সন্ধ্যায় মমতার সঙ্গে বৈঠক

ইডেনে আজ গোলাপি টেস্টে ঘণ্টা বাজাবেন প্রধানমন্ত্রী

পুণ্ড্রকথা ডেস্ক
প্রকাশ: ২২ নভেম্বর ২০১৯ ০৩:৩৮ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ১৪১ বার।

কলকাতার ইডেন গার্ডেনে আজ শুরু হচ্ছে বাংলাদেশ-ভারত ঐতিহাসিক গোলাপি টেস্ট। ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জিকে সঙ্গে নিয়ে দুপুরে ঘণ্টা বাজিয়ে দিন-রাতের এ টেস্টের শুভ সূচনা করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

সন্ধ্যায় তাজ বেঙ্গল হোটেলে দু’জন একান্তে বৈঠক করবেন। সেখানে কথা হতে পারে তিস্তার পানি বণ্টন ও সীমান্ত সমস্যা থেকে শুরু করে নানা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে।

এ ঐতিহাসিক টেস্ট উপলক্ষে একদিনের সরকারি সফরে আজ ভারতে আসছেন শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী ও সফরসঙ্গীদের বহনকারী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বিশেষ ফ্লাইট আজ ১০টায় কলকাতার উদ্দেশে হযরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ছাড়বে।

ভারতীয় সময় সকাল ১০টা ২৫ মিনিটে ফ্লাইটটি কলকাতায় নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করবে। সেখানে তাকে বরণ করবেন পশ্চিমবঙ্গের পুরমন্ত্রী ও কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম। পরে প্রধানমন্ত্রীকে মোটর শোভাযাত্রাসহ হোটেল তাজ বেঙ্গলে নিয়ে যাওয়া হবে। সেখান থেকে শেখ হাসিনা দুপুর সাড়ে ১২টায় ইডেন গার্ডেনে যাবেন।

ভারতীয় ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ডের সভাপতি সৌরভ গাঙ্গুলী এ টেস্ট ম্যাচ দেখতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে আমন্ত্রণ জানান। পরে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও আমন্ত্রণ জানান শেখ হাসিনাকে।

দুই নেত্রী (শেখ হাসিনা ও মমতা) ইডেনে আসার পরেই ৮ জন প্যারাট্রুপার নামবেন মাঠে। তাদের দু’জনের হাতে থাকবে গোলাপি বল। একজনের হাতে কয়েন। যার হাতে কয়েন থাকবে, তিনি সেটা দেবেন ম্যাচ রেফারিকে।

যাদের কাছে গোলাপি বল থাকবে তাদের একজন শেখ হাসিনাকে, অন্যজন বল দেবেন মমতাকে। শেখ হাসিনা বল তুলে দেবেন বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক মুমিনুল হকের হাতে। মমতা তুলে দেবেন ভারত অধিনায়ক বিরাট কোহলির কাছে। তারপর দুপুর পৌনে ১টায় টস হবে।

খেলা শুরু হবে বাংলাদেশ সময় দুপুর দেড়টায়। চা বিরতির সময় মাঠে সঙ্গীত পরিবেশন করবেন রুনা লায়লা ও মুম্বাইয়ের জিৎ গাঙ্গুলি। ম্যাচের ডিনার ব্রেকের সময় শচীন টেন্ডুলকার, পিভি সিন্ধুদের সংবর্ধনা দিতে মাঠে থাকবেন শেখ হাসিনা ও মমতা ব্যানার্জি।

প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হিসেবে থাকলেও বৃহস্পতিবার রাতেই কলকাতায় আসেন নড়াইলের এমপি, বাংলাদেশ টেস্ট ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা। তিনিও আজ মাঠে থাকবেন। বিকেলে শেখ হাসিনা ফিরবেন তাজ বেঙ্গল হোটেলে।

ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার সম্মত হলেও ৮ বছর ধরে মূলত মমতার আপত্তিতেই আটকে রয়েছে তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি। পশ্চিমবঙ্গের উত্তরাংশের কৃষকদের চাষের জন্য তিস্তার পানি জরুরি জানিয়ে মমতা আপত্তি করে আসছেন। তার বক্তব্য, ‘শুখা মরশুমে তিস্তায় পানি থাকে না, নিজেরাই চাষের জন্য পাই না, তা বাংলাদেশকে কী করে দেব?’ তাই ব্যক্তিগত সম্পর্ককে কাজে লাগিয়ে আজকের বৈঠকে অন্যতম জ্বলন্ত ইস্যু তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তির জট কাটানোই মূল লক্ষ্য বঙ্গবন্ধুকন্যার।

বৃহস্পতিবার দুপুরে মুর্শিদাবাদের বহরমপুরে মমতাই শেখ হাসিনার সঙ্গে এ বিশেষ বৈঠকের কথা জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আসছেন। উনি বারেবারে আসুন আমরা চাই। ভারতবর্ষের মানুষের সঙ্গে, পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দারা আমরা সবাই বাংলাদেশকে খুব ভালোবাসি। কারণ, দুই বাংলার ভাষা, বৈচিত্র্য, সভ্যতা, সংস্কৃতি, শিক্ষা- সবই এক। আমার সঙ্গে হাসিনাদির কাল মোট তিনবার দেখা হবে। দু’বার মাঠে আর একবার তাজবেঙ্গলে একটা বৈঠকে। ওই বৈঠকটা হবে সৌজন্যমূলক।’

রাতেই ঢাকায় ফিরবেন শেখ হাসিনা। জানা গেছে, শেখ হাসিনা মমতার জন্য ঢাকা থেকে অনেক উপহার নিয়ে আসছেন। তেমনি মমতাও পশ্চিমবঙ্গের অন্যতম নামি স্বর্ণচূড়া শাড়ি উপহার দেবেন তার প্রিয় হাসিনা দিদিকে। থাকবে আরও নানা উপহার ও মিষ্টি।

ইডেন গার্ডেনে বাংলাদেশ-ভারত ম্যাচের পরিমণ্ডলেই দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক সমস্যার সমাধান হতে পারে বলে আগেই আশা প্রকাশ করেছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আবদুল মোমেন। কলকাতায় বাংলাদেশ বইমেলার উদ্বোধনে এসে দিন পনেরো আগে তিনি বলেছিলেন, ‘ইডেনের দু’দেশের দিন-রাতের এ টেস্ট ম্যাচ একটা ইতিহাস সৃষ্টি করছে। প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা কলকাতায় খেলা দেখতে আসবেন। থাকবেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। একসঙ্গে বসে যেমন এ ঐতিহাসিক খেলা দেখবেন, তেমনই অনেক দ্বিপাক্ষিক বিষয় নিয়েও কথা বলবেন বলে আমার বিশ্বাস।’

বৈঠকে কী তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তির সমাধান হবে? উত্তরে আবদুল মোমেন বলেন, ‘দুই দেশের চমৎকার সম্পর্কের কথা বিবেচনা করে উনি (মমতা) আমাদের তিস্তার পানি উপহার দেবেন বলে আমরা আশাবাদী।’ তাই মমতার সঙ্গে হাসিনার বৈঠকের দিকে শুধু বাংলাদেশ নয়, তাকিয়ে থাকবে দিল্লিও। কারণ, নরেন্দ্র মোদিও একাধিকবার বলেছেন, ‘তিস্তার পানি বণ্টন নিয়ে আমরা এখনই চুক্তি করতে রাজি আছি, শুধু পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী রাজি হলেই হবে।’