ফ্লোরিডার ২ কলেজের ডিন ছিলেন টার্গেট

প্রেমে ব্যর্থ হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে হত্যাসহ বোমা হামলার ষড়যন্ত্র বাংলাদেশি যুবকের

পুণ্ড্রকথা ডেস্ক
প্রকাশ: ২৭ নভেম্বর ২০১৯ ০৬:০৬ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ১২৭ বার।

প্রেম নিবেদন করে ব্যর্থ হয়েছিলেন। এরপর ওই ছাত্রীকে উত্যক্ত করার দায়ে পরপর দুই কলেজ থেকে বহিষ্কৃত করা হয় তাকে। প্রতিশোধ নিতে ওই দুই কলেজের ডীনকে বোমা মেরে হত্যাসহ ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালানোর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হওয়ার অপরাধে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার বাসিন্দা সালমান রশীদ (২৩)-কে গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতারের পর গত সোমবার আদালতে তাকে সোপর্দ করা হয়। কিশোরগঞ্জের ছেলে সালমান রশীদ এই হামলার জন্যে আইএস'র সাথে যোগাযোগ করেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

সাউদার্ন ডিস্ট্রিক্ট ফেডারেল কোর্টের প্রসিকিউটর গত সোমবার মামলার উদ্ধৃতি দিয়ে জানান, গত বছরের নভেম্বরে মায়ামি ড্যাড কলেজের এক বাংলাদেশি ছাত্রীকে প্রেম নিবেদনের পর সাড়া না পেয়ে তাকে হেনস্থার চেষ্টা করেন সালমান। এ অভিযোগে তাকে কলেজ থেকে বহিষ্কার করা হয়। এরপর সালমান ভর্তি হন নিকটস্থ ব্রাওয়ার্ড কলেজে। সেখানকার কর্তৃপক্ষের কাছেও একই অভিযোগ পেশ করেন ওই ছাত্রী। এরপর সেই কলেজ থেকেও সালমানকে বহিষ্কার করা হয়। 

ফেডারেল প্রসিকিউটর আরও জানান, ইতিমধ্যেই সালমানের ফেসবুক পোস্ট অনুযায়ী এফবিআই তদন্ত শুরু করে জানতে পারে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী নেটওয়ার্কের সাথে সালমানের সম্পর্ক রয়েছে। ফেসবুকে সালমান স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন যে, তিনি বিশ্ববাপী মুসলমানদের নিগৃহীত করার প্রতিশোধ নিতে আমেরিকায় বড়ধরনের একটি হতাযজ্ঞ চালাতে আগ্রহী। 

সালমান ওই ছাত্রীকে লিখেছিলেন, প্রথম দেখার পরই তোমার ব্যাপারে আমার অন্যরকম একটি ধারণা জন্মেছে। এখন আমি তোমাকে জানাতে চাই যে, তুমি হলে আমার বাকি জীবনের অর্ধাংশ। তাই আবার যখন দেখা হবে অবশ্যই তুমি আমার সান্নিধ্যে আসবে। এটি করতে তুমি বাধ্য।

ছাত্রীটি কলেজ কর্তৃপক্ষ সমীপে অভিযোগ করেন যে, সালমান তাকে অনবরত চিঠি দিচ্ছে, মেসেজ পাঠাচ্ছে। শুধু তাই নয়, কলেজ থেকে গাড়িতে উঠার সময়েও পিছু নিচ্ছে সালমান। ছাত্রীটি কর্তৃপক্ষকে জানান যে, ফেসবুকে সালমান যে স্ট্যাটাস দিয়েছেন তা তাকে আতঙ্কিত করছে এবং নিজেকে কখনোই তিনি নিরাপদ ভাবছেন না। 

সালমানকে কোর্টে সোপর্দ করার পর জামিনহীন আটকাদেশ দিয়ে ডিটেনশন সেন্টারে পাঠানো হয়েছে। সামনের মাসে তাকে পুনরায় আদালতে হাজির করা হবে। 

মামলার বিবরণে জানা যায়, গত ডিসেম্বরে সালমানকে মায়ামী ড্যাড কলেজ থেকে এবং এ বছরের মে মাসে ব্রাউয়ার্ড কলেজ থেকে বহিষ্কার করা হয়। 

এদিকে এফবিআইর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে, সালমানের ফেসবুকের স্ট্যাটাস অনুযায়ী ছদ্মবেশী এফবিআই কর্মকর্তারা তার সাথে যোগাযোগ করেন। সে সময়ে সালমান জানায় যে, তিনি আইএস'র এক্সপার্ট ব্রাদার খুঁজছেন মায়ামিতে সন্ত্রাসী হামলা চালানোর জন্যে। 

এক পর্যায়ে এ মাসেই সালমান তাদেরকে জানান যে, উপর্যুক্ত দুই কলেজের ডিন হচ্ছেন তার টার্গেট, যারা তাকে অন্যায়ভাবে বহিষ্কার করেছেন। দুই ডিনের নামও প্রদান করেন সালমান। তাদের অফিসের রুম নম্বরসহ বিস্তারিত ঠিকানাও প্রদান করেন সালমান। 

সালমান তাদের জানান, এরা উভয়েই ইসলামকে ঘৃণা করে। এরা দু’জন যদি মারা যায় এবং যারা তাদেরকে হত্যা করবে, তারা অবশ্যই আল্লাহ কর্তৃক পুরস্কৃত হবেন। তাদের মরতে হবে।

ছদ্মবেশী এফবিআই এজেন্টকে সালমান ভেবেছেন বোমা প্রস্তুতকারক হিসেবে। তাই সালমান জানিয়েছেন, কলেজ প্রাঙ্গণে হামলার ভালো সময়ের কথাও। যখন নিরাপত্তা রক্ষার অবস্থান খুবই দুর্বল হয়, তখনই হামলার উত্তম সময় বলেও উল্লেখ করেছেন সালমান। 

সালমান ‘তাই এ অপারেশন খুব একটা কঠিন কাজ নয়’ বলে মন্তব্য করেন। এই দু’জনকে হত্যার সময় আরও বেশি মানুষ নিহত হলেও ক্ষতি নেই, কারণ ওরা ইসলামের শত্রু বলে মনে করেন সালমান। 

প্রেমে ব্যর্থ হয়ে সালমানের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে প্রবৃত্ত হবার এ সংবাদ যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান প্রধান গণমাধ্যমে ফলাও করে প্রচার ও প্রকাশিত হয়েছে। এর ফলে ফ্লোরিডাসহ আমেরিকায় বাংলাদেশি কমিউনিটিতে বিব্রতকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গামী ছেলে-মেয়েরা প্রশ্নবাণে জর্জরিত হচ্ছেন।