আসামে কারফিউ ভেঙে বিক্ষোভ, আরও ৪৮ ঘণ্টা ইন্টারনেট বন্ধ

পুণ্ড্রকথা ডেস্ক
প্রকাশ: ১২ ডিসেম্বর ২০১৯ ১৩:৩২ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ১৪৫ বার।

ভারতের পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ লোকসভায় পাস হওয়ার পর উচ্চকক্ষ রাজ্যসভায়ও পাস হয়েছে বিতর্কিত নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল (সিএবি)। এই বিলের প্রতিবাদে বিক্ষোভের আগুনে জ্বলছে আসাম। বুধবার থেকে কারফিউ ভেঙে রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করছেন হাজার হাজার মানুষ।

আসামের বৃহত্তর শহর ও বিক্ষোভের কেন্দ্রস্থল গুয়াহাটিতে অনির্দিষ্টকালের জন্য কারফিউ জারি করা হয়েছে এবং বিক্ষোভকারীদের দমনে সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। কারফিউ অমান্য করে বৃহস্পতিবার সকালে গুয়াহাটিতে বিক্ষোভ করছেন আন্দোলনকারীরা। তাদের দাবি, ছয় বছর ধরে সহিংস আন্দোলন করার পরে যে আসাম চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়, নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলের প্রভাবে সেই চুক্তি বিঘ্নিত হবে। 

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসামের ১০টি জেলায় মঙ্গলবার দুপুর ২টা থেকে ৪৮ ঘণ্টার জন্য মোবাইল ইন্টারনেট সেবা স্থগিত করা হয়েছিল, বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে যা আরও ৪৮ ঘণ্টা বাড়ানো হয়েছে।

পুলিশ ও বিক্ষোভকারীদের মধ্যে সংঘর্ষের পর আসামের চারটি অঞ্চলে নামানো হয়েছে সেনাবাহিনী। ভারতীয় সেনাবাহিনীর জনসংযোগ কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কর্নেল পি খোঙ্গসাই জানান, গুয়াহাটি শহরে দুই ইউনিট সেনা মোতায়েন করা হয়েছে এবং তারা এলাকায় টহল দিচ্ছেন। তিনসুকিয়া, ডিব্রুগড় ও জোড়হাট জেলাতেও মোতায়েন করা হয়েছে সেনা।

বিক্ষোভ থামাতে আশ্বাস দিয়েছেন দেশটির কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরা। টুইট করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও। এরপরও বিক্ষোভ থামানো যায়নি। কারফিউ ভেঙে গুয়াহাটির রাস্তায় নেমে আসেন হাজার হাজার মানুষ। নিরাপত্তাবাহিনীর উপস্থিতিতেই জায়গায় জায়গায় বিক্ষোভ করছেন তারা। জ্বলন্ত কাঠ ফেলে রাস্তা অবরোধ করা হয়েছে। এমনকি, ডিব্রুগড়ে রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সঙ্ঘের একটি দফতরে হামলা চালানো হয়েছে বলেও অভিযোগ করেছে স্থানীয় বিজেপি নেতারা। দফতরের বাইরে বেশ কয়েকটি গাড়িও জ্বালিয়ে দেওয়া হয় বলে দাবি তাদের।

এদিকে বৃহস্পতিবার আন্দোলনকারীদের পাশে দাঁড়িয়েছে অল আসাম স্টুডেন্টস ইউনিয়ন (আসু) এবং কৃষক মুক্তি সংগ্রাম সমিতি (কেএমএসএস)। সাধারণ মানুষকে ঘর ছেড়ে রাস্তায় নামার আহ্বান জানিয়েছে তারা। আসুর একটি বিবৃতিতে বলা হয়, নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলের বিরুদ্ধে লড়াই চলবে।

বিক্ষোভ নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে বুধবার থেকেই অবরুদ্ধ আসাম। এ দিন এয়ার ইন্ডিয়া, ইন্ডিগো, স্পাইসজেট, ভিস্তারা, গো এয়ারসহ বেশকিছু সংস্থা আসাম বিমান বন্দর থেকে তাদের একাধিক বিমানের ফ্লাইট বাতিল করেছে। বাতিল করা হয় বেশকিছু বিমানের অবতরণ। 

বুধবারের বিক্ষোভ চলাকালীন ডিব্রুগড়ের ছাবুয়ার একটি রেল স্টেশন চত্বরে আগুন ধরিয়ে দেয় বিক্ষোভকারীরা। তিনসুকিয়ার পানিতোলা স্টেশন চত্বরেও আগুন ধরানো হয়। এরপর আসামের সব লোকাল ট্রেন বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয় রেল কর্তৃপক্ষ। আপাতত ডিব্রুগড় থেকে সব দূরপাল্লার ট্রেনও বন্ধ রাখা হয়েছে। 

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ইতিমধ্যে টুইটারে আসামবাসীর উদ্দেশে এক বার্তায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী লিখেছেন, সিএবি নিয়ে আশঙ্কার কোনো কারণ নেই। কেউ আপনাদের অধিকার কাড়তে পারবে না। আসামের মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়ালও শান্তি বজায় রাখার আবেদন জানিয়েছিলেন। বিজেপির জেলা নেতাদের নিয়ে একটি বৈঠকে তিনি বলেন, এ রাজ্যে পাঁচ লাখের বেশি অনুপ্রবেশকারীকে নাগরিকত্ব দেওয়া হবে না। এর ফলে আমাদের সংস্কৃতির এবং ঐতিহ্যের কোনো সঙ্কট দেখা দেবে না।

বুধবার উচ্চকক্ষ রাজ্যসভায় নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলটি (সিএবি) পেশ করেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ। দিনভর তুমুল বিতর্কের পর রাজ্যসভায় ১২৫/১০৫ ভোটে বিলটি পাস হয়। এখন রাষ্ট্রপতির স্বাক্ষরের পর তা আইনে পরিণত হবে। 

এই আইনবলে পাকিস্তান, বাংলাদেশ, আফগানিস্তান থেকে ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বরের আগে আসা মুসলমান বাদে ভারতে বসবাসকারী হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান, জৈন ধর্মানুসারী শরণার্থীরা ভারতের নাগরিকত্ব পাবে। বিজেপির সমালোচকরা এই পদক্ষেপকে বৈষম্যমূলক, মুসলমানবিরোধী ও সাম্প্রদায়িক বলে বর্ণনা করেছেন। সূত্র: এনডিটিভি ও আনন্দবাজার পত্রিকা