মৃত্যুদণ্ড পাওয়া ৭ জন কে কীভাবে যুক্ত ছিল হোলি আর্টিজানে হামলায়

পুণ্ড্রকথা ডেস্ক
প্রকাশ: ২৭ নভেম্বর ২০১৯ ১২:৩৭ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ১৫৬ বার।

হোলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলার মামলায় বুধবার সাতজনের মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে আদালত। বুধবার বহুল আলোচিত এ মামলার রায় ঘোষণা করে ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনাল। এক বছরের মধ্যেই এ মামলার রায় দেওয়া হলো। 

মৃত্যুদণ্ড পাওয়া সাত আসামি হলো রাকিবুল ইসলাম রিগ্যান ওরফে রাফিউল ইসলাম, রাজীব গান্ধী ওরফে জাহাঙ্গীর আলম, মোহাম্মদ আসলাম হোসেন ওরফে র‍্যাশ, আবদুস সবুর খান ওরফে সোহেল মাহফুজ, মোহাম্মদ হাদিসুর রহমান সাগর ওরফে সাগর, মামুনুর রশিদ রিপন, শরিফুল ইসলাম খালেদ। 

এ মামলায় খালাস পেয়েছেন মিজানুর রহমান ওরফে বড় মিজান।

২০১৬ সালের ১ জুলাই হোলি আর্টিজান বেকারিতে ভয়ংকর জঙ্গি হামলায় ২০ জন নিহত হন।

এ মামলায় রাকিবুল ইসলাম রিগ্যান ওরফে রাফিউল ইসলামের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, সদস্য পদ গ্রহণ, সমর্থন, অর্থ গ্রহণ, হামলায় জড়িতদের প্রশিক্ষণ দিয়ে হত্যাকাণ্ডে সহায়তা ও প্ররোচিত করা। বসুন্ধরার যে বাসা থেকে হামলাকারীরা হোলি আর্টিজানের উদ্দেশ্যে বেরিয়েছিলেন, সে বাসায় যাতায়াত ছিল তার। ২০১৪ সালে বগুড়া আজিজুল হক কলেজে পড়ার সময় জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ হয় সে। পরের বছর ঢাকায় চলে আসে। মোট ছয়টি বাসায় ছিল। ২৭ জুলাই কল্যাণপুরের জাহাজ বিল্ডিংয়ে কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের অভিযানে গুরুতর আহত অবস্থায় গ্রেপ্তার হয়।

দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দেয় রাকিবুল ইসলাম। জবানবন্দি অনুযায়ী গুলশানের হোলি আর্টিজান বেকারির হামলা ছিল 'প্রকৃত ইসলাম' কায়েমের একটি দৃষ্টান্ত।

রাজীব গান্ধী ওরফে জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে অভিযোগ, সদস্য পদ গ্রহণ, সমর্থন, অর্থ গ্রহণ, পরিকল্পনা ও হামলায় জড়িতদের সহায়তা, ঘটনাস্থল পর্যবেক্ষণ, সার্বিক বিষয়ে অবগত থেকে হত্যায় সহায়তা। সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালে রাজীব গান্ধী ওরফে জাহাঙ্গীর আলম হোলি আর্টিজানে হামলাকারী খায়রুল ইসলাম পায়েল ওরফে, শফিকুল ইসলাম ওরফে উজ্জ্বলকে সরবরাহের কথা স্বীকার করে।

আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে সে বলে, নব্য জেএমবির উত্তরবঙ্গের ‘ইসাফা’ গ্রুপের প্রধান সে। ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট দেশের ৬৪টি জেলায় একযোগে বোমা বিস্ফোরণের পর সক্রিয়ভাবে জেএমবিতে যুক্ত হয়। ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের শেষ দিকে গাইবান্ধা জেলার সাঘাটা থানাধীন বোনারপাড়ার একটি বাসায় তামিম চৌধুরী, মেজর জাহিদ, সারোয়ার জাহান মানিক, তারেক, মারজান, শরিফুল ইসলাম খালিদসহ আত্মঘাতী হামলার পরিকল্পনা করে। ওই পরিকল্পনা বৈঠকেই সমন্বয়কের দায়িত্ব দেওয়া হয় তামিম চৌধুরী ওরফে তালহাকে। 

মোহাম্মদ আসলাম হোসেন ওরফে র‍্যাশের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, সদস্য হওয়া, সমর্থন, অর্থ লেনদেন, হামলাকারীদের তুলে নিয়ে প্রশিক্ষকের কাছে পৌঁছে দেওয়া ও বোমা ছোড়ার প্রশিক্ষণ দেওয়া, ঘটনাস্থল পর্যবেক্ষণ, অস্ত্র বহন। হামলার পরিকল্পনায় অংশ নিয়ে হত্যায় সহায়তা ও প্ররোচণা দেয় সে। স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে সে উল্লেখ করে, ২০১৪ সালের ১ রমজান রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ছাত্র শরিফুল ইসলাম খালেদের হাতে হাত রেখে বায়াত নেয় সে। ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে তামিম চৌধুরীর সঙ্গে সাক্ষাতের পর নব্য জেএমবিতে যোগ দেয়। হামলাকারীদের ঢাকার বিভিন্ন জায়গা থেকে তুলে নিয়ে প্রশিক্ষণের জন্য পৌঁছে দেয়। তাদের প্রস্তুত করে অস্ত্র, গুলি ও ম্যাগাজিন সরবরাহ করে। হোলি আর্টিজান বেকারি  ঘুরে দেখে। বসুন্ধরায় হামলাকারীদের অবস্থানের জন্য বাসা ভাড়ার ব্যবস্থা করে।

আবদুস সবুর খান ওরফে সোহেল মাহফুজের বিরুদ্ধে অভিযোগ, শুরা সদস্য হয়ে টাকা গ্রহণ, অস্ত্র ও বিস্ফোরক পদার্থ সংগ্রহ, তৈরি ও সরবরাহ করে হোলি আর্টিজান বেকারির হত্যাকাণ্ডে সহায়তা করে। স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে সে বলে, জেএমবিতে যুক্ত হয়েছে ২০০২ সাল থেকে। সিদ্দিকুর রহমান ওরফে বাংলা ভাইয়ের সহযোগী ছিলেন। নওগাঁর আত্রাইতে বোমা বানানোর সময় হাত উড়ে যায়। তার সরবরাহ করা অস্ত্র ও গ্রেনেড গুলশানের হোলি আর্টিজান বেকারির হামলায় ব্যবহার হয়েছিল।

২০১৬ সালের মে মাসে নব্য জেএমবিতে যোগ দেয়। মিরপুরের একটি বাসায় তামিম চৌধুরী ও বাশারুজ্জামান চকলেটের সঙ্গে সাক্ষাৎ হয় তার। সেখানেই গুলশানে বড় হামলার পরিকল্পনা হয়। এ জন্য লোক সংগ্রহ, অস্ত্র ও গ্রেনেড সরবরাহের দায়িত্ব দেওয়া হয় তাকে। ছোট মিজান ও আসলামকে অস্ত্র বুঝিয়ে দেয় সে।

মোহাম্মদ হাদিসুর রহমান সাগর ওরফে সাগরে বিরুদ্ধে অভিযোগ সমর্থন, সদস্য পদ গ্রহণ, অর্থ গ্রহণ, হামলার জন্য অস্ত্র গ্রেনেড সরবরাহ করে হত্যাকাণ্ডে সহায়তা ও প্ররোচিত করা।

স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে সে বলেছে, ঝিনাইদহে অবস্থানের সময় হোলি আর্টিজানে হামলায় প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণকারী নিবরাস ও মোবাশ্বেরের সঙ্গে সাংগঠনিক কাজে যুক্ত ছিল সে। ঢাকার কূটনৈতিক পাড়ায় হামলা ও প্রস্তুতি হিসেবে টার্গেট কিলিং সম্পর্কে অবহিত ছিল। হোলি আর্টিজানে হামলায় ব্যবহৃত অস্ত্র জিম্মায় রেখেছিল। হোলি আর্টিজানে হামলার ২০–২২ দিন আগে তামীম আহমেদ চৌধুরীর নির্দেশে একটি কালো ব্যাগে করে হাদিসুর চারটি গ্রেনেড ঝিনাইদহ থেকে ঢাকায় নিয়ে আসে। ওই গ্রেনেড হোলি আর্টিজান বেকারির হামলায় ব্যবহার হয়।

মামুনুর রশিদ রিপন বিরুদ্ধে অভিযোগ, সে জেএমবির দায়িত্বশীল নেতাদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের পর গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। সারোয়ার জাহান, ডাক্তার নজরুল ও অন্যদের নিয়ে অঞ্চলভিত্তিক উদ্বুদ্ধকরণ মিটিং ও সদস্য সংগ্রহের কাজ অব্যাহত রাখে। তামিম আহমেদ চৌধুরী ও সারোয়ার জাহানদের সঙ্গে মিলে আইএসপন্থী নব্য জেএমবি গঠনে যুক্ত ছিলে ২০১৪ সালের মে মাসে জয়পুরহাটে বৈঠক করে আইএস ভাবাদর্শ অনুসারে কাজের সিদ্ধান্ত নেয়।

২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের শেষের দিকে গাইবান্ধা জেলার সাঘাটা উপজেলার বোনারপাড়া বাজার কলেজ মোড়সংলগ্ন একটি বাড়িতে সারোয়ার জাহান মানিক, নুরুল ইসলাম মারজান, আসলাম হোসেন ওরফে র‍্যাশ, বাশারুজ্জামান চকলেট, মেজর (অব) জাহিদ, রাজীব গান্ধী, শরিফুল ইসলাম খালেদ, রায়হানুল কবির রায়হানদের সঙ্গে বৈঠক হয়। ওই বৈঠকেই ঢাকার হোলি আর্টিজানে হামলার প্রাথমিক পরিকল্পনা হয়। হাদিসুর রহমান সাগর সঙ্গে তিনটি একে-২২ রাইফেল, গুলি, চারটি গ্রেনেড, দুটি ৭.৬২ পিস্তল ও ১২ রাউন্ড গুলি মারজানের মাধ্যমে তামিম আহমেদ চৌধুরীর কাছে পৌঁছে দেয়।

শরিফুল ইসলাম খালেদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, সদস্য পদ গ্রহণ, সমর্থন, অর্থ লেনদেন, প্রশিক্ষণে সহায়তা, হামলা পরিকল্পনায় অংশ নিয়ে হামলাকারীদের যথাস্থানে পৌঁছে দেওয়াসহ হত্যাকাণ্ডে সহায়তা ও প্ররোচিত করা। সে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী। অধ্যাপক এ এফ এম রেজাউল করিম সিদ্দিকী হত্যা মামলার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি। ২০১৬ সালের ২৩ এপ্রিল নিজ বিভাগের অধ্যাপককে কুপিয়ে ও গলা কেটে হত্যা করে সে। ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে গাইবান্ধা জেলার সাঘাটা উপজেলার বোনারপাড়া বাজার কলেজ মোড়ে হামলার পরিকল্পনা বৈঠকে হাজির ছিল। হামলাকারী জঙ্গিদের দলে অন্তর্ভুক্তিকরণ, প্রশিক্ষণসহ গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করে।