ভারতকে গুয়াহাটি মিশনে নিরাপত্তা বাড়াতে বলেছে বাংলাদেশ

পুণ্ড্রকথা ডেস্ক
প্রকাশ: ১৩ ডিসেম্বর ২০১৯ ১২:০০ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ১৪১ বার।

আসামের প্রধান শহর গুয়াহাটি মিশনে নিরাপত্তা বাড়াতে ভারতকে অনুরোধ করেছে প্রতিবেশী বাংলাদেশ। খবর যুগান্তর  অনলাইন 

নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলের প্রতিবাদের সময় আসামের বিক্ষোভকারীরা হামলা চালিয়ে সেখানকার চ্যান্সারির দুটি নামফলক ভেঙে ফেলেছে।

ভারতীয় গণমাধ্যম এনডিটিভি ও বার্তা সংস্থা এএফপির খবরে এমন তথ্য জানা গেছে।

বিক্ষোভে উত্তাল রাজ্যটিতে চরম বিশৃঙ্খল অবস্থা দেখা দিয়েছে, অবনতি ঘটেছে নিরাপত্তা পরিস্থিতির। কারফিউ উপেক্ষা করে হাজার হাজার লোক রাস্তায় নেমে আসলে পুলিশের গুলিতে দুজন বিক্ষোভকারীও নিহত হয়েছেন।

বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ভারতীয় হাইকমিশনার রিভা গাঙ্গুলি বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্র সচিব কামরুল আহসানের সঙ্গে তার অফিসে দেখা করেন।

এতে বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনারের নিরাপত্তা বহরে হামলা ও গুয়াহাটি চ্যান্সারিতে ভাঙচুরের জন্য প্রতিবাদ জানানো হয়েছে।

এসময়ে মিশনের সম্পত্তি ও কর্মকর্তাদের সুরক্ষা দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

জবাবে ভারতীয় দূত নিশ্চয়তা দিয়ে বলেছেন, বাংলাদেশের চ্যান্সারি ও সহকারী হাই কমিশনারের বাসভবনে নিরাপত্তা বাড়াতে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ তাৎক্ষণিক সতর্ক ব্যবস্থা নিয়েছে।

রিভা গাঙ্গুলি দাসের উদ্ধৃতি দিয়ে এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, ভারতের যথাযথ কর্তৃপক্ষ ইতিমধ্যে সহকারী হাই কমিশনের বাসভবন, কর্মকর্তা ও তার পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তা জোরদার করেছেন।

বিবৃতির তথ্যানুসারে, গুয়াহাটি চ্যান্সারি থেকে ৩০ গজ দূরে মিশনের দুটি নামফলক ভেঙে নষ্ট করে দেয়া হয়েছে। তার একদিন আগে বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনারের নিরাপত্তা গাড়ি বহরেও হামলা চালানো হয়েছে। হামলার সময় তিনি বিমানবন্দরের দিকে যাচ্ছিলেন।

বিবৃতিতে বলা হয়, হাইকমিশনের নিরাপত্তা বহরে হামলা ও নামফলক ভাঙচুরের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটবে না। এতে দুই দেশের মধ্যকার চমৎকার দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে কোনো প্রভাব ফেলবে না।

এদিকে আইনটির প্রতিবাদে নতুন করে বিক্ষোভকারীরা জড়ো হলে শুক্রবার গুয়াহাটিতে ইন্টারনেট সেবা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।

ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় লোকজন মনে করেন, নতুন প্রণীত এই আইনে প্রতিবেশী বাংলাদেশ থেকে যাওয়া অভিবাসীদের নাগরিকত্ব দেয়া হবে।

সমালোচকরা এটাকে মুসলিম বিদ্বেষী বলেও অভিহিত করেছেন। শুক্রবার হাজার হাজার বিক্ষোভকারী যখন জড়ো হচ্ছেন, পুলিশ তখন দর্শকের ভূমিকায় ছিল।

আর নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপাতি কিনে তাড়াহুড়া করে বাড়িতে যেতে দেখা গেছে স্থানীয়দের। তবে নতুন করে কোনো সহিংসতার খবর পাওয়া না গেলেও গত কয়েকদিনের সহিংসতা ও ভাঙচুরের আবর্জনা সড়কে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে থাকতে দেখা গেছে।

রাস্তা অবরোধে কাটা গাছ, কংক্রিটের স্তম্ভ, পাথর ও রেলিং রাস্তায় পড়ে রয়েছে। অনেক ক্যাশ মেশিনের টাকা ফুরিয়ে গেছে। আর অধিকাংশ পেট্রোল স্টেশনও বন্ধ রাখা হয়েছে।

সরকারের স্থানীয় এক কর্মকর্তা বলেন, গুয়াহাটিতে ইন্টারনেট সেবা বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয়েছে।

মেঘালয়া সরকারও শিলংয়ের বেশ কিছু অংশের ইন্টারনেট বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে। বৃহস্পতিবার থেকে সেখানে কারফিউ চলছে।

নিরাপত্তা পরিস্থিতির অবনতির কারণে শহরটিতে সফরের পরিকল্পনা বাতিল করেছেন জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো অ্যাবে। রোববার সেখানে তার সফর করার কথা ছিল।

পুলিশকে সহায়তায় কয়েক হাজার সেনাকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে। সাম্প্রতিক বিক্ষোভে পুলিশকে লাঠিচার্জ ও কাঁদানে গ্যাস ব্যবহার করতে দেখা গেছে।

বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বরাতে এএফপি জানিয়েছে, বুধবারে গাড়িবহরে হামলার পর গুয়াহাটিতে বাংলাদেশ কনস্যুলেটে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।

শুক্রবার মানদেব দাস নামের এক বিক্ষোভকারী বলেছেন, আমাদের মাতৃভূমিতে তারা স্থায়ী হতে পারে না। এটা অগ্রহণযোগ্য। আমরা মারা যাব, কিন্তু বহিরাগতদের এখানে বসতি গড়তে দেব না।

সমুজ্জল ভট্টাচার্য নামের এক ব্যক্তি বলেন, জনগণের শক্তি দিয়ে আমরা সরকারকে পরাজিত করবো। কাজেই সরকার এই আইন বাতিল করতে বাধ্য হবে।

ভারতীয় প্রেসিডেন্ট বৃহস্পতিবার নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলে সই করেছেন। এতে প্রতিবেশী তিন দেশের মুসলমান ছাড়া বাকি ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা ভারতের নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করতে পারবেন।

ব্লুমবার্গের খবরে বলা হয়েছে, ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের অধিকার সুরক্ষায় ভারতের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।