রাখাইন নিয়ে কেবল বাংলাদেশ সংক্ষুব্ধ হতে পারে, গাম্বিয়া নয়: মিয়ানমার

পুণ্ড্রকথা ডেস্ক
প্রকাশ: ১১ ডিসেম্বর ২০১৯ ১৫:০৭ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ১৭২ বার।

আন্তর্জাতিক আদালতে গাম্বিয়ার অভিযোগ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে মিয়ানমার। ইসলামি সহযোগী সংস্থা (ওআইসি) আফ্রিকার দেশটিকে দিয়ে এই মামলাটি করেছে বলে দাবি তাদের। 

নেদারল্যান্ডসের দ্য হেগে আন্তর্জাতিক আদালতের দ্বিতীয় দিনের শুনানিতে মিয়ানমারের আইনজীবী ক্রিস্টোফার স্টকার বলেন, মিয়ানমারের বিরুদ্ধে গাম্বিয়ার মামলার পেছনে আছে মূলত ওআইসি। তাদের অর্থায়নেই আন্তর্জাতিক আদালতে অভিযোগ এনেছে গাম্বিয়া।

তার দাবি, রাখাইন পরিস্থিতি নিয়ে সংক্ষুব্ধ হওয়ার কথা বাংলাদেশের, গাম্বিয়ার নয়। এ ছাড়া গণহত্যা নিয়ে যেসব দেশ মামলা করেছিল তারা সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত ছিল, গাম্বিয়া সেরকম কিছুর ভুক্তভোগী নয়।

স্টকার আরও বলেন, গত সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের বক্তব্যেও রোহিঙ্গা গণহত্যার কথা বলেননি গাম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট। সেখানে ওআইসির মন্ত্রীপর্যায়ের কমিটিতেও এই মামলার অর্থায়ন নিয়ে আলোচনা হয়। যে কমিটির সভাপতি গাম্বিয়া।

তিনি বলেন, ওআইসি শীর্ষ সম্মেলনেও এই মামলার যে সিদ্ধান্ত হয় সেখানেও রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে নৃশংসতার কথা বলা হয়েছে। এতেও গণহত্যার ভিত্তি হিসেবে কোনো তথ্যপ্রমাণের কথা বলা হয়নি।

গাম্বিয়া ও মিয়ানমার দুই দেশই ১৯৪৮ সালের জেনোসাইড কনভেনশনে স্বাক্ষরকারী দেশ। এই কনভেনশন শুধু দেশগুলোতে গণহত্যা থেকে বিরত থাকা নয়; বরং এ ধরনের অপরাধ প্রতিরোধ এবং অপরাধের জন্য বিচার করতে বাধ্য করে।

ক্রিস্টোফারের দাবি, কনভেনশন অনুযায়ী গাম্বিয়া এই মামলার অধিকার রাখে, কোনো সংস্থা বা জোট নয়। ওআইসি এই মামলাটি করায় এই অভিযোগ আন্তর্জাতিক আদালতে টিকে না।

শুনানিতে মিয়ানমারের আরেক আইনজীবী ফোবে ওকোয়ার দাবি, আদালত কোনো অন্তর্বর্তী ব্যবস্থার নির্দেশ দিলে বাংলাদেশ থেকে চলমান প্রত্যাবাসন প্রত্যাবাসন বাধাগ্রস্ত হবে।

তিনি জানান, জাতিসংঘসহ বিভিন্ন জাতীয় আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান মাঠপর্যায় থেকে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় সহায়তা করছে। সেইসঙ্গে বাস্তুচ্যুতদের পুনর্বাসনের জন্য বিভিন্ন প্রকল্পে কাজ করছে।  জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআরের তদারকিতে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়াকে চলতে দেওয়া উচিত।

তার দাবি, বাস্তুচ্যুতদের বোঝা যাদের ওপরে পড়েছে তারা মিয়ানমারের সঙ্গে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় একমত হয়েছে। এ ছাড়া বাংলাদেশ মিয়ানমারে পুনরায় কোনো গণহত্যার ঝুঁকির কথাও বলছে না।

মুসলিম সংখ্যালঘু গোষ্ঠী রোহিঙ্গা গণহত্যা ও জাতিগত নিধনে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে নভেম্বরে অভিযোগ আনে গাম্বিয়া।

প্রসঙ্গত, মঙ্গলবার আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) ১৭ জন বিচারপতির উপস্থিতিতে তিনদিন ব্যাপি এই শুনানি শুরু হয়।

শুনানির প্রথমদিন সু চির উপস্থিতিতে রাখাইনে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর মানবতাবিরোধী নৃশংস কর্মকাণ্ডের অভিযোগগুলো তুলে ধরেন গাম্বিয়ার আইনমন্ত্রী আবুবকর মারি তামবাদু। 

বুধবার দ্বিতীয় দিনের শুনানির শুরুতে মিয়ানমারের পক্ষে বক্তব্য উপস্থাপন করেন মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সিলর সু চি। এতে তিনি গাম্বিয়ার আনা অভিযোগগুলো অস্বীকার করেন।

সু চি জাতিসংঘের শীর্ষ আদালতকে বলেন, ‘এটা দুঃখের বিষয় যে, গাম্বিয়া রাখাইন রাজ্যের পরিস্থিতি নিয়ে একটি অসম্পূর্ণ, বিভ্রান্তিকর চিত্র তুলে ধরেছে। শুধু অনুমানের ভিত্তিতে গণহত্যার বিষয়টি মিয়ানমারের সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে।’

তিনি বলেন, রাখাইনের সমস্যা আন্তর্জাতিক আদালতে আনার মতো বিষয় নয়। সেনাবাহিনীর সদস্যরা সেখানে যুদ্ধাপরাধ করে থাকলে দেশীয় তদন্ত ও বিচার ব্যবস্থায় তা নিষ্পত্তি করা হবে।

এ ছাড়া দেশটির পক্ষে আইনজীবী অধ্যাপক উইলিয়াম সাবাস বলেন, ‘গাম্বিয়ার আবেদনে রাখাইনের তিনটি গ্রামে কয়েকশ মৃত্যুর কোনো হিসাব দেয়া হয়নি। জাতিসংঘের প্রতিবেদনে যে ১০ হাজার রোহিঙ্গা নিহত হওয়ার কথা বলা হয়েছে, সেটির তথ্য প্রমাণও দেয়া হয়নি। এখানে গণহত্যার কোনো উদ্দেশ্য প্রমাণিত হয়নি।’

মিডলসেক্স ইউনিভার্সিটির আন্তর্জাতিক অপরাধ এবং মানবাধিকার বিষয়ের এই শিক্ষকের দাবি, ‘জাতিসংঘের তদন্ত দলের অনুসন্ধান ত্রুটিপূর্ণ। আদালতের উচিত, ওই তদন্ত প্রতিবেদন উপেক্ষা করা।’