মহাসড়কে মোটর সাইকেলই ভরসা!

বগুড়া থেকে সব রুটের বাসই বন্ধ হয়ে গেল

দোস্ত আউয়াল
প্রকাশ: ২০ নভেম্বর ২০১৯ ০৬:৪৩ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ৪৪৯ বার।

নতুন সড়ক পরিবহন আইন পরিবর্তনের দাবিতে বুধবার সকাল থেকে বগুড়ার সকল রুটে বাস চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। এর আগে মঙ্গলবার শুধু অভ্যন্তরীণ ৬ রুটের বাস চলাচল বন্ধ রাখা হয়। পরিবহন শ্রমিকরা সড়ক-মহাসড়কে সিএনজি চালিত অটোরিকশা চলাচলেও বাধা দিচ্ছে। ফলে যাত্রীদের চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা এবং মোটর সাইকেলে যাত্রী পরিবহন করা হচ্ছে। তবে মোটর সাইকেল চালকরা বাসের তিন থেকে চারগুণ ভাড়া আদায় করছেন।
হঠাৎ করে যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া নিয়ে বগুড়া মোটর মালিক গ্রুপের নেতৃবৃন্দ কোন কথা বলতে চাননি। অবশ্য জেলা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক সামছুদ্দিন শেখ হেলাল দাবি করেছেন তাদের কোন শ্রমিক ধর্মঘটে নেই। তার দাবি সিরাজগঞ্জের চান্দাইকোনার ওপর দিয়ে কোন বাস চলাচল করতে দেওয়া হচ্ছে না বলে বগুড়ার কোন যানবাহন রাজধানী ঢাকাসহ দূরপাল্লার রুটগুলোতে চলাচল করতে পারছে না। তিনি এও দাবি করেছেন যে আভ্যন্তরীণ রুটগুলোতেও যান চলাচল বন্ধ নেই। তবে অল্প সংখ্যক যান চলাচল করছে। কিন্তু বগুড়া সদর থানার ওসি এস এম বদিউজ্জামান বেলা পৌণে ১২টায় কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল এলাকা পরিদর্শনের সময়ও বাস চলাচল বন্ধ দেখতে পান। 
বগুড়া মোটর মালিক গ্রুপের হিসাব অনুযায়ী  আন্তঃজেলা ও আভ্যন্তরীণ রুটে প্রায় ৭০০ বাস চলাচল করে। তবে সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, এসব বাসের প্রায় ৯০ শতাংশেরই ফিটনেস নেই। এমনকি চালকদেরও লাইসেন্স নবায়ন করা হয়নি। ফলে নতুন সড়ক আইন কার্যকর হলে জেল-জরিমানা গুণতে হবে -এমন শঙ্কায় বগুড়ার পরিবহন শ্রমিকরা গত ১৬ নভেম্বর বগুড়া থেকে নওগাঁ, সান্তাহার, আবাদপুকুর, আক্কেলপুর, আবাদপুকুর ও মোলামগাড়ি রুটে বাস চলাচল বন্ধ করে দেন। এছাড়া বগুড়া থেকে হিলি, জয়পুরহাট ও গাইবান্ধা রুটে বাস চলাচল সীমিত করে ফেলেন। তবে অযথা হয়রানি করা হবে না- পুলিশের পক্ষ থেকে এমন আশ্বাস পাওয়ার পর পরদিন রোববার থেকে আবারও ওই ৬ রুটে বাস চলাচল স্বাভাবিক হয়। অবশ্য সরকারিভাবে ১৭ নভেম্বর থেকে নতুন সড়ক আইন কার্যকরের ঘোষণা দেওয়া হলে দু’দিন স্বাভাবিক রাখার পর ১৯ নভেম্বর মঙ্গলবার থেকে আবারও ওই ৬ রুটে যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। পরদিন ২০ নভেম্বর থেকে সব রুটের বাস বন্ধ হয়ে যায়।
বগুড়ায় ৪টি বাস টার্মিনাল রয়েছে। এর মধ্যে কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল থেকে আন্তঃজেলা রুটের সব বাস চলাচল করে। এছাড়া সেখানে ঢাকার মহাখালী রুটেও কিছু বাস আসা-যাওয়া করে। শহরের রেলওয়ে স্টেশনের উত্তরে হাড্ডিপট্টি এলাকার বাস টার্মিনাল থেকে উপজেলা পর্যায়ের কয়েকটি রুটে এবং শহরের চেলোপাড়ায় পূর্ব বগুড়ার বিভিন্ন রুটে বাস চলাচল করে থাকে। আর শহরের ঠনঠনিয়া বাস টার্মিনাল থেকে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেটগামী বাস চলাচল করে। 
তবে বুধবার সকালে টার্মিনালগুলোতে গিয়ে দেখা গেছে কোন বাসই চলাচল করছে না। ঠনঠনিয়া’র এস আর ট্রাভেলস্্-এর কাউন্টারের কর্মচারীরা জানিয়েছেন, বুধবার সকালে তাদের একটি বাস ঢাকার উদ্দেছে ছেড়ে গেলেও সিরাজগঞ্জের সীমানা থেকে সেটি ফিরিয়ে দেওয়া হয়। তার পর থেকে তাদেরসহ সব পরিবহনের বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। হঠাৎ ধর্মঘটের কারণ জানতে চাইলে বগুড়া-নগরবাড়ি রুটের বাস চালক নান্টু জানান, তাদেরকে ফাঁসি দেওয়ার জন্যই নতুন সড়ক আইন পাশ করা হয়েছে। তিনি মহাসড়ক থেকে দোকান-পাট ও রিকশা-ভ্যানসহ সব ধরনের হালকা যানবাহন চলাচল নিষিদ্ধ করার দাবি জানিয়ে বরেন, ‘সরকার আগে মহাসড়কে আমাদের চলাচল নির্বিঘœ করুক তারপর না হয় আইন কঠোর করুক। কিন্তু সেগুলো না করেই আমাদের ফাঁসিতে ঝুলানোর ব্যবস্থা করেছে। আমরা ফাঁসিতে ঝুলতে চাই না বলেই যান চলাচল বন্ধ রেখেছি।’
শহরের চারমাথা এলাকায় কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, পরিবহন শ্রমিকরা বগুড়া-নওগাঁ সড়কে সিএনজি চালিত কোন অটোরিকশাও চলতে দিচ্ছে না। কোন অটোরিকশা দেখলেই তারা ধাওয়া দিয়ে তাড়িয়ে দিচ্ছে। ফলে সেখানে ইজি বাইক নামে পরিচিত ব্যাটারি চালিত অটোরিকশা এবং মোটর সাইকেলই এখন দূরের যাত্রীদের একমাত্র ভরসা। তবে ইজিবাইক এবং মোটর সাইকেলে বাসের তুলনায় তিন থেকে চারগুণ ভাড়া নেওয়া হচ্ছে।
কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালের সামনে কথা হয় মিজানুর রহমান নামে এক মাদ্রাসা ছাত্রের সঙ্গে। দাদার মৃত্যুর খবর পেয়ে তিনি ঠাকুরগাঁয়ে তার গ্রামের বাড়ি যাওয়ার জন্য টার্মিনালে এসেছেন কিন্তু কোন যানবাহন না থাকায় কিভাবে বাড়ি যাবেন তা ভেবে কোন কুল-কিনারা পাচ্ছেন না। খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) ছাত্র ইমাম মেহেদী জানান তিনি ক্যাম্পাসে ফিরতে চান। দুপুর পৌণে ১২টায় বগুড়ার সান্তাহার থেকে খুলনাগামী ট্রেনে উঠবেন তিনি। কিন্তু বাস না থাকায়  বাধ্য হয়ে তাকে ৪০০ টাকা দিয়ে মোটর সাইকেলে সান্তাহার যেতে হচ্ছে।
বগুড়া সদর থানার ওসি এস এম বদিউজ্জামান জানান, তারা সার্বিক পরিস্থিতি সম্পর্কে খোঁজ খবর নিচ্ছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা বিষয়গুলো আমাদের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাবো। তারপর পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।’