নৌ ধর্মঘট: দাবি আদায়ে অনড় শ্রমিকরা

পুণ্ড্রকথা ডেস্ক
প্রকাশ: ৩০ নভেম্বর ২০১৯ ১০:৫১ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ১০৭ বার।

শুক্রবার রাত ১২টা থেকে শুরু হয়েছে নৌযান শ্রমিকদের অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি। শ্রমিকদের কর্মবিরতির কারণে বরিশালের সব রুটে লঞ্চ চলাচল বন্ধ রয়েছে। খবর দেশ রুপান্তর অনলাইন

শনিবার সকাল থেকে বরিশাল নদীবন্দর থেকে অভ্যন্তরীণ কোনো রুটে যাত্রী নিয়ে কোনো ধরনের লঞ্চ চলাচল করেনি।

শনিবার দুপুর পর্যন্ত তাদের দাবি পূরণে কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি বলে জানা গেছে।

আকস্মিক লঞ্চ চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় যাত্রীরা বিপাকে পড়েছেন। তারা গন্তব্যে যেতে না পেরে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তবে যে সব লঞ্চ রাতে ঢাকা থেকে যাত্রী নিয়ে বরিশালের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছিল, তারা সঠিক সময়ে নিরাপদে বরিশালে এসে পৌঁছেছে।

নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের বরিশাল অঞ্চল সভাপতি আবুল হাসেম মাস্টার জানান, নিয়োগপত্র ও পরিচয়পত্র, দুর্ঘটনায় নিহত শ্রমিকের পরিবারকে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ, ভারতগামী জাহাজের শ্রমিকদের ল্যান্ডিং পাশ প্রদান, নৌপথে নিরাপত্তা নিশ্চিতসহ ১১ দফা দাবি শুক্রবার মধ্যরাতের আগে মেনে নেয়া হয়নি। এমনকি শনিবার দুপুর পর্যন্ত তাদের সঙ্গে কোনো ধরনের যোগাযোগ করা হয়নি। তাই সারা দেশে অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতি চলছে। এবার আর কোনো প্রতিশ্রুতি নয়, ১১ দফা দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত কর্মবিরতি চালিয়ে যাব।

নৌযান শ্রমিকরা জানান, ২৩ জুলাই ১১ দফা দাবিতে নৌযান শ্রমিকরা সব শেষ কর্মবিরতি করেছিল। সে সময় শ্রমিকদের তিন দিনের কর্মবিরতিতে সারা দেশে যাত্রী, পণ্য এবং জ্বালানি পরিবহন স্থবির হয়ে পড়ে। অচলাবস্থা নিরসনে সরকারের মধ্যস্থতায় মালিক ও শ্রমিকদের ত্রিপক্ষীয় বৈঠকে শ্রমিকদের দাবি মেনে নেওয়ার জন্য ৩০ দিন সময় নেয়া হয়। কিন্তু তারপর চার মাস অতিবাহিত হলেও নৌযান শ্রমিকদের একটি দাবিও পূরণ হয়নি।

শ্রমিক সরোয়ার হোসেন বলেন, তিনি একটি জাহাজে কর্মরত। কিন্তু মালিক কর্তৃপক্ষ তাকে আজ পর্যন্ত নিয়োগপত্র কিংবা পরিচয়পত্র দেয়নি। নেই কোনো প্রভিডেন্ট ফান্ড। কোনো নিশ্চয়তা নেই তাদের পেশায়।

আঞ্চলিক রুটে চলাচলকারী একটি লঞ্চের টিকে মাস্টার দেলোয়ার হোসেন খান বলেন, আমি যে লঞ্চে চাকরি করছি তার কোনো প্রমাণপত্র চাইলে দেখাতে পারব না। আজ আছেন কাল মালিক ঘাড় ধরে নামিয়ে দিলে কিছুই বলার থাকবে না।

বরিশাল-ঢাকা রুটের এমভি সুরভীর-৮ লঞ্চের চালক আবু তালেব খান জানান, নৌ দুর্ঘটনা কিংবা দায়িত্বরত অবস্থায় একজন শ্রমিক মারা গেলে তার মরদেহটি বাড়ি পাঠিয়ে দিয়ে মালিক দায় শেষে করেন। আজ পর্যন্ত কোনো মালিক নিহত শ্রমিকের পরিবারকে কোনো ক্ষতিপূরণ দেননি। এখন থেকে দুর্ঘটনা কিংবা দায়িত্বরত অবস্থায় কোনো শ্রমিক মারা গেলে তার পরিবারকে ১০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।

বরিশাল-ঢাকা রুটের এমভি কুয়াকাটা-২ লঞ্চের ইনচার্জ মাস্টার জালাল আহমেদ জানান, ১১টি দাবির সবগুলোই যৌক্তিক। এর কোনোটি বাদ দেওয়ার মতো নয়।

জনগণকে বেকায়দায় ফেলে কেন আন্দোলন জানতে চাইলে বরিশাল-ঢাকা রুটের এমভি সুন্দরবন-১১ লঞ্চের প্রধান মাস্টার মো. আলমগীর হোসেন জানান, তারাও জনদুর্ভোগ চান না। তারা চান কাজের নিশ্চয়তা এবং জীবনের নিরাপত্তা। যার কোনটি নেই এ পেশায়। তাদের ১১ দফা প্রাণের দাবি। সরকার এবং মালিক পক্ষ শ্রমিকদের দাবি গ্রাহ্য করছে না। কর্তৃপক্ষ দ্রুত সময়ের মধ্যে নৌযান শ্রমিকদের দাবি পূরণ করলে কর্মবিরতিতে যাওয়ার প্রয়োজন হবে না।

নৌযান শ্রমিক ফেডারেশন বরিশাল আঞ্চলিক কমিটির সভাপতি আবুল হাশেম মাস্টার বলেন, এর আগে তিন দফা কর্মবিরতিতে মালিক এবং সরকারপক্ষ শুধু তাদের কাছ থেকে সময় নিয়েছে। এমনকি লিখিত প্রতিশ্রুতিও দিয়েছে। কিন্তু আজ পর্যন্ত তারা শ্রমিকদের একটি দাবিও পূরণ করেননি।

১১ দফা দাবিতে এর আগে ২০১৫ সালের জুলাইতে প্রথম আন্দোলন শুরু করেন নৌযান শ্রমিকরা। এক বছর পর ২০১৬ সালের আগস্টে শ্রমিকদের কঠোর আন্দোলনের প্রেক্ষিতে ওই সময় সরকার শ্রমিকদের দাবি মেনে নিয়ে গেজেট প্রকাশ করেন। কিন্তু ওই গেজেট বাস্তবায়ন না হওয়ায় চলতি বছর ২৩ জুলাই থেকে টানা তিন দিন কর্মবিরতি করেন তারা। ওই সময় দাবি মেনে নেয়ার জন্য এক মাসের সময় নিলেও সেই দাবি পূরণ না হওয়ায় শ্রমিকরা ওই কর্মবিরতির ডাক দেয়।