ভার্সিটি ছাত্রীর লাশ উদ্ধার: জুতার ছাপে রহস্য উদ্ঘাটনের চেষ্টা

পুন্ড্রকথা ডেস্ক
প্রকাশ: ০৭ ডিসেম্বর ২০১৯ ০৪:১০ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ১৬২ বার।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রী রুবাইয়াত শারমিন রুম্পার মৃত্যুরহস্য উদ্ঘাটনে দুটি জুতার ছাপকে কেন্দ্র করে চলছে তদন্ত। ঘটনাস্থলের পাশের ১১ তলা ভবনের (আয়েশা শপিং কমপ্লেক্স) ছাদে এ দুটি জুতার ছাপ পাওয়া যায়। ধারণা করা হচ্ছে, এগুলো রুম্পার জুতার। ছাদের সঙ্গে লাগোয়া সামান্য ঢালু ছোট্ট একটি কার্নিশে এই ছাপ পাওয়া যায়। নিচে পড়ার আগে হয়তো সেখানে তিনি সর্বশেষ দাঁড়িয়ে ছিলেন।

এরই মধ্যে ওই ছাপ ও জুতার ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগে (সিআইডি) পাঠানো হয়েছে। এদিকে রুম্পাকে হত্যা করা হয়েছে দাবি করে এর বিচার চেয়ে শুক্রবার সকালে মানববন্ধন করেছেন স্ট্যামফোর্ডের সিদ্ধেশ্বরী ক্যাম্পাসের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।

তদন্তকারী কর্মকর্তারা বলছেন, যদি ওই কার্নিশ থেকে রুম্পা নিচে পড়ে যান তবে স্বেচ্ছায় ভবন থেকে লাফ দিয়েছেন বলে যে ধারণা করা হচ্ছে সেটি জোরালো হবে। তবে তাকে কেউ নিচে ফেলে দিয়েছে কিনা- এ বিষয়টিও গুরুত্ব দিয়েই তদন্ত করা হচ্ছে।

মামলার তদন্তের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একজন পুলিশ কর্মকর্তা যুগান্তরকে বলেন, বুধবার রাত ১১টা ৪০ মিনিটে সিদ্ধেশ্বরী সার্কুলার রোডে ৬৪/৪ নম্বর বাড়ির প্রধান গেটের সামনে রুম্পার লাশ পড়েছিল। আশপাশের বাসিন্দারা জানিয়েছেন, ওই সময় উপর থেকে বিকট শব্দে কিছু একটা পড়েছিল। পরে বেরিয়ে দেখেন রাস্তায় পড়ে আছে এক তরুণীর লাশ। রুম্পার লাশ যেখানে পড়েছিল ওই রাস্তার এক পাশে চারতলা এবং অপর পাশে পাঁচতলা একটি ভবন রয়েছে। ওই রাস্তার মাথায় রয়েছে একটি ১১ তলা ভবনের (আয়েশা শপিং কমপ্লেক্স) পেছন দিক। কিছু সমীকরণ মেলায় ধারণা করা হচ্ছে, তিনি ১১ তলা ভবনের ছাদ থেকেই পড়েছেন।

এদিকে সরেজমিন ১১ তলা ভবনের ছাদে গিয়ে দেখা যায়, পুরো ছাদটি অরক্ষিত। নির্মাণকাজ শেষ না হওয়ায় ছাদে হাঁটাচলা করাও বেশ ঝুঁকিপূর্ণ। ছাদের চারদিকে কোনো রেলিং নেই। মাঝখানে অনেক ফাঁকা জায়গা, সেখান দিয়ে হাঁটাচলা করলে যে কোনো সময় নিচে পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ওই ছাদে একটি কবুতরের খামার করেছেন আবাসিক ফ্ল্যাটগুলোর মালিকের ছেলে ফেরদৌস আলী। ওই খামারের পেছন দিকে ছাদের সঙ্গে লাগোয়া একটি ছোট্ট কার্নিশ। এটি ছাদ থেকে একটু ঢালু। সেখানে সাধারণত কারও যাওয়ার কথা নয়। কারণ সেখানে দাঁড়ালে নিচে পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

কবুতরের খামারের মালিক ফেরদৌস আলী  বলেন, সাধারণত ছাদে আমাদের খুব একটা যাওয়া হয় না। বিশেষ করে সন্ধ্যার পর ছাদে কেউ থাকে না। ঘটনার দিন ওই ছাদে কেউ গিয়েছিলেন কিনা এ বিষয়ে আমাদের কিছু জানা নেই।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা রমনা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) জহিরুল ইসলাম বলেন, ঘটনাটি গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে। আশা করছি শিগগিরই রুম্পার মৃত্যুরহস্য উদ্ঘাটন করা সম্ভব হবে।

এদিকে রুম্পার লাশ উদ্ধারের একদিন পর বৃহস্পতিবার তার পরিচয় নিশ্চিত হয় পুলিশ। তিনি স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী। মা ও ভাইয়ের সঙ্গে তিনি মালিবাগের শান্তিবাগের একটি বাসায় থাকতেন। তার বাবা রোকনউদ্দিন হবিগঞ্জের একটি পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক। তাদের গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহ সদরের বিজয়নগর গ্রামে। শুক্রবার সকালে গ্রামের বাড়িতেই রুম্পাকে দাফন করা হয়।

অনেক প্রশ্নের উত্তর নেই : রুম্পার মৃত্যুর পর অনেক প্রশ্নের কোনো উত্তর খুঁজে পাচ্ছেন না মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তারা। তারা জানান, ঘটনার দিন বুধবার প্রাইভেট পড়ানোর উদ্দেশ্যে ৫টার পর রুম্পা বাসা থেকে বের হন। তিনি যে বাসায় প্রাইভেট পড়াতে যান সেটি শান্তিবাগেই। বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে তিনি বাসার নিচে এসে মা নাহিদা আক্তার পারুলকে ফোন দিয়ে বলেন, তার আট বছর বয়সী চাচাতো ভাই জাহিদুল ইসলাম সুমনের কাছে এক জোড়া স্যান্ডেল দিয়ে নিচে পাঠাতে। নিচে দাঁড়িয়ে তিনি জুতা পরিবর্তন করেন। এরপর তার সঙ্গে থাকা ব্যাগ, ঘড়ি, আংটি এবং মোবাইল ফোন সুমনকে দিয়ে বলেন, ‘আমার কাজ আছে, একটু পর আসছি।’ তারপর থেকে তার কোনো খবর পায়নি পরিবার। কেন তিনি মোবাইল ফোনসহ সবকিছু বাসায় রেখে গেলেন এই প্রশ্নের উত্তর মিলছে না। তিনি কেন শান্তিবাগ এলাকার ভবনে গিয়েছিলেন, তার সঙ্গে অন্য কেউ ছিল কিনা- এ বিষয়টিও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। এর আগে কখনও তিনি ওই ভবনে গিয়েছিলেন কিনা সেটিও একটি বড় প্রশ্ন তদন্তকারী কর্মকর্তাদের।

প্রেমের সম্পর্ক নিয়ে ধোঁয়াশা : জানা গেছে, ৭-৮ মাস আগে স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএ’র এক ছাত্রের সঙ্গে রুম্পার প্রেমের সম্পর্ক ছিল। পরে সেই ছেলেটি আর্থিক কারণে স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। পারিবারিক কারণ দেখিয়ে ছেলেটি রুম্পার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেন।

ওই ছেলেটি কাছে দাবি করেন, রুম্পা বিভিন্ন সময় ফেসবুক এবং মোবাইল ফোনে তার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করতেন। কিন্তু তিনি এই সম্পর্ক এগিয়ে নিতে আগ্রহী ছিলেন না। ঘটনার দিন বুধবার দুপুরে এক বন্ধুর জন্মদিনের কেক কাটতে স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে আসেন তিনি। সেখানে রুম্পার এক মেয়ে বন্ধু তার (ছেলেটি) সঙ্গে দেখা করেন। তিনি তাকে অনুরোধ করেন প্রেমের সম্পর্কটি যেন তারা এগিয়ে নিয়ে যান। পরে রুম্পাও তার সঙ্গে দেখা করেন। সবার সামনেই তিনি রুম্পাকে জানিয়ে দেন, এই সম্পর্কটি এগিয়ে নিতে চান না তিনি। পরে তিনি সেখান থেকে চলে যান। মামলার তদন্তসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, প্রেমসংক্রান্ত বিষয়টি নিয়ে ধোঁয়াশা রয়েছে। এ বিষয়ে খোঁজ নেয়া হচ্ছে।

মানববন্ধন : রুম্পাকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে- এমন দাবি করে বিচার দাবি করেছেন স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। শুক্রবার সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিদ্ধেশ্বরী ক্যাম্পাস থেকে একটি র‌্যালি নিয়ে ভিকারুনিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের সামনের সড়কে মানববন্ধন করেন তারা। মানববন্ধনে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আরিফুর রহমান বলেন, রুম্পার সঙ্গে যাই ঘটে থাকুক না কেন সেটি সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে বের করতে হবে। এ ঘটনার সঙ্গে যারাই জড়িত থাকুক তাদের বিচার করতে হবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর এবং ইংরেজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মির্জা মো. অদ্বিত রহমান বলেন, এটা ভাবতেই পারছি না রুম্পা নেই। আমরা এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই।

মানববন্ধন শেষে র‌্যালি নিয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে ফিরে যান। তারা ঘোষণা দেন, রুম্পা হত্যার বিচার না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।