বগুড়ায় জ্বালানী তেল বিক্রি বন্ধ হয়ে গেছে

স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশ: ০১ ডিসেম্বর ২০১৯ ০৫:৩৭ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ৩৬৭ বার।

জ্বালানী তেল বিক্রির কমিশন এবং ট্যাংকলরী ভাড়া বৃদ্ধিসহ ১৫ দফা দাবিতে পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী রোববার সকাল ৬ টা থেকে বগুড়ায় পেট্রোল ও ডিজেলসহ সব ধরনের জ্বালানী তেল বিক্রি বন্ধ করে দেওয়া হয়ে গেছে। এতে দুর্ভোগে পড়েছেন যানবাহন চালক ও মোটর সাইকেল আরোহীরা। 
জ্বালানী তেল ব্যবসায়ীদের সংগঠন পেট্রোল পাম্প ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন ও ট্যাংকলরী মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের স্থানীয় নেতৃবৃন্দ বলছেন, দাবি না মানা পর্যন্ত তারা তেল উত্তোলন, পরিবহন ও বিপনণ কার্যক্রম বন্ধ রাখবেন। জ্বালানী তেল ব্যবহারকারী পরিবহন মালিকসহ সংশ্লিষ্টরা বলছেন, তাদের যানবাহনে যেটুকু তেল রয়েছে তাতে হয়তো একদিন চলবে। কিন্তু যদি তেল বিক্রি অনির্দিষ্টকাল ধরে বন্ধ রাখা হয় তাহলে জ্বালানী তেল নির্ভও সব যানবাহনের চাকা বন্ধ হয়ে যাবে।
পেট্রোল পাম্প ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন ও ট্যাংকলরী মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের পক্ষ থেকে গত ২৬ নভেম্বর বগুড়া প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে তাদের ঘোষিত পনের দফা ৩০ নভেম্বরের মধ্যে মেনে নেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহবান জানানো হয়েছিল। পেট্রোল পাম্প ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের কেন্দ্রীয় মহাসচিব ও রাজশাহী বিভাগীয় সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা মিজানুর রহমান রতন জানিয়েছিলেন, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে দাবি মানা না হলে ১ ডিসেম্বর থেকে রাজশাহী, রংপুর ও খুলনা বিভাগের সব ডিপো থেকে জ¦ালানী তেল উত্তোলন, পরিবহন ও বিপণন কার্যক্রম অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ রাখা হবে।
ওইদিন সংবাদ সম্মেলনে যে পনের দফা দাবি ঘোষণা করা হয় সেহুলো হলো-জ্বালানী তেল বিক্রির  প্রচলিত কমিশন কমপক্ষে সাড়ে ৭ শতাংশ করা,  জ্বালানী তেল ব্যবসায়ীরা কমিশন এজেন্ট নাকি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান-বিষয়টি সুনির্দিষ্টকরণ, প্রিমিয়াম পরিশোধ সাপেক্ষে ট্যাংকলরী শ্রমিকদের ৫ লক্ষ টাকা দুর্ঘটনা বীমা প্রথা প্রনয়ন,  ট্যাংকলরীর ভাড়া  বৃদ্ধি, পেট্রোল পাম্পের জন্য কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান অধিদপ্তরের লাইসেন্স গ্রহণ বাতিল, পেট্রোল পাম্পের জন্য পরিবেশ অধিদপ্তরের লাইসেন্স গ্রহণ বাতিল, পেট্রোল পাম্পে অতিরিক্ত পাবলিক টয়লেট, জেনারেল স্টোর ও ক্লিনার নিয়োগের বিধান বাতিল, সড়ক ও জনপথ বিভাগ কর্তৃক পেট্রোল পাম্পের প্রবেশ দ্বারের ভূমির জন্য ইজারা গ্রহণের প্রথা বাতিল,  ট্রেড লাইসেন্স ও বিস্ফোরক লাইসেন্স ব্যতিত অন্য দপ্তর বা প্রতিষ্ঠান কর্তৃক লাইসেন্স গ্রহণের সিদ্ধান্ত বাতিল, বিএসটিআই কর্তৃক আন্ডার গ্রাউন্ড ট্যাংক ৫ বছর অন্তর বাধ্যতামুলক ক্যালিব্রেশনের সিদ্ধান্ত বাতিল, ট্যাংকলরী চলাচলে পুলিশি হয়রানী বন্ধ, সুনির্দিষ্ট দপ্তর ব্যতিত সরকারি অন্যান্য দাপ্তরিক প্রতিষ্ঠান কর্তৃক ডিলার বা এজেন্টদেরকে অযথা হয়রানী বন্ধ, নতুন কোন পেট্রোল পাম্প নির্মাণের ক্ষেত্রে সংশি¬ষ্ট বিভাগীয় জ্বালানী তেল মালিক সমিতির ছাড়পত্রের বিধান চালু, পেট্রোল পাম্পের পাশে যেকোন স্থাপনা নির্মানের পূর্বে জেলা প্রশাসকের অনাপত্তি সনদ গ্রহণ বাধ্যতামূলক ও বিভিন্ন জেলায় ট্যাংকলরী থেকে জোরপূর্বক পৌরসভার চাঁদা গ্রহণ বন্ধ করা।
বগুড়া প্রেসক্লাবে আয়োজিত ওইদিনের সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, উল্লেখিত দাবির বিষয়ে সরকারের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও শুধু মৌখিক আশ্বাস ছাড়া আর কিছুই পাওয়া যায়নি। এ অবস্থায় পেট্রোল পাম্প পরিচালনা করা অসম্ভব হয়ে পড়েছে। কারণ খাতটি এরই মধ্যে অলাভজনক হয়ে পড়েছে। তাই বাধ্য হয়েই তারা চুড়ান্ত কর্মসূচী পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। 
রোববার বগুড়া শহরে এবং শহরতলীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচীর সমর্থনে সবগুলো পেট্রোল পাম্প বন্ধ রাখা হয়েছে এবং জ্বালানী তেলবহনকারী ট্যাংকলরীগুলোও চলাচল করছে না। বগুড়া শহরের শতাব্দী ফিলিং স্টেশনের স্বত্বাধিকারী এম এ মোমিন দুলাল জানান, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তারা তেল উত্তোলন, পবিহন ও বিপনণ বন্ধ রাখবেন। শহরের মাটিডালি এলাকার একটি পেট্রোল পাম্পে মোটর সাইকেলে জ্বালানী নিতে আসা বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা আইয়ুবুর রহমান বলেন, কোন পেট্রোল পাম্পেই তেল বিক্রি করা হচ্ছে না। এতে তিনি বিপাকে পড়েছেন। আইয়ুবুর রহমান বলেন, ‘আমাকে প্রতিদিন পাঁচ তিলার তেল কিনতে হয়। এখন তেল না পেলে আমার হয়তো বাড়িতে ফিরে যেতে হবে।’