আদালতে বিএনপির আইনজীবীদের হট্টগোল, এজলাস ছাড়লেন প্রধান বিচারপতি

পুণ্ড্রকথা ডেস্ক
প্রকাশ: ০৫ ডিসেম্বর ২০১৯ ০৫:৪৪ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ২১৯ বার।

জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জামিন শুনানি শুরু হলে দুপক্ষের আইনজীবীদের তুমুল হট্টগোলে এজলাস ছেড়ে চলে যান প্রধান বিচারপতি। বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৯ টার দিকে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে আপিল বিভাগের ছয় সদস্যের বেঞ্চে এই শুনানি শুরু হয়। খবর যুগান্তর অনলাইন 

শুনানির শুরুতে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিকেল বোর্ডের বরাত দিয়ে আদালতকে জানান, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর কিছু স্বাস্থ্য পরীক্ষা বাকি আছে, সেগুলো করতে সময় লাগবে। খালেদা জিয়ার মেডিকেল প্রতিবেদন এবং শুনানির জন্য দুই সপ্তাহ সময় প্রার্থনা করেন অ্যাটর্নি জেনারেল। আদালত আগামী ১১ ডিসেম্বর মধ্যে মেডিকেল প্রতিবেদন দাখিল এবং শুনানির জন্য ১২ ডিসেম্বর, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সময় দেন।

এসময় খালেদা জিয়ার আইনজীবী অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীনসহ অন্যরা আজকের মধ্যেই শুনানি করার দাবি জানান। এসময় দুই পক্ষের আইনজীবীদের মধ্যে চরম উচ্চবাচ্য শুরু হয়। জয়নুল আবেদীন বলেন, খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা খুবই খারাপ, আগে তার জামিন দেন, প্রয়োজনে শুনানি পরে হোক। তিনি খালেদা জিয়ার অন্তবর্তী জামিন প্রার্থনা করেন। এর বিরোধিতা করেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা।

তখন আদালত জানান আগামী বৃহস্পতিবার শুনানি হবে। এরপর বিএনপির আইনজীবীরা কোর্টে হট্টগোল শুরু করেন।

কয়েক মিনিট ধরে তাদের মধ্যে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় চলার পর আপিল বিভাগের প্রধান বিচারপতিসহ ছয় জন বিচারপতি এজলাস ছেড়ে খাস কামরায় চলে যান। এসময় আদালতে উপস্থিত বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা শেইম শেইম বলে চিৎকার করতে থাকেন।

কোর্ট উঠে চলে গেলেও আইনজীবীরা কেউ কারও জায়গা ছাড়েননি, যে যার জায়গায় বসে আছেন। তারা জামিন শুনানি না হওয়া পর্যন্ত অবস্থান নেয়ার কথা বলছে। দুপক্ষের আইনজীবীদের মুখোমুখি অবস্থানের কারণে বন্ধ রয়েছে বিচারিক কাজ।

আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম, অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মুরাদ রেজা, দুদকের পক্ষে ছিলেন খুরশীদ আলম খান।

আর খালেদা জিয়ার পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, জমিরউদ্দীন সরকার, খন্দকার মাহবুব হোসেন, জয়নুল আবেদীন, এ জে মোহাম্মদ আলী, মাহবুব উদ্দিন খোকন, সগীর হোসেন, ব্যারিস্টার মীর হেলাল, রুহুল কুদ্দুস কাজলসহ বিএনপির শতাধিক আইনজীবী।

এর আগে এ মামলার শুনানির সময় গত ২৮ নভেম্বর সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের অবস্থা জানতে তার বিষয়ে গঠিত মেডিকেল বোর্ডের প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছিলেন সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগ। আজকের মধ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল বোর্ডকে এ প্রতিবেদন দাখিল করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছিল। এ দিনই আদেশের জন্য দিন নির্ধারণ করে দেন আদালত। সেই পর্যন্ত খালেদা জিয়ার জামিন আবেদনের শুনানি মুলতবি রাখা হয়। সেই মোতাবেক আজ স্বাস্থ্য প্রতিবেদন জমা দেয়ার কথা ছিল।

খালেদা জিয়ার পক্ষে জামিনের শুনানি করেন সুপ্রিমকোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন। এ সময় ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন, অ্যাডভোকেট নিতাই রায় চৌধুরী, ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, অ্যাডভোকেট সগির হোসেন লিওন, ব্যারিস্টার কায়সার কামাল, ব্যারিস্টার মীর হেলাল উদ্দিন, ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল প্রমুখ আইনজীবী উপস্থিত ছিলেন।

রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম, অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মুরাদ রেজা ও মমতাজউদ্দিন ফকির, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিশ্বজিত দেবনাথ।

খালেদা জিয়ার জামিন চেয়ে দেশের সর্বোচ্চ আদালত আপিল বিভাগের সংশ্নিষ্ট শাখায় গত ১৪ নভেম্বর আবেদন করেন তার আইনজীবীরা। পরে ১৭ নভেম্বর আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত আবেদনটি নিষ্পত্তির জন্য প্রধান বিচারপতির বেঞ্চে পাঠিয়ে দেন। এরই ধারাবাহিকতায় জামিন আবেদনটি আপিল বিভাগে কার্যতালিকাভুক্ত হয়।

৩১ জুলাই হাইকোর্টের বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ও বিচারপতি এসএম কুদ্দুস জামানের হাইকোর্ট বেঞ্চ খালেদা জিয়ার জামিন আবেদন খারিজ করে দেন। এর পর ১৪ নভেম্বর সাতটি গ্রাউন্ডে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় খালেদা জিয়ার জামিন চেয়ে আপিল আবেদন করা হয়। ১৭ নভেম্বর আবেদনটি আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি মো. নুরুজ্জামানের আদালতে উপস্থাপন করা হয়। ২৫ নভেম্বর শুনানির পর বিচারক সেটি আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে পাঠানোর আদেশ দেন।

গত বছরের ২৯ অক্টোবর জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়াকে সাত বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়। পাশাপাশি ১০ লাখ টাকা টাকা জরিমানা করা হয়। এ মামলায় খালেদা জিয়ার সঙ্গে আরও তিন আসামিকে সাত বছর করে কারাদণ্ড দেয়া হয়।

রায়ের পর ২০১৮ সালের ১৮ নভেম্বর জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় বিচারিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে খালাস চেয়ে আপিল করেন খালেদা জিয়া।