বগুড়া ও সিরাজগঞ্জে শুধু তীর সংরক্ষণের কাজ শুরু হচ্ছে

করতোয়া বাঙালি ফুলজোড় ও হুরাসাগর নদী খননে অগ্রগতি নেই

পুণ্ড্রকথা রিপোর্ট
প্রকাশ: ২৬ নভেম্বর ২০১৯ ১০:৫৪ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ২৮৭ বার।

বগুড়া, গাইবান্ধা ও সিরাজগঞ্জের মধ্যে বয়ে চলা করতোয়া, বাঙালি, ফুলজোড় এবং হুরাসাগর নদীর নাব্য ফেরাতে প্রায় এক বছর আগে নেওয়া বড় ধরনের প্রকল্পের তেমন কোন অগ্রগতি নেই। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, প্রকল্পের সবচেয়ে গুরুত্বপুর্ণ অংশ ২১৭ কিলোমিটার দীর্ঘ নদী খননের বিষয়টি চুড়ান্ত না করেই শুধু ৩৫ কিলোমিটার অংশে তীর সংরক্ষণের কাজের টেন্ডার আহবান করা হয়েছে। বলা হচ্ছে চলতি বছরের ডিসেম্বরেই তীর সংরক্ষণের কাজ শুরু হবে। 
তবে পরিবেশবাদী সংগঠনগুলোর কর্মীরা বলছেন, মূলত নদীগুলোর নাব্য ফেরানোর জন্যই প্রকল্পটি নেওয়া হয়। এক্ষেত্রে প্রকল্পের দু’টি অংশের মধ্যে নদী খননই অধিক গুরুত্বপূর্ণ একটি কাজ। কিন্তু অনুমোদন পাওয়ার এক বছর পরেও বিশেষত নদী শাসন কাজের সবচেয়ে উপযুক্ত চলমান শুষ্ক মৌসুমেও সেই কাজ শুরু করতে না পারায় প্রকল্পটির যথাযথ বাস্তবায়ন নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে। অবশ্য প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) কর্মকর্তারা এসব সংশয় উড়িয়ে দিয়ে বলছেন, নদী খননের কাজটি যেহেতু আন্তর্জাতিক টেন্ডারে করার সিদ্ধান্ত হয়েছে সেজন্য তাতে একটু সময় লাগছে। যথা সময়ে তা শুরু হবে, এ নিয়ে কারও কোন সংশয় থাকা উচিত নয়।
পাউবোর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গাইবান্ধা জেলার গোবিন্দগঞ্জে কাটাখালি ও এলাই নদীর মিলনস্থল থেকেই ‘বাঙালি’ নদীর উৎপত্তি। এরপর সেটি উত্তর থেকে দক্ষিণে বগুড়ার সোনাতলা, সারিয়াকান্দি ও ধুনট উপজেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে শেরপুর উপজেলার খানপুরে করতোয়া নদীতে গিয়ে মিলেছে। সেখানে নদীটির নাম হয়েছে ‘করতোয়া’। এরপর ওই নদীটি সিরাজগঞ্জের নলকায় গিয়ে ‘ফুলজোড়’ নাম ধারণ করে শাহজাদপুর উপজেলার বাঘাবাড়ির দক্ষিণে হুরাসাগর নদীতে গিয়ে মিশেছে। তারপর সেই নদীর নাম হয়েছে ‘হুরাসাগর’- যেটি যমুনা নদীতে গিয়ে মিলেছে। উৎপত্তিস্থলে নদীটির গড় প্রশস্ততা ৯০ মিটার আর শেষ প্রান্তে সেই প্রশস্ততা বেড়ে হয়েছে ২০০ মিটার।
মৃতপ্রায় নদীগুলোর নাব্য ফেরানোর পাশাপাশি বন্যা নিয়ন্ত্রণ, ভাঙন রোধ এবং শুষ্ক মৌসুমে পানি ধরে রেখে মাছের উৎপাদন বৃদ্ধির মাধ্যমে জীববৈচিত্র সংরক্ষণের জন্য ২০১৮ সালের মাঝামাঝি একটি প্রকল্প নেওয়া হয়। ‘বাঙালি-করতোয়া-ফুলজোড়-হুরাসাগর নদী সিস্টেম ড্রেজিং/পুনঃখনন ও তীর সংরক্ষণ’ নামে ওই প্রকল্পের আওতায় নদীগুলোর গাইবান্ধা সীমানায় ২৪ কিলোমিটার, বগুড়া সীমানায় ৯৯ কিলোমিটার এবং সিরাজগঞ্জে বাকি ৯৪ কিলোমিটার অংশ খননের কথা বলা হয়। এর পাশাপাশি ভাঙ্গণ প্রবণ হিসেবে চিহ্নিত বগুড়ায় বাঙালির নদীর ৩২টি পয়েন্টে ১৯ দশমিক ৫৭ কিলোমিটার এবং সিরাজগঞ্জের করতোয়া ও ফুলজোড় নদীর ২২টি পয়েন্টে আরও ১৫ দশমিক ৬০ কিলোমিটার অংশে তীর সংরক্ষণ অর্থাৎ সিসি বøক ফেলে মুড়িয়ে দেওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়।
দুই হাজার ৩৫৫ কোটি ৬০ টাকার ওই প্রকল্পটি ২০১৮ বছরের ৭ নভেম্বর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির অনুমোদন পায়। তার দুই মাসের মাথায় চলতি বছরের ১০ জানুয়ারি প্রকল্প পরিচালক (পিডি) নিয়োগ দেওয়া হয়। এরপর মে মাসের শেষ সপ্তাহে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিবের নেতৃত্বে গঠিত স্টিয়ারিং কমিটি খনন এবং তীর সংরক্ষণের জন্য পৃথকভাবে টেন্ডার আহবানের সিদ্ধান্ত নেয় এবং নদী খননের কাজটি আন্তর্জাতিক টেন্ডারে করতে বলে। পাউবো’র বগুড়া বিভাগ থেকে সদ্য বদলী হওয়া নির্বাহী প্রকৌশলী হাসান মাহমুদ জানিয়েছিলেন, নদী খননের কাজটি আগে শুরু করা হবে। এমনকি চলতি বছরের জুলাইয়ের মাঝামাঝি টেন্ডার আহবান এবং তার দুই মাসের মাথায় সেপ্টেম্বরের মধ্যেই নদী খনন আর তার পর তীর সংরক্ষণের কাজ শুরু হবে বলেও নিশ্চিত করেছিলেন।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) বগুড়া জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক জিয়াউর রহমান বলেন, প্রকল্পের দু’টি অংশের মধ্যে খননের কাজটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এতদিন বলা হয়েছিল খননের কাজটি আগে শুরু করা হবে। আশাকরেছিলাম এই শুষ্ক মৌসুমেই খননের কাজ শুরু হবে। কিন্তু এখন শোনা যাচ্ছে তীর সংরক্ষণের কাজ আগে শুরু হচ্ছে। তবে নদী খননের কাজ কবে শুরু হবে সে ব্যাপারে পাউবোর কোন কর্মকর্তা নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারছেন না। এতে প্রকল্পের যথাযথ বাস্তবায়ন নিয়ে সংশয় থেকেই যাচ্ছে।
তবে পাউবো বগুড়া বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমান জানান, নদী খননের কাজটি যেহেতু আন্তর্জাতিক টেন্ডারের মাধ্যমে করার কথা সেহেতু তাতে আরও কিছু সময় লাগবে।  কিন্তু তীর সংরক্ষণের টেন্ডার কাজগুলো অনেকদূর এগিয়েছে। বগুড়ায় ১১টি গ্রুপের মধ্যে ৭টি গ্রুপের টেন্ডার আহবান করা হয়েছে। অন্যদিকে পাউবোর সিরাজগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম জানান, তার জেলা সীমানায় নদীর তীর সংরক্ষণের জন্য ১২টি গ্রুপের মধ্যে ৪টি গ্রুপের টেন্ডার আহবান শেষে নির্বাচিত ঠিকাদারকে কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছে। তারা ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহেই কাজ শুরু করবে। বাকি গ্রুপের টেন্ডারগুলোও গ্রুপের সম্পন্ন করে কার্যাদেশ দেওয়া হবে। নদী খননের টেন্ডার সম্পন্ন করতে কতদিন লাগবে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সেগুলোও খুব গ্রুপের এগুচ্ছে। আশাকরি খুব শিগগিরই ঠিকাদার নির্বাচন করা সম্ভব হবে।’