাচল বন্ধ ছিলো। তবে রোববার ও সোমবার বাস চলাচল স্বাভাবিক ছিলো। আগামী ২২ নভেম্বর থেকে শ্রমিকরা নতুন করে সিদ্ধান্ত নেবেন।

নাটোর প্রতিনিধি নবীউর রহমান পিপলু জানান, নাটোর থেকে উত্তরের সব জেলাতেই বাস চলছে। তবে পরিমাণে কম। দক্ষিণে বিশেষ করে কুষ্টিয়া, যশোর, খুলনায় কোনো বাস যাচ্ছে না।

জয়পুরহাট প্রতিনিধি শাহারুল আলম জানান, জয়পুরহাট থেকে দূরপাল্লাসহ সব রুটেই বাস চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। কোথাও বাস চলাচল বন্ধের খবর পাওয়া যায়নি।

শিবগঞ্জ প্রতিনিধি একেএস রোকন জানান, চাঁপাইনবাবগঞ্জে সকাল ১০টা পর্যন্ত বাস চলেছে। এরপর শ্রমিকরা বাস চলাচল বন্ধ করে দেন। রাজশাহী-সোনা মসজিদদের রুটে বিকেল ৩টা পর্যন্ত বাস চলাচল স্বাভাবিক ছিলো। এরপর বন্ধ হয়ে যায়। শিবগঞ্জ-ঢাকা বাস চলাচল স্বাভাবিক আছে। 

সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি লুৎফর রহমান জানান, মালিকরা বাস রাস্তায় রেখেছে। কিন্তু নতুন আইনের কারণে শ্রমিকরা গাড়ি চালাতে অপারগতা প্রকাশ করেছে।

নওগাঁ প্রতিনিধি এমআর ইসলাম রতন জানান, সব রুটে বাস চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। নতুন আইন সংশোধনের দাবিতে লোকাল রুটে রোববার বাস চলাচল বন্ধ ছিলো। তবে সোমবার সব রুটেই বাস চলছে।

পাবনা থেকে নিজস্ব প্রতিবেদক এবিএম ফজলুর রহমান জানান,  পাবনায় বাস চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। জেলার সব রুটেই বাস চলছে।

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি আমিনুল ইসলাম খান রানা জানান, সিরাজগঞ্জে বাস চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। 

সিরাজগঞ্জ মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি সুলতান তালুকদার জানান, মোটর শ্রমিক ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় কমিটির সভা আগামী ২২ নভেম্বর। ওই সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক আমরা কর্মসূচি দেব।