নওগাঁয় হানাদার মুক্ত দিবসে সাইকেল র‍্যালী

নওগাঁ (বগুড়া) প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৮ ডিসেম্বর ২০১৯ ১২:১৯ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ১৩৭ বার।

১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশের বিজয় দিবস হলেও নওগাঁ জেলা হানাদারমুক্ত হয় ১৮ ডিসেম্বর। এই হানাদার মুক্ত দিবস উপলক্ষে নো হেলমেট নো বাইক, নো মাদক এই শ্লোগানকে সামনে রেখে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ও মিডিয়া হাউজ এর উদ্যোগে পুরাতন কোর্ট চত্ত্বর আলোচনা ও বক্তব্য শেষে একটি সাইকেল র‌্যালী বের করা হয়। বুধবার সকাল ১০টায় প্রধান অতিথি হিসেবে এসময় নের্তৃত্ব দেন জেলা প্রশাসক হারুন-অর-রশীদ। 

এসময় র‌্যালিতে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মোঃ কামরুজ্জান, সাবেক জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা হারুন অল রশিদ, নওগাঁ সদর উপজেলা সাবেক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ গোলাম সামদানী সহ বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং বিভিন্ন স্কুল ও কলেজের ছাত্র/ছাত্রীরা অংগ্রহন করেন।

এদিকে সামাজিক সংগঠন নওগাঁ একুশে পরিষদ নানা কর্মসচি পালন করে। সকালে শহিদ মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতি ফলকে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে। সকাল ১০টায় প্যারীমোহন সাধারণ গ্রন্থাগার থেকে বর্ণাঢ্য আনন্দ শোভাযাত্রা বের করা হয়।

আনন্দ শোভাযাত্রা শেষে সংগঠনের সভাপতি অ্যাড. ডি. এম. আব্দুল বারীর সভাপত্তিত্বে সভায় বক্তব্য রাখেন উপদেষ্টা অধ্যাপক নূর উল হক, মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল জলিল, সিরাজুল ইসলাম,ইলিয়াস আলী খান, মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তাক, অ্যাড. মুকুল চন্দ্র কবিরাজ, প্রতাপ চন্দ্র সরকার এবং মনোয়ার হোসেন লিটন। পরে সংবর্ধিত করা হয় শহিদ পরিবাররের সদস্যদের।

উল্লেখ্য যে, সমগ্র দেশের মানুষ আনন্দে ভাসলেও নওগাঁ দু’দিন শত্রুমুক্ত হয়। ১৭ ডিসেম্বর ১৯৭১ সালে সকাল বেলা মুক্তিযোদ্ধাদের নিকট জেলার পাক-সেনারা অত্মসমর্পণ না কারর ঘোষণা দয়ে। তখন চারদিক থেকে মুক্তিযোদ্ধারা নওগাঁ শহর আক্রমণ করে। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত উভয় পক্ষে প্রচন্ড যুদ্ধ হয়। যুদ্ধ চলে শহরের খলিশাকুড়ি, ডিগ্রী কলেজ, হাট-নওগাঁসহ বিভিন্ন পাড়া মহল্লায়। এ যুদ্ধে হানাদর বাহিনী ভারী অস্ত্র ব্যবহার করে। যুদ্ধে ৫ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। নওগাঁ শহর মুক্ত করতে গিয়ে শহিদ হয়েছেন শহিদ এচাহাক আলী খান (শৈলগাছি, বাঁকাপুর), শহিদ ফরিদ হোসেন, (বদলগাছি থানার সর্মাপুর গ্রামে), শহিদ আমজাদ হোসেন (বিলাশবাড়ি), শহিদ ওসমান (বদলগাছির কোলা ইউনিয়নের কেশাইল), শহিদ শাহাদত আলী মীর (বদলগাছি থানার বিলাশবাড়ি ইউনিয়নের বলরামপুর গ্রাম)।

১৮ ডিসেম্বর সকালে বগুড়া থেকে অগ্রসরমান ভারতীয় মেজর চন্দ্রশেখর, পশ্চিম দিনাজপুর বালুরঘাট থেকে নওগাঁ অভিমুখে অগ্রসরমান পিবি রায়ের নেতৃত্বে মিত্রবাহিনী ও মুক্তিবাহিনী নওগাঁয় প্রবেশ করে। হানাদার বাহিনীর তখন আর কিছু করার ছিল না। ফলে প্রায় দুই হাজার পাক-সেনা নওগাঁ কেডি স্কুল থেকে পিএম গার্লস স্কুল ও সরকারি গার্লস স্কুল থেকে শুরু করে রাস্তার দু’পাশে মাটিতে অস্ত্র রেখে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে অবনতমস্তকে আত্মসমর্পণ করে।
তৎকালীন নওগাঁ মহকুমা প্রশাসক সৈয়দ মাগরুব মোরশেদ মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনীকে স্বাগত জানান। নওগাঁর বীর মুক্তিযোদ্ধারা বিজয় উল্লাসে “জয় বাংলা জয় বাংলা” ধ্বনি দিতে দিতে এসডিও অফিস চত্বরে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন এবং উপস্থিত বীর মুক্তিযোদ্ধারা পতাকার প্রতি সালাম জানিয়ে সম্মান প্রদর্শন করেন। সেই থেকে নওগাঁ হানাদার মুক্ত ১৮ ডিসেম্বর মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে লিপিবদ্ধ করা হয়। এ দিনটিকে ঘিরে জেলার বিভিন্ন মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন ১৮ ডিসেম্বর নওগাঁ হানাদার মুক্ত দিবস পালন করে আসে।