এবার মুক্তিযুদ্ধের গল্প শুনলো বগুড়া পুলিশ লাইন্স স্কুল অ্যান্ড কলেজের ২০০ শিক্ষার্থী

পুণ্ড্রকথা রিপোর্ট
প্রকাশ: ১২ নভেম্বর ২০১৮ ১৫:১৬ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ২৫৯ বার।

এবার মুক্তিযুদ্ধের গল্প শুনলো বগুড়া পুলিশ লাইন্স স্কুল অ্যান্ড কলেজ শিক্ষার্থীরা। সোমবার দুপুর ১২টায় বিদ্যালয়ের  মিলনায়তনে বগুড়া জেলা প্রশাসন এবং বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র বগুড়া’র যৌথ উদ্যোগে এই কর্মসূচী অনুষ্ঠিত হয়। ৭ম বারে পা রাখা  ওই আয়োজনে অন্তত ২০০ জন শিক্ষার্থীদের কাছে মুক্তিযুদ্ধের বীরত্বগাঁথা লড়াইয়ের গল্প শোনান রণাঙ্গনের বীর মুক্তিযোদ্ধারা।  সেইসঙ্গে অনুষ্ঠানে একজন মুক্তিযোদ্ধা ও একজন শহীদ সন্তানকে ফুল সহ বই উপহার দিয়ে সম্মান প্রদর্শন করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রশ্নোত্তর পর্বে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ ছিলো স্বতোস্ফূর্ত এবং ক্যুইজ পর্বে প্রশ্নের উত্তর দিয়ে শিক্ষার্থীরা অর্জন করেছে মুক্তিযুদ্ধের বই পুরস্কার।

অনুষ্ঠানের শুরুতে স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র বগুড়া’র সমন্বয়কারী এ টি এম রাশেদুল ইসলাম। অনুষ্ঠানের প্রারম্ভে ১৯৭১এ বাবা হারানোর বেদনার কথা ব্যক্ত করেন অত্র প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক এবং শহীদ সন্তান জনাব আব্দুর রহমান। তিনি তার বক্তব্যে তুলে ধরেন বাবা হারিয়ে কতোটা কষ্টে বড় হয়েছেন, কতোটা কষ্ট করে মা তাদের বড় করেছেন এবং সেইসঙ্গে শহীদ সন্তান হিসেবে স্বীকৃতি না পাবার কষ্টের কথাও।

এরপর মুক্তিযুদ্ধের গল্প শোনান- বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র বগুড়া’র উপদেষ্টা বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. আরশাদ সায়ীদ। মুক্তিযোদ্ধা তার অপারেশনের তথ্য তুলে ধরেন গল্প আকারে। তার অপারেশনের মধ্যে ছিলো বগুড়ার সাবগ্রামে রেল-লাইন মাইন বিষ্ফোরণে উড়িয়ে দিয়ে পাকস্তানী মিলিটারীর ক্ষতি সাধন করা। মুক্তিযোদ্ধা তাঁর গল্পে শোনান ১৯৭১এর বীরত্ব গাঁথার সঙ্গে মিশে থাকা আবেগ এবং জীবন বাজি রেখে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার কথা। সেই সঙ্গে কতোটা কষ্ট করে দেশ স্বাধীন করেছেন সে কথাও তাদের গল্পে উঠে এসেছে। সেইসঙ্গে ব্যক্ত করেছেন সহযোদ্ধা বন্ধুদের হারানোর গভীর মনোবেদনার কথাও। মুক্তিযোদ্ধারা তাদের বক্তব্যে শিক্ষার্থীদের প্রতি আবেদন জানিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় নিজেদের গড়ে তুলে দেশকে এগিয়ে নিয়ে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলায় রূপান্তরে যথাযথ ভূমিকা পালনের। শিক্ষার্থীরা পিনপতন নিরবতায় মুক্তিযুদ্ধের কথা শোনে।

অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ছিলেন বগুড়ার  জেলা প্রশাসক ফয়েজ আহাম্মেদ । প্রধান অতিথি তাঁর বক্তব্যে এ মহৎ আয়োজনে যুক্ত থাকতে পেরে গর্বিত অনুভব করেন এবং স্মরণ করিয়ে দেন জাতির আগামী প্রজন্মকে সঠিক পথে গড়ে তুলতে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানার বিকল্প নেই। এই স্বাধীন বাংলাদেশ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে ৩০ লক্ষাধিক শহীদ ও ৬ লক্ষাধিক মা-বোনের সম্ভ্রোমের বিনীময়ে অর্জিত। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারন করতে সকলকে সঠিক ইতিহাস জানতে হবে। বগুড়া জেলা প্রশাসন আগামীতেও সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এই অনুষ্ঠান আয়োজনে পাশে থাকবে।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বগুড়ার  পুলিশ সুপার আলী আশরাফ ভুঞা । তিনি তাঁর বক্তব্যে ১৯৭১-এ মায়ের প্রতি এক মুক্তিযোদ্ধা সন্তানের লেখা চিঠি পাঠ করে শোনান। মুক্তিযোদ্ধারা কতোটা ত্যাগ স্বীকার করে আমাদের দেশ স্বাধীন করেছেন সে কথা সবাইকে উপলব্ধি করতে আজকের মতো এমন আয়োজনকে সাধুবাদ জানান এবং সবাইকে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানার তাগিদ দেন। আগামী প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারন করতে বেশি বেশি মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস চর্চার আহ্বান জানান।

অনুষ্ঠানে সম্মানীত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রবীণ শিক্ষক এবং  বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র বগুড়ার সংগঠক শ্যামল ভট্টাচার্য্য।  তিনি তার বক্তব্যে তার প্রিয় ছাত্র শহীদ টিটুর স্মৃতিচারণ করেন। এরপর সম্মানীত অতিথি  গাজী রিয়েল এস্টেটের চেয়ারম্যান ডা. গাজী শফিকুল আলম চৌধুরী তার বক্তব্যে এমন আয়োজনে অংশ নিতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করেন এবং আগামীতেও পাশে থাকার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। অনুষ্ঠানের শেষে বগুড়া পুলিশ লাইন্স স্কুল অ্যান্ড কলেজের  অধ্যক্ষ শাহাদৎ আলম ঝুনু মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস চর্চায় তার প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগ এবং চেষ্টার কথা তুলে ধরেন। তিনি নিজেও শহীদ পরিবারের সন্তান হিসেবে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস তুলে ধরার ক্ষেত্রে আজকের মতো এমন আয়োজন বার বার এবং বড় পরিসরে আয়োজনের দাবী জানান। তিনি ধন্যবাদ জ্ঞাপনের মাধ্যমে তাঁর বক্তব্য সমাপ্ত করেন।  অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন বিদ্যালয়ের শিক্ষক আল আমিন।
অনুষ্ঠানে দেশাত্মবোধক সঙ্গীত পরিবেশন করে পুলিশ লাইন্স স্কুল অ্যান্ড কলেজ-এর শিক্ষার্থীবৃন্দ। আয়োজক কমিটির পক্ষ থেকে জানানো হয়,   ধারাবাহিক এ অনুষ্ঠান 'মুক্তিযুদ্ধের গল্প শোন' পর্যায়ক্রমে বগুড়া জেলার সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অনুষ্ঠিত হবে এবং  এ পর্যন্ত বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রায় ৩২০০জন শিক্ষার্থী অংশ নিয়েছে।