দোকানিরা ভেবেছিল দোলনচাঁপা যাবে এক নম্বরে কিন্তু তা গেল দুই নম্বরে

বগুড়ায় অবৈধ ‘হঠাৎ মার্কেটে’ ঢুকে পড়লো ট্রেনঃ আহত ২

স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশ: ২৭ নভেম্বর ২০১৯ ১০:৫৪ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ১৬১৬ বার।

বগুড়ায় রেল লাইনের ওপর অবৈধভাবে ভাসমান দোকান নিয়ে গড়ে ওঠা ‘হঠাৎ মার্কেট’-এ ট্রেন ঢুকে পড়ার ঘটনা ঘটেছে। বুধবার দুপুর ১২টার দিকে ওই ভয়াবহ ওই ঘটনা ঘটে। তবে স্টেশনের প্রবেশের মুহুর্তে ‘আন্তঃনগর দোলনচাঁপা এক্সপ্রেস’ নামে ওই ট্রেনের গতি কম থাকায় এবং চালক দ্রæত ব্রেক কষায় ট্রেনটির যাত্রী ও ভাসমান মার্কেটে কেনা-কাটা করতে আসা লোকজন বড় ধরনের দূর্ঘটনার হাত থেকে রক্ষা পায়। 
কিন্তু তারপরেও তাড়াহুড়া করে নামতে গিয়ে এক নারীসহ ওই ট্রেনের দুই যাত্রী আহত হয়েছেন। তাদেরকে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ট্রেনের ধাক্কায় অস্থায়ী ৭টি দোকানও ভেঙ্গে গেছে।
আহতরা হলেন- বগুড়ার দুপচাঁচিয়া উপজেলার সাওলা গ্রামের হাসেম আলীর ছেলে মানিক (৫৫) ও গাবতলী উপজেলার উনচরকি গ্রামের সাজ্জাদ হোসেনের স্ত্রী রুমি আকতার (২২)। দু’জনেরই পা ট্রেনের চাকার নিচে চাপা পড়ে। মানিকের পা প্রায় বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। ওই ঘটনার পর পরই রেলওয়ে পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা রেল লাইনের ওপর বসা ভাসমান দোকানদের উচ্ছেদ করেন।
বগুড়ার স্টেশন মাস্টার এস এম আব্দুল্লাহ্ জানান, দিনাজপুর থেকে সান্তাহারগামী আন্তঃনগর দোলনচাঁপা এক্সপ্রেস এবং ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা আন্তঃনগর লালমনি এক্সপ্রেস ট্রেন দু’টির বুধবার দুপুর ১২টা নাগাদ বগুড়া স্টেশনে ক্রসিং করার কথা। সেই অনুযায়ী দোলন চাঁপা এক্সপ্রেস ট্রেনটি ১১টা ৫৭ মিনিটে পূর্ব দিক দিয়ে স্টেশনে ঢুকছিল। বিপরীত দিক থেকে আসা লালমনি এক্সপ্রেস ট্রেনের সঙ্গে ক্রসিংয়ের জন্য তাকে দুই নম্বর লাইন দিয়ে প্রবেশের সিগন্যাল দেওয়া হয়। 
তবে রেল লাইনের ওপর অবৈধভাবে দোকান খুলে বসা ভাসমান দোকানি এবং ক্রেতারা মনে করেছিলেন ট্রেনটি এক নম্বর লাইন দিয়েই সোজা স্টেশনে চলে যাবে। কিন্তু ট্রেনটির ইঞ্জিনসহ ২/৩টি বগি যখন দুুই নম্বর লাইনে ঢুকে পড়ে তখন সবাই দ্বিগবিদিক ছোটাছুটি শুরু করে। ঠিক  সে সময় দোলনচাঁপার চালক তারিক রহমান ব্রেক কষে ট্রেনটিকে থামিয়ে দেন। ফলে বড় ধরনের দূর্ঘটনা এড়ানো সম্ভব হয়। তিনি বলেন, ‘ট্রেনটি যখন দুই নম্বর লাইনে ঢুকছিল তখন তার গতি ছিল ঘন্টায় মাত্র ১৬ কিলোমিটার। যে কারণে দ্রæত ব্রেক করে থামানো সম্ভব হয়েছে।’
বগুড়া ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তা বজলুর রশিদ জানান, আহত মানিক ও রুমি আকতার দু’জনই ট্রেনের যাত্রী ছিলেন। তাড়াহুড়া করে নামতে গিয়ে তারা দূর্ঘটনার শিকার হন। তিনি বলেন, মানিকের পায়ের পাতা প্রায় বিচ্ছিন্ন হয়ে চামড়ার সঙ্গে ঝুলে আছে। আর রুমি আকতারের পা বিচ্ছিন্ন না হলেও গুরুতর জখম হয়েছে। ট্রেনের ধাক্কায় রেল লাইনের পাশে অস্থায়ী ৭টি দোকানও ভেঙ্গে গেছে।
বগুড়া স্টেশন মাস্টার এস এম আব্দুল্লাহ জানান, দোলনচাঁপা ট্রেনটি পরে দুপুর ১২টার দিকে বগুড়া স্টেশনে প্রবেশ করে। তার ৯ মিনিট পর বিপরীত দিক থেকে আসা লালমনি এক্সপ্রেস ট্রেনটি এক নম্বর লাইন দিয়ে বগুড়া স্টেশনে ঢুকে পড়ে। কয়েক মিনিট বিরতি শেষে উভয় ট্রেনই আবার গন্তব্যের উদ্দেশ্যে রওনা হয়। তিনি বলেন, স্টেশনের পূর্ব দিকের অবৈধ দোকানিদের বার বার উচ্ছেদ করা সত্তে¡ও তারা সেখানে এসে বসে। সর্বশেষ গত ১৯ নভেম্বর তাদের উচ্ছেদ করা হয়।
বগুড়া রেলওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ কায়কোবাদ জানান, ঘটনার পর পরই স্টেশনের পূর্ব দিকে অবৈধ দোকানিদের আবারও উচ্ছেদ করা হয়েছে। সেখানে আর যাতে কেউ বসতে না পারে সেজন্য কড়া নজরদারি করা হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘সৃষ্ট দুর্ঘটনায় একটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে।’