নওগাঁ হানাদার মুক্ত হয় আজ

নওগাঁ (বগুড়া) প্রতিনিধিঃ
প্রকাশ: ১৭ ডিসেম্বর ২০১৯ ১২:২৩ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ১৭১ বার।

১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর সারাদেশে বিজয় দিবস পালিত হলেও দেশ স্বাধীনের দুই দিন পর ১৮ ডিসেম্বর নওগাঁকে হানাদার মুক্ত ঘোষণা করা হয়। এদিন প্রায় দুই হাজার পাকিস্তানি সেনা নওগাঁর যৌথবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে। আর এর মধ্য দিয়ে নওগাঁ হানাদার মুক্ত হয।

২৫ মার্চ পাক হানাদারদের আক্রমণের শিকার হয় নওগাঁ। পরে প্রায় এক মাস মুক্ত ছিল। ২২ এপ্রিল নওগাঁ পাক হানাদারদের দখলে চলে যায়। প্রায় সাড়ে ৭ মাস ধরে পাক হানাদার বাহিনীরা জেলার বিভিন্ন স্থানে হত্যা, লুট, অগ্নিসংযোগ, ধর্ষণসহ বিভিন্ন অপকর্ম চালায়।১০ ডিসেম্বর জেলার রাণীনগর উপজেলা এবং পার্শ্ববর্তী বগুড়া জেলার আদমদিঘী উপজেলার সান্তাহার হানাদার মুক্ত হয়। ফলে পার-নওগাঁয় বসবাসকারী সকল অবাঙালিরা ১৪ ডিসেম্বর রাতের মধ্যে স্বপরিবারে নওগাঁ কেডি স্কুলে নিরাপত্তার জন্য আশ্রয় নেয়। এ সময় হানাদার বাহিনী নওগাঁ ক্যান্টনমেন্ট এলাকা, সাবেক থানা চত্বর আদালত পাড়া ও এসডিও বাসভবন চত্বরে আত্মরক্ষামূলক প্রতিরক্ষা বেষ্টনী গড়ে তোলে।

১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তান সেনাবাহিনী ঢাকায় আত্মসমর্পণ করে। এ খবর শোনার পরও নওগাঁর পাকিস্তান সেনাবাহিনী অত্মসমর্পণ করবে না বলে ঘোষণা দেয়। ফলে কমান্ডার জালাল হোসেন চৌধুরীর নেতৃত্বে পর দিন সকাল ৭টার দিকে প্রায় ৩৫০ জন মুক্তিযোদ্ধা নওগাঁ শহরের দিকে অগ্রসর হন। ১৭ ডিসেম্বর, শীতের সকাল। মুক্তিবাহিনী জগৎসিংহপুর ও খলিশাকুড়ি গ্রামে আসতেই পাকিস্তানি সেনারা ভারী অস্ত্র ব্যবহার করে। সকাল থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত উভয় পক্ষে প্রচন্ড যুদ্ধ হয়। এ যুদ্ধে ৫ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন।

১৮ ডিসেম্বর শনিবার সকালে বগুড়া থেকে অগ্রসরমান ভারতীয় মেজর চন্দ্রশেখর, পশ্চিম দিনাজপুর বালুরঘাট থেকে পিবি রায়ের নেতৃত্বে মিত্রবাহিনী ও মুক্তিবাহিনী নওগাঁয় প্রবেশ করলে হানাদার বাহিনীর আর কিছুই করার ছিল না। ফলে সকাল ১০টার দিকে প্রায় দুই হাজার পাকসেনা নওগাঁ কেডি স্কুল থেকে পিএম গার্লস স্কুল, সরকারি গার্লস স্কুল, পুরাতন থানা চত্বর এবং এসডিও অফিস থেকে শুরু করে রাস্তার দু’পাশে মাটিতে অস্ত্র রেখে সারিবদ্ধ ভাবে দাঁড়িয়ে নতমস্তকে আত্মসমর্পণ করে।

তৎকালীন নওগাঁ মহকুমা প্রশাসক সৈয়দ মার্গুব মোরশেদ মুক্তি বাহিনী ও মিত্র বাহিনীকে স্বাগত জানান। বর্তমান পুরাতান কালেক্টরেট (এসডি) অফিস চত্বরে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করা হয়। সেখানে উপস্থিত মুক্তিযোদ্ধারা পতাকার প্রতি সালাম জানিয়ে সম্মান প্রদর্শন করেন। ফলে নওগাঁ হানাদারমুক্ত হয় ১৮ ডিসেম্বর।

জেলা মুক্তিযোদ্ধা ইউনিট সাবেক কমান্ড হারুন-অল-রশিদ বলেন, ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস পালনের পাশাপাশি ১৮ ডিসেম্বর ‘নওগাঁ হানাদার মুক্ত’ দিবস পালন করা হলে তরুন প্রজন্মরা জেলার মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানতে পারবেন। দিবসটি চিরস্মরণীয় করার জন্য সরকারিভাবে পালন করা দরকার বলে মনে করেন তিনি। তবে সামাজিক সংগঠন নওগাঁ একুশে পরিষদ দিবসটি উদযাপনে নানা কর্মসূচি পালন করা হবে বলে সংগঠনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।