রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে চীনা রাষ্ট্রদূতের নতুন ফর্মুলা

পুণ্ড্রকথা ডেস্ক
প্রকাশ: ২৪ নভেম্বর ২০১৯ ১৩:০২ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ১৮২ বার।

বাংলাদেশের-মিয়ানমার দুই দেশেরই বন্ধু চীন। ফলে দেশটি চায় রোহিঙ্গাদের মতো একটি স্পর্শকাতর ইস্যুর সমাধান করে দুই দেশই লাভবান হোক। এক্ষেত্রে কোনো দেশের সঙ্গে একপেশে আচরণ করবে না চীন। রোববার জাতীয় প্রেসক্লাবে রোহিঙ্গা বিষয়ক এক সেমিনারে বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিং একথা বলেন। তবে এই সমস্যার টেকসই সমাধানে চীন তার নিজস্ব রোড ম্যাপ অনুসারে করছে বলে জানান তিনি।

গত সেপ্টেম্বরে রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনের অভিজ্ঞতা জানাতে গিয়ে লি জিমিং বলেন, রোহিঙ্গাদের সঙ্গে মিয়ানমার সরকারের বিশ্বাসের যে ঘাটতি দেখা দিয়েছে তা মোকাবেলায় ‘ওয়ান প্লাস ওয়ান প্লাস টু’ আইডিয়া নিয়ে এসেছি আমি। খবর যুগান্তর অনলাইন 

এক্ষেত্রে একটি রোহিঙ্গা পরিবার এমন একজনকে প্রতিনিধি হিসাবে নির্বাচন করবে, যে কি না মিয়ানমারে ফিরে যাবে।

চীন তাদেরকে দুটি মোবাইল ফোন দেবে। একটি ওই প্রতিনিধির কাছে থাকবে, আরেকটি থাকবে কক্সবাজারে তার পরিবারের সদস্যদের কাছে।

মিয়ানমারে গিয়ে তারা স্বচক্ষে পরিস্থিতি দেখবেন, রাখাইনের পরিস্থিতি ভালো ও নিরাপদ কি-না তাৎক্ষণিকভাবে পরিবারের সঙ্গে ভাগাভাগি করবে। সেই আলোকে তারা দেখবে, সামনে আগানো যাবে কি-না।

এই স্বেচ্ছাসেবক প্রতিনিধিদের নিরাপত্তা মিয়ানমার সরকারকে নিশ্চিত করতে হবে বলে মন্তব্য করেন চীনা রাষ্ট্রদূত। ইংরেজি দৈনিক ‘বাংলাদেশ পোস্ট’ ওই সেমিনারের আয়োজন করে। এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক।

অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, এই সমস্যার সমাধানে শক্তিশালী দেশগুলোর কার্যকর ভুমিকা নেই। এ সময় মিয়ানমারের উপর চাপ তৈরি করতে বড় দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানান তারা।

সেমিনারে চীনের রাষ্ট্রদূত বলেন, রোহিঙ্গাদের বিষয়ে চীন একটি নিজস্ব রোডম্যাপ অনুযায়ী কাজ করছে। বাংলাদেশ এবং মিয়ানমারের বিস্বস্ত বন্ধু হিসেবে চীন এ ব্যাপারে অনন্য ভূমিকা রাখছে।

রোহিঙ্গাদেরকে কীভাবে মিয়ানমারে শান্তিপূর্ন প্রত্যাবর্তন করানো যায় এবং তা যেন টেকসই হয় সে ব্যাপারে চীন যথেষ্ট আন্তরিক।

তিনি বলেন, গত জুলাই মাসে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চীন সফরেও রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। অসহায় রোহিঙ্গাদেরকে আশ্রয় দেয়ায় চীনের প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশকে প্রশংসা করেছেন।

লি জিমিং বলেন, আমরা এ ব্যাপারে বন্ধুত্বপূর্ণ আলোচনায় যেতে চাই। চীন কোন দেশের সঙ্গে একপেশে আচরণ করবে না। এমন একটি সমাধান চাই, যাতে দুই পক্ষই লাভবান হবে।

তিনি আরও বলেন, বিগত দুই বছর ধরেই চীন বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের সঙ্গে কূটনৈতিক আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। রোহিঙ্গা ইস্যুর সমাধানের উপায় খুঁজতে বেশ কয়েকবার বাংলাদেশ, মিয়ানমার ও চীনের মধ্যে ত্রি-পক্ষীয় বৈঠক হয়েছে।

রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানে বিভিন্নভাবে চীন ভূমিকা রাখছে। নানা কর্মকাণ্ডের মধ্যদিয়ে রোহিঙ্গা প্রর্ত্যাবসনে চীন আগ্রহ দেখিয়েছে।

গত সেপ্টেম্বরে নিউইয়র্কে অনুষ্ঠিত তিন দেশের বৈঠকে দ্রুত রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তনের বিষয়ে একমত হয়েছে বাংলাদেশ, চীন ও মিয়ানমার।

সেমিনারে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা- ইউএনএইচসিআরের স্থানীয় প্রতিনিধি স্টিভেন করলিস বলেন, রোহিঙ্গাদের আশ্রয় কেন্দ্রে যা দেখেছি, তা আমার জীবনের বিরল অভিজ্ঞতা।

বাধ্য হয়েই তারা সেখানে বসবাস করছে। যাদের সঙ্গে কথা বলেছি, তাদের শতকরা ৯৭ জনই স্বদেশে ফিরে যেতে চায়। তবে এর আগে তারা নিরাপত্তার নিশ্চয়তা চায়।

আর তাদের এ নিরাপত্তার জন্য প্রয়োজন শান্তিপূর্ণ প্রত্যাবাসন। মিয়ানমারকে রোহিঙ্গাদেরকে নিজ দেশে ফিরিয়ে নিতে হবে। পাশাপাশি এমন পরিবেশ তৈরি করতে হবে যাতে রোহিঙ্গা আর বাংলাদেশে শরনার্থী হয়ে না আসে। এ ব্যাপারে যথাযথ নিশ্চয়তা দিতে হবে।

তিনি বলেন, রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তন মোটেও অসম্ভব ব্যাপার নয়। এটা সম্ভব। এজন্য রোহিঙ্গা নিজের ও পরিবারের নিরাপত্তা চাই। তারা নিজ দেশে নিজেদের যথাযথ মর্যাদা চায়।

এটি নিশ্চিত করা গেলে রোহিঙ্গারা এখনই মিয়ানমারে ফিরে যাবে। মূলপ্রবন্ধে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক বলেন, রোহিঙ্গাদের কারণে গত কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশকে নানা রকম সমস্যার মুখোমুখি হতে হচ্ছে।

মানবিক কারণে রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ। বর্তমানে ১২ লাখ রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশ মানবিক আশ্রয় দিচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার তাদেরকে আশ্রয় দেয়ার পাশাপাশি অন্য মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করেছে। আমরা চাই রোহিঙ্গারা সম্মানের সঙ্গে স্বদেশে ফিরে যাক। গত দুই বছর ধরে এ কথা বললেও দুর্ভাগ্যজনক সত্য হলো একজনরোহিঙ্গাও স্বদেশে ফিওে যেতে পারেননি।

তিনি বেশ কিছু সুপারিশ তুলে ধরে বলেন, জাতিসংঘের মহাসচিবের উচিত দ্রুত মিয়ানামারে একটি অনুসন্ধানী দল পাঠানো। যারা সেখানকার রোহিঙ্গা নির্যাতনের সঠিক চিত্র তুলে ধরবেন। সেই সঙ্গে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে মিয়ানমারে একটি নিরাপদ আবাসস্থল গড়ে তুলতে হবে।

যেন রোহিঙ্গাদের শান্তিপূর্ণ প্রত্যাবাসন ও পরবর্তী সময়ের নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়। একইসঙ্গে কফি আনান কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়ন করতে হবে।

নিরাপপত্তা বিশ্লষক মেজর জেনারেল আব্দুর রশিদ (অব.) বলেন, মানবিক অপরাধের কারণে সারা বিশ্ব মিয়ানমারের বিপক্ষে। মিয়ানমারকে অবশ্যই রোহিঙ্গাদেরকে নিজ দেশে ফেরত নিতে হবে।

রোহিঙ্গারা বাংলাদেশের জন্য সামাজিক, পরিবেশগত এবং রাজনৈতিক নানা রকম ঝুঁকি তৈরি করছে।

তিনি বলেন শান্তিপূর্ণ রোহিঙ্গা প্রর্ত্যাবসনে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে অবশ্যই বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে কাজ করা উচিত।

রোহিঙ্গাদের নিজ দেশ মিয়ানমারে ফেরত যাওয়ার জন্য নিরাপদ পরিবেশ তৈরি করতে হবে। মিয়ানমারকে অবশ্যই তাদের নিজ দেশের নাগরিককে ফেরত নিতে হবে।’

সেমিনারে সভাপতির বক্তব্যে বাংলাদেশ পোস্টের প্রধান সম্পাদক শরীফ শাহাব উদ্দিন বলেন, রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্সনে আন্তর্জাতিক সহযোগিদের সঙ্গে নিয়ে টেকসই উপায় বের করতে হবে। না হলে ভবিষ্যতে তারা বড় ধরনের ঝুঁকি তৈরি করবে।

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন বাংলাদেশে নিযুক্ত কানাডিয়ান হাই কমিশনের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক উপদেষ্টা সাবিনা ইয়াসমিন সিদ্দিক।