শতাধিক গ্রামবাসীর উপস্থিতিতে সংবাদ সম্মেলন

বগুড়ার মহাস্থানে বসত-বাড়ি নির্মাণে প্রত্ন বিভাগের বাধা প্রদানের অভিযোগ

পুণ্ড্রকথা রিপোর্ট
প্রকাশ: ০৮ ডিসেম্বর ২০১৯ ১২:৫১ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ২১৭ বার।

বগুড়ার মহাস্থানগড় এলাকায় ব্যক্তি মালিকানাধীন জমিতে বসত-বাড়ি এবং পানি সেচের ড্রেন নির্মাণে প্রত্নতত্ত বিভাগের পক্ষ থেকে বাধা দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে। রোববার দুপুরে মহাস্থানগড়ের মাস্টার পাড়া এলাকায় গ্রামবাসীর পক্ষ থেকে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ উত্থাপন করা হয়। 
লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন মহাস্থান গড় প্রতিবন্ধী স্কুলের সভাপতি শাহিনুর রহমান। সংবাদ সম্মেলনকালে ওই গ্রামের কয়েক শ’ নারী-পুরুষ উপস্থিত ছিলেন। এ সময় সাংবাদিকদের নানা প্রশ্নের উত্তর দেন রায়নগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম শফি।  
সম্মেলনে বলা হয়, বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার রায়নগর ইউনিয়নের মহাস্থান গড় গ্রামে প্রায় ১০ হাজার মানুষের বসবাস। ওই গ্রামের ৭৫০ দশমিক ৯৩ একর জমির মধ্যে ৫৮৬ দশমিক ১১ একর ব্যক্তি মালিকানাধীন। বাকি ১৬৪ দশমিক ৮২ একর জমির মধ্যে মহাস্থান মাজার মসজিদের মালিকানায় রয়েছে ১০২ দশমিক ৭৩ এবং অবশিষ্ট ৬২ দশকি ০৯ একর প্রতœতত্ত¡ অধিদপ্তরের।
লিখিত বক্তব্যে শাহিনুর রহমান বলেন, বৃটিশ শাসনামলে প্রণীত ক্যাডাস্টাল সার্ভে (সিএস), পাকিস্তান শাসনামলের মডিফায়েড রেকর্ড (এমআরআর) ও বাংলাদেশে প্রস্তুত করা রিভিশনাল সার্ভের (আরএস) ভিত্তিতে তারা মহাস্থানগড়  মৌজায় বংশানুক্রমে বসত-বাড়ি নির্মাণসহ চাষাবাদ করে আসছেন। তাছাড়া স্কুল-কলেজ এবং মাদ্রাসাসহ বহু প্রতিষ্ঠানও গড়ে উঠেছে। তবে প্রতœতত্ত¡ বিভাগের আওতাধীন জাদুঘর কর্তৃপক্ষ গত কয়েক বছর ধরে এই গ্রামের বাসিন্দাদেরকে বসত-বাড়ি ও পানি সেচের ড্রেন নির্মাণে বাধা দিচ্ছেন। এমনকি মৃত্যুবরণকারী লোকদের দাফনের জন্য তাদের দখলীয় জমিতে কবর খুঁড়তেও বাধা দিচ্ছেন।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, প্রায় ৯ বছর আগে ২০১০ সালে মহাস্থান মাজারের পাশে স্থাপনা নির্মাণকে কেন্দ্র করে একটি মানবাধিকার সংগঠন উচ্চ আদালতে রিট করেন। ওই রিটের প্রেক্ষিতে আদালত শুধুমাত্র প্রতœতাত্তি¡ক নিদর্শন রয়েছে এমন এলাকায় খনন বা নির্মাণ কাজ না করতে আদেশ দেন। কিন্তু প্রতœতাত্তি¡ক জাদুঘরের কর্মকর্তারা উচ্চ আদালতের ওই নির্দেশনার পরিবর্তে নিজস্ব খেয়াল-খুশি অনুযায়ী মহাস্থানগড় গ্রামের সব স্থানেই সব ধরনের নির্মাণ কাজে বাধা দিচ্ছেন।  বহু জমি মালিকের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে তাদের হয়রানিও করা হচ্ছে। এসবের পাশাপাশি প্রতœতত্ত¡ বিভাগ জনসাধারণের মূল্যবান সম্পত্তি স্বল্প মূল্যে অধিগ্রহণ করে নাম মাত্র মূল্যে তা বিভিন্ন ব্যক্তিকে লিজও প্রদান করেছেন। প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর আগামীতে আরও জমি অধিগ্রহণের চেষ্টা চালাচ্ছে বলেও অভিযোগ করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে মহাস্থানগড় গ্রামের জমি অধিগ্রহণ চেষ্টার প্রতিবাদ জানিয়ে এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করা হয়।
তবে যোগাযোগ করা হলে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের বগুড়া আঞ্চলিক কার্যালয়ের সহকারি পরিচালক মুজিবুর রহমান জানান, মহাস্থানগড় এলাকাটি প্রায় আড়াই হাজার বছরের প্রাচীন একটি দূর্গনগরী। উত্তর-দক্ষিণে ১ হাজার ৫২৫ মিটার এবং পূর্ব-পশ্চিমে ১ হাজার ৩৭০ মিটার দীর্ঘ নগরীর পুরাটাই প্রাচীর ঘেরা। যা সংরক্ষিত এলাকা হিসেবে চিহ্নিত। প্রতœ আইন অনুযায়ী ব্যক্তি মালিকানা জমি হলেও তার ভেতরে কোন খনন কাজ করা যাবে না। তিনি বলেন, ‘গ্রামবাসীর সঙ্গে আমাদের কোন বিরোধ নেই। আমরা শুধু প্রত্ন আইনকে অনুসরণ করার চেষ্টা করি।’