রোহিঙ্গাদের চোখ ছিল হেগে

পুণ্ড্রকথা ডেস্ক
প্রকাশ: ১১ ডিসেম্বর ২০১৯ ১৫:২৩ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ৮৬ বার।

রোহিঙ্গা গণহত্যার অভিযোগে গাম্বিয়ার করা মামলার শুনানির দ্বিতীয় দিন বুধবার নেদারল্যান্ডসের হেগ শহরে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) অং সান সু চির দেওয়া বক্তব্যকে নির্লজ্জ মিথ্যাচার বলে মন্তব্য করেছেন কক্সবাজারের বিভিন্ন ক্যাম্পে আশ্রিত রোহিঙ্গারা। প্রথম দিনের মতো বুধবারও আইসিজেতে চলমান শুনানির খবর জানতে বেশিরভাগ রোহিঙ্গার দৃষ্টি ছিল টেলিভিশন, মোবাইল ফোন ও রেডিওর দিকে। বাংলাদেশ সময় ৩টার দিকে ক্যাম্পের রোহিঙ্গারা কেউ মোবাইলে, কেউ চায়ের দোকানে খবর দেখতে ভিড় জমায়। এ সময় মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সিলর অং সান সু চি শুনানিতে অংশ নিয়ে গণহত্যার অভিযোগ অস্বীকার করে যে বক্তব্য দিয়েছেন, তার তীব্র সমালোচনা করতে দেখা যায় রোহিঙ্গাদের। খবর সমকাল অনলাইন 

জাদিমুরা রোহিঙ্গা ক্যাম্পে গিয়ে দেখা যায়, সেখানকার একটি চায়ের দোকানে রোহিঙ্গাদের ভিড়। তারা টিভিতে খবর দেখছেন। ইংরেজি জানা রোহিঙ্গা যুবকরাও সেখানে উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া টেকনাফের নয়াপাড়া, শালবন, লেদা, উখিয়ার লম্বাশিয়া, জামতলী, মধুরছড়া ক্যাম্পের লোকজন টিভি ও মোবাইল ফোনে খবর দেখতে ব্যস্ত ছিলেন।

টিভিতে খবর দেখছিলেন বৃদ্ধ আবদুস সালাম। ক্ষোভের সঙ্গে তিনি বলেন, 'রোহিঙ্গা গণহত্যার বিষয়টিকে গণহত্যা বলা যায় না– কীভাবে এমন মন্তব্য করলেন অং সান সু চি! মানুষ কত নির্লজ্জ হলে এ কথা বলতে পারে! তবে গাম্বিয়া ও বাংলাদেশেকে ধন্যবাদ, তারা মিয়ানমার সরকারকে কাঠগড়ায় নিয়ে গেছে।'

তিনি বলেন, 'টিভিতে দেখেছি কীভাবে পেঁচার মতো তাকিয়ে ছিলেন অং সান সুচি। দেখে মনে হলো– তিনি কিছু জানেন না। নিজের স্বার্থে, যতোদিন বেঁচে থাকবেন সুচি, ততোদিন মিয়ানমার সেনাবাহিনীর পক্ষই নেবেন– এটি খুব সহজে বোঝা গেল। আমরা আশা করছি, রোহিঙ্গারা সুবিচার পাবেন।'

ছোট ভাইকে সঙ্গে নিয়ে নয়াপাড়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ছোট একটি কসমেটিক দোকানে মোবাইলে খবর দেখছিলেন মোহাম্মদ আবদুল্লাহ। তিনি বলেন, 'নেদারল্যান্ডসের হেগে গণহত্যা মামলার শুনানি হওয়ায় আশায় বুক বেঁধেছেন নির্যাতিত রোহিঙ্গারা। ন্যায়বিচার হলে শাস্তি পাবে গণহত্যার সঙ্গে জড়িত মিয়ানমার সেনাবাহিনী। এতে করে নাগরিকত্ব পাওয়াসহ মৌলিক অধিকার নিশ্চিত হলে রোহিঙ্গারা নিজ দেশে ফিরে যেতে রাজি হবে।'

রোহিঙ্গা নেতা মোস্তফা কামাল ও মোহাম্মদ আলম বলেন, 'আমাদের ওপর যে গণহত্যা চালানো হয়েছে, ধর্ষণ করা হয়েছে, তার শাস্তি তারা পাবে। কয়েকদিন ধরে রোহিঙ্গারা ক্যাম্পে ন্যায়বিচার প্রত্যাশায় রোজা, দোয়া মাহাফিলসহ বিশেষ প্রার্থনা করছে।'

সংবাদ মাধ্যমের বরাত দিয়ে আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটসের (এআরএসপিএইচ) ভাইস চেয়ারম্যান আবদুর রহিম বলেন, 'আইসিজেতে অং সান সুচির দেওয়া বক্তব্য মিথ্যাচার এবং সাজানো। কীভাবে রোহিঙ্গাদের ওপর সংগঠিত গণহত্যাকে অস্বীকার করলেন তিনি। বিষয়টি আমাদের মর্মাহত করেছে। তবুও আমরা আশা করছি– মিয়ানমার সরকার ও সেনাবাহিনীর কাঠোর শাস্তি হবে।'

কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মোহাম্মদ ইকবাল হোসেন বলেন, 'আন্তর্জাতিক আদালতে বিচারের শুনানি নিয়ে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে যাতে কেউ অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করতে না পারে সেজন্য আমরা সর্তক অবস্থানে রয়েছি।'