'রাষ্ট্রপতিকে গ্রমীণফোনের উকিল নোটিশ পাঠানো দুঃখজনক'

পুণ্ড্রকথা ডেস্ক
প্রকাশ: ১৯ ডিসেম্বর ২০১৯ ১৩:৫৭ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ৮৫ বার।

অডিট আপত্তির সাড়ে ১২ হাজার কোটি টাকার বিষয়ে 'সালিশে' যাওয়ার জন্য দেশের সবচেয়ে বড় মোবাইল ফোন অপারেটর গ্রামীণফোন সিঙ্গাপুরের একটি আইনী প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতিকে উকিল নোটিশ পাঠিয়েছে, এটা খুবই দুঃখজনক। অন্যদিকে অপর অপারেটর রবি আদালত থেকে মামলা তুলে নিয়ে সরকারের সঙ্গে পাওনা পরিশোধ নিয়ে আলোচনায় বসতে চেয়েছে। বৃহস্পতিবার টেলিযোগাযোগ খাতের সাংবাদিকদের সংগঠন টিআরএনবি'র (টেলিকম রিপোর্টার্স নেটওয়ার্ক, বাংলাদেশ) সঙ্গে মত বিনিময়কালে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার এসব তথ্য দেন। খবর সমকাল অনলাইন 

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, দেশের আদালত যে নির্দেশ দিয়েছে সে অনুসারেই সব ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আদালতের নির্দেশের বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই। আলাপকালে তিনি দেশে ফাইভজি প্রযুক্তি চালু, ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সুবিধা সহজীকরণ, টেলিযোগাযোগ খাতে নতুন বিদেশী বিনিয়োগ সহ সংশ্নিষ্ট বিভিন্ন প্রসঙ্গ নিয়ে খোলামেলা আলাপ করেন। আলোচনায় টিআরএনবি'র পক্ষে বক্তব্য রাখেন সংগঠনের সভাপতি মুজিব মাসুদ এবং সাধারন সম্পাদক মাজহারুল আনোয়ার খান শিপু।

অডিট আপত্তি অনুযায়ী বিটিআরসির সাড়ে ১২ হাজার কোটি টাকার পাওনা দাবির বিরুদ্ধে গ্রামীণফোন আদালতে গেলে হাইকোর্ট বিটিআরসি'র নোটিশের উপর নিষেধাজ্ঞা দেয়। পরে গত ২৪ নভেম্বর সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা বহাল রেখে গ্রামীণফোনকে অবিলম্বে দুই হাজার কোটি টাকা পরিশোধের নির্দেশ দেয়। অডিট আপত্তির পাওনা নিয়ে রবির দায়ের করা মামলাটি এখনো আদালতে বিচারধীন।

গ্রামীণফোনের উকিল নোটিসের বিষয়ে সরকার পদক্ষেপ নেবে কি-না জানতে চাইলে মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, 'গ্রামীণ ফোনের এই নোটিশের বিষয়ে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় পর্যন্ত অবহিত করা আছে। সংশ্নিষ্ট সবাই বিষয়টি জানে। এই উকিল নোটিস নিয়ে আমাদের উদ্বিগ্ন হওয়ারও কিছু নেই। কারণ দেশের আদালতে গেছে গ্রামীণফোনই। এখন আদালতের বাইরে আর্বিট্রেশন বা সালিশের কোন সুযোগ নাই। আদালত যদি হুকুম দেয় আর্বিট্রেশন করার, তাহলে তা করা যাবে। করতে পারব। বর্তমান অবস্থায় গ্রামীণফোন যতক্ষণ না আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী দুই হাজার কোটি টাকা পরিশোধ করছে, ততক্ষণ তাদের সঙ্গে কোনো আলোচনায় বসা সম্ভব না।

তিনি আরও বলেন, তারা এরকম একটি ধারণা দিয়েছে যদি আর্বিট্রেশন না হয় তাহলে আন্তর্জাতিক আদালতে যাবে। কিন্তু বাংলাদেশের আদালতে হেরে গিয়ে আন্তর্জাতিক আদালতে কিছু একটা করা যাবে আমি এটা বিশ্বাস করি না। যে দেশে বিজনেস করে সে দেশের আইন আদালত অমান্য করে দুনিয়ার কোনো জায়গায় গিয়ে অন্য বিচার পাওয়ার সম্ভাবনা নাই। আফটার অল, দিনের শেষে অংকটা সহজ, ব্যবসাটা বাংলাদেশেই করতে হবে, বাংলাদেশের আইন কানুন না মেনে আর্ন্তজাতিক আদালত বাংলাদেশে তাদের ব্যবসার সুযোগ করে দেবে না।

এ সময় মন্ত্রী গ্রামীণফোনের সেবার মানের অবস্থা 'ভয়ংকর খারাপ' উল্লেখ করে বলেন, মাত্র ৪০ মেগাহার্টজ বেতার তরঙ্গ দিয়ে তারা প্রায় সাড়ে সাত কোটি গ্রাহককে সেবা দিচ্ছে, এ অবস্থায় গুণগত মান সম্পন্ন সেবা দেওয়া সম্ভব নয়। কারণ বিশেষজ্ঞ মত অনুযায়ী সাড়ে সাত কোটি গ্রাহককে মান সম্পন্ন সেবা দিতে কমপক্ষে ১০০ মেগাহার্টজ বেতার তরঙ্গ প্রয়োজন। এ কারনে গ্রামীণফোনের গ্রাহক যেমন সবচেয়ে বেশী, তেমনি তাদের সেবার মানও সবচেয়ে খারাপ। এত বেশী কল ড্রপ হয় যেটার তুলনা করা মুশকিল। কিন্তু গ্রাহকরা ভাল কোন বিকল্প পাচ্ছে না বলে শত সমস্যা সত্বেও গ্রামীণফোন ছেড়ে যেতে পারছে না। রবির বিষয়ে তিনি বলেন, রবি এখন মামলা প্রত্যাহার করে আলোচনায় বসতে চায়। তারা যদি মামলা প্রত্যাহার করে আসে, তাহলে আলোচনায় বসতে কোন সমস্যা নাই।

দুই অপারেটরের কাছ থেকে বকেয়া পওনা আদায় জটিলতায় বিদেশী বিনিয়োগ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কি-না জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, আগের চেয়ে বরং বিদেশী বিনিয়োগের প্রস্তাব বেড়েছে। টেলিযোগাযোগ খাতে বিনিয়োগের জন্য ছয়টি দেশ থেকে প্রস্তাব এসেছে। বিনিয়োগ কোন প্রভাবই পড়ছে না। বরং এনওসি বন্ধ রাখার কারণে গ্রাহকরা কিছু অসুবিধার মধ্যে পড়ছেন, টেলিযোগাযোগ খাতে যন্ত্রপাতি সরবরাহ করা বিদেশী প্রতিষ্ঠান, সংশ্নিষ্ট দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলোও সমস্যায় পড়ছে, এ বিষয়গুলো জানি। কিন্তু জনগণের টাকা আদায় করাও বড় দায়িত্ব।

অপর প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, লাইসেন্সপ্রাপ্ত ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যক্রম পর্যালোচনা করা হচ্ছে। বিশেষ করে তাদের কারিগরী এবং আর্থিক সক্ষমতা পর্যাপ্ত কি-না তা যাচাই করা হচ্ছে। পর্যালোচনার পর পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে। তিনি আরও বলেন, লাইসেন্স প্রাপ্তদের চেয়ে অবৈধ ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা অনেক বেশী। অবৈধদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতেও বিটিআরসিকে বলা হয়েছে।

মন্ত্রী জানান, আগামী ১৫ থেকে ১৭ জানুয়ারি ঢাকায় তিন দিনের 'ডিজিটাল বাংলাদেশ' মেলা হবে। যেখানে ফাইভজি, রোবটিকস, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সহ নতুন প্রযুক্তির সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হবে।