বগুড়ায় আ’লীগের সম্মেলনে মোহাম্মদ নাসিম

বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় ৪ নেতা হত্যায় জিয়া জড়িত: তার বিচারে কমিশন গঠন করতে হবে

স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশ: ০৭ ডিসেম্বর ২০১৯ ১২:০২ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ৩৬৭ বার।

বিএনপি কোন আইন-আদালত মানে না বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মোহাম্মদ নাসিম। তিনি বলেন, ‘ওরা কোন বিচার মানে না, আইন মানে না এবং কোন নিয়ম-নীতিও মানে না। তারা জোর করে সুপ্রিম কোর্টের অবমাননা করে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে চায়।’ মোহাম্মদ নাসিম শনিবার দুপুরে বগুড়ায় জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে উদ্বোধনী বক্তৃতা করেন।
সুপ্রিম কোর্ট অবমাননার ঘটনায় জনগণ বিএনপির বিচার করবে উল্লেখ করে মোহাম্মদ নাসিম বলেন, ‘আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা আইন-আদালত ও বিচার ব্যবস্থা মেনে চলেন। বিগত সময়ে শেখ হাসিনা একাধিকবার বন্দী হয়েছিলেন। তখন তিনি জামিন নিয়েছেন কোর্টের মাধ্যমে আইন-আদালতের মাধ্যমে। আর বিএনপি জোর করে খালেদা জিয়ার জামিনের বন্তোবস্ত করতে চায়। সেজন্য পাকিস্তানে নওয়াজ শরীফের শাসনামলে বিরোধী নেতা-কর্মীরা যেভাবে সুপ্রিম কোর্টে হামলা চালিয়েছিল সেই একই স্টাইলে বিএনপি বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্টে হামলা চালিয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের অবমাননার বিচার বাংলার জনগণ অবশ্যই করবে।’
শহরের আলতাফুন্নেছা খেলার মাঠে সকাল সাড়ে ১১টায় জাতীয় সঙ্গীতের মধ্য দিয়ে সম্মেলনের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। সম্মেলনে ৫১৫জন কাউন্সিলরসহ প্রায় ২০ হাজার ডেলিগেট উপস্থিত ছিলেন। সম্মেলনের প্রথম অধিবেশন শেষে বিকেলে দ্বিতীয় অধিবেশনে মোহাম্মদ নাসিম নতুন সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে প্রতিদ্ব›দ্বীতাকারী ১৮জনের মধ্য থেকে দু’জনের নাম ঘোষণা করেন। এছাড়া সহ-সভাপতি, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও কোষাধ্যক্ষ পদেও মনোনীত ৭জনের নামও তিনি ঘোষণা করেন। 
বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগে নতুন সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হলেন- যথাক্রমে মজিবর রহমান মজনু ও রাগেবুল আহসান রিপু। এছাড়া সহ-সভাপতি পদে টি জামান নিকেতা, ৩ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক যথাক্রমে মঞ্জুরুল আলম মোহন, সাগর কুমার রায় ও আসাদুর রহমান দুলু এবং কোষাধ্যক্ষ মাসুদুর রহমান মিলনের নাম ঘোষণা করা হয়। মোহাম্মদ নাসিম নতুন সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে দ্রæততম সময়ের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের আহবান জানান। তবে নতুন কমিটি ঘোষণার পর পরই সম্মেলন স্থলে উপস্থিত একদল নেতা-কর্মী চেয়ার ছোঁড়াছুঁড়ি করেন। তবে সিনিয়র নেতৃবৃন্দের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি দ্রæত স্বাভাবিক হয়।
বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের বিলুপ্ত কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ডা. মকবুল হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে প্রধান বক্তা ছিলেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক। অন্যান্যের মধ্যে বক্তৃতা করেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের মেয়র এএচএম খায়রুজ্জামান লিটন, বগুড়া-১ আসনের সংসদ সদস্য আব্দুল মান্নান, বগুড়া-৫ আসনের সংসদ সদস্য হাবিবর রহমান, আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা বিষয়ক সম্পাদক ডা. রোকেয়া সুলতানা, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য নুরুল  ইসলাম ঠান্ডু ও মেরিনা জাহান। সম্মেলনে সঞ্চালনা করেন জেলা আওয়ামী লীগের বিলুপ্ত কমিটির প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক সুলতান মাহমুদ খান রনি। সম্মেলনে বিলুপ্ত জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মজিবর রহমান মজনু তার রিপোর্ট পেশ করেন। শোক প্রস্তাব পাঠ করেন ওই কমিটির দপ্তর সম্পাদক জাকির হোসেন নবাব।
সাবেক মন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানকে বঙ্গবন্ধু এবং জাতীয় ৪ নেতার খুনের পরিকল্পনাকারী উল্লেখ করে তার বিচারে কমিশন গঠনের জন্য আইনমন্ত্রীর প্রতি অনুরোধ জানান। তিনি বলেন, ‘খন্দকার মোশতাক বেইমান, এরশাদ বেইমান কিন্তু জিয়াউর রহমান হলো আসল খল নায়ক। তিনি বঙ্গবন্ধুর হত্যার সঙ্গে জড়িত ছিলেন এমনকি তার পরিকল্পনায় বাংলাদেশে রাজনৈতিক শূন্যতা সৃষ্টির লক্ষ্যে জাতীয় চার নেতাকে জেলখানায় হত্যা করা হয়। বঙ্গবন্ধুর হত্যার বিচার হয়েছে, জাতীয় চার নেতার হত্যার বিচার হয়েছে কিন্তু যিনি পরিকল্পনা করেছিলেন সেই জিয়াউর রহমানের কোন বিচার হয়নি বাংলাদেশে। আইনমন্ত্রীকে অনুরোধ করবো একটি কমিশন গঠন করে বঙ্গন্ধু এবং চার নেতার হত্যার সঙ্গে জড়িত জিয়াউর রহমানের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র এবং খুনে মামলা করতে হবে। যেদিন বঙ্গবন্ধুর খুনি মুল খল নায়ক জিয়াউর রহমানের বিরুদ্ধে তদন্ত কমিশন করে আসল সত্য উদঘাটিত হবে। সেদিনই এ হত্যার বিচার সম্পূর্ণ হবে।’
আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের সতর্ক করে দিয়ে তিনি বলেন, সামনে সুসময় নয় দুঃসময় আসতে পারে। আমরা দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতায় আছি। চক্রান্ত শুরু হয়ে গেছে। বিএনপি ও জামায়াতের মূল টার্গেট শেখ হাসিনা। তার ওপর ১৯ বার হামলা হয়েছে। তাঁর জীবন আশঙ্কামুক্ত নয়। তাই আত্মতুষ্টির কোন সুযোগ নেই। আওয়ামী লীগের কর্মী বলে আমরা নিশ্চিন্ত থাকতে পারি না। ওদের চক্রান্ত এখনও শেষ হয়নি। এখন গভীর চক্রান্ত চলছে।