এত নেতা, ১৫ আগস্ট কোথায় ছিলেন: প্রধানমন্ত্রী

পুণ্ড্রকথা ডেস্ক
প্রকাশ: ১৭ ডিসেম্বর ২০১৯ ১৩:২০ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ১৩৬ বার।

বিএনপি-জামায়াত জোটকে ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ৩০ লাখ শহীদের বুকের রক্ত দিয়ে এদেশ স্বাধীন হয়েছে। লাখো শহীদের সেই আত্মত্যাগ বৃথা যেতে পারে না। পাকিস্তানের পদলেহনকারী ও পাকিপ্রেমী, যারা এদেশের স্বাধীনতা ও দেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করতে চেয়েছিল, তাদের চক্রান্ত এই মাটিতে সফল হতে পারে না, হবে না। হতে দেওয়া হবে না। খবর সমকাল অনলাইন 

পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট সপরিবারে জাতির পিতাকে হত্যার ঘটনা তুলে ধরে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, এত বড় একটা ঘটনা, কিন্তু বাংলাদেশের কোনো লোক জানতে পারল না? কেউ কোনো পদক্ষেপ নিল না? সাহস করে কেউ প্রতিরোধ গড়ে তুলতেও পারলেন না? লাশ পড়ে থাকল ৩২ নম্বরে! সে কথাই এখনও ভাবি! এত বড় সংগঠন, এত নেতা, কোথায় ছিলেন তখন? মাঝে মাঝে জানতে ইচ্ছে করে, কেউ সাহসে ভর দিয়ে এগিয়ে আসতে পারলেন না? বাংলার সাধারণ মানুষ তো বঙ্গবন্ধুর সঙ্গেই ছিল।

মঙ্গলবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগের আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর আদর্শে দেশ ও মানুষের কল্যাণে নিজেদের আত্মনিয়োগ করতে দলের নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, জীবনে কী পেলাম বা পেলাম না- সেটি বড় কথা নয়। মানুষের জন্য কী করতে পারলাম- সেটাই আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের চিন্তা করতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, অর্থসম্পদ কেউ কবরে নিয়ে যেতে পারে না। কিন্তু টাকা কামানো, টাকা-পয়সা বানানো একটি রোগের মত। যত টাকা কামাই হবে, ততই চাহিদা বাড়বে। জীবনে শান্তি থাকবে না, ছেলেমেয়ে মানুষ হবে না- কিন্তু কোনো দিকে তাকানোর সময়ও যেন নেই। এই দুরারোগ্য ব্যাধি থেকে কেউ যদি মুক্ত হতে পারে আর মানুষের জন্য কিছু করতে পারে- তাহলেই দেশ উন্নত ও সমৃদ্ধ হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, পাকিস্তান থেকে আমরা আলাদা হয়েছি। সেই পাকিস্তান থেকে অর্থনৈতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক- সবদিক থেকেই বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে। আজ সত্যিই বাংলাদেশ সেই অবস্থানে চলে গেছে। পাকিস্তান থেকে সব দিক দিয়েই আমরা ভালো রয়েছি। এটাকে ধরে রাখতে হবে। নইলে পাকিপ্রেমীরা বিদেশে থাক, আর জেলখানায় থাক- তাদের চক্রান্ত অব্যাহত থাকবেই।

পঁচাত্তরের ১৫ আগষ্ট বঙ্গবন্ধুকে রক্ষা করতে না পারার জন্য দলীয় নেতাদের সমালোচনা করে তিনি বলেন, হয়তো এই ব্যর্থতার খেসারত গোটা জাতিকেই দিতে হয়েছে। কারণ বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পরই এদেশে হত্যা-ক্যু-ষড়যন্ত্রের রাজনীতি শুরু হয়েছে। এদেশে ১৯টি ক্যু হয়েছে। সে সময় (বঙ্গবন্ধুকে হত্যার সময়) কেউ সাহস করে দাঁড়াতে পারলে বাংলাদেশের মানুষের ওপর এত অত্যাচার-নির্যাতন হতো না। এতগুলো ক্যু হতো না, বাংলাদেশকে ধ্বংসযজ্ঞে পরিণত করার চক্রান্ত করতেও কেউ পারতো না।

বক্তব্যের শুরুতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন দিক এবং বাঙালির বিজয়গাঁথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ নামটাও জাতির পিতার দেওয়া। মুক্তিযুদ্ধ শুরুর আগেই হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর মৃত্যুদিবসের এক অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধু পূর্ববঙ্গকে বাংলাদেশ নামে উল্লেখ করেছিলেন।

মুক্তিযুদ্ধকালে পাকিস্তান কারাগারে বঙ্গবন্ধুর বন্দি থাকার কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, মাঝে মাঝে অবাক লাগে! সেই নয়টা মাস একাকী তিনি পাকিস্তান কারাগারে বন্দি! একটি বৈরি পরিবেশ, বৈরি আবহাওয়া। সেখানে যেমন গরম, তেমন শীত। তাকে কীভাবে রেখেছিল? কি খেতে দিয়েছিল? যাকে তারা ফাঁসি দিয়ে হত্যা করতে চেয়েছিল, তাকে তারা কত কষ্ট দিতে পারে- সেটা কল্পনাও করা যায় না। একবার চিন্তা করে দেখেন!

বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, এদেশের মানুষের স্বাধীনতা ও মুক্তির জন্য জাতির পিতা সারাজীবন ত্যাগ স্বীকার করেছেন। তার ভেতর যে আত্মবিশ্বাস ছিল, সেই আত্মবিশ্বাসই তাকে দৃঢ় করে রেখেছিল। যে কারণে এত কষ্টের পরও তিনি বেঁচে ছিলেন। এরপর আন্তর্জাতিক বিশ্বের চাপে পাকিস্তানিরা তাকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়েছিল। বঙ্গবন্ধু ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বাংলার মাটিতে ফিরে এসে পরিবারের কাছে না গিয়ে সবার আগে তার জনগণের কাছেই গিয়েছিলেন। ঐতিহাসিক ভাষণের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ রূপরেখা ঘোষণা করেছিলেন।