মিয়ানমার-আসিয়ানের রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনের ফলাফল কী?

পুণ্ড্রকথা ডেস্ক
প্রকাশ: ২০ ডিসেম্বর ২০১৯ ০৬:০১ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ৭৫ বার।

গণহত্যার মুখে পালিয়ে বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফিরিয়ে নিতে রাজি করানোর জন্য মিয়ানমার ও আসিয়ানের একটি যৌথ প্রতিনিধি দল বুধ ও বৃহস্পতিবার কক্সবাজারের উখিয়ার শরণার্থী ক্যাম্প পরিদর্শন করেছে। খবর দেশ রুপান্তর অনলাইন 

এ সময় তারা রোহিঙ্গাদের সঙ্গে প্রত্যাবাসনের বিষয়ে আলোচনা করলেও ‘কোনো লাভ হয়নি’ বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে বিবিসি বাংলা।

প্রতিবেদনে বলা হয়, পুরোনো ইস্যুতেই আটকে আছে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের চেষ্টা।

মিয়ানমার এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর জোট বা আসিয়ানভুক্ত দেশগুলোর ১৫ সদস্যের একটি যৌথ প্রতিনিধি দল উখিয়া ক্যাম্পের শরণার্থীদের সঙ্গে আলোচনা করে।

প্রতিনিধি দলে নয়জন সদস্য ছিলেন মিয়ানমারের আর আসিয়ান প্রতিনিধি দলে ছিলেন ছয়জন। মিয়ানমার প্রতিনিধি দলে নেতৃত্বে দেন দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মহাপরিচালক।

গণহত্যার অভিযোগে দ্য হেগে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে মিয়ানমারের বিচার শুরু হওয়ার কয়েক দিন পরেই এই যৌথ প্রতিনিধি দল বাংলাদেশে এসে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথাবার্তা বলল।

প্রতিবেদনে বলা হয়, মিয়ানমার আসিয়ানের অন্য সদস্য দেশগুলোকে দেখাতে চায় যে তারা রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে চেষ্টা করছে।

মিয়ানমার প্রতিনিধি দল রোহিঙ্গাদের জানায়, তাদের জন্য দুটি ‘অভ্যর্থনা কেন্দ্র’ তৈরি করা হয়েছে। দেশে ফিরে গেলে তাদেরকে কিছুদিন সেখানে রাখা হবে এবং পর্যায়ক্রমে নিজেদের বাড়িতে ফিরতে দেওয়া হবে।

প্রতিনিধি দল আরও প্রস্তাব করে, এ সময় তাদের ‘ন্যাশনাল ভেরিফিকেশন কার্ড’ দেওয়া হবে অস্থায়ীভাবে। এরপর রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করতে হবে।

কিন্তু রোহিঙ্গারা এসব প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে। তারা বলেছে, মিয়ানমার আবারও সেই ‘পুরোনো খেলা’ খেলছে।

মিয়ানমারের কাছে বক্তব্য তুলে ধরা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের প্রতিনিধি মো. রফিক বলেন, সম্প্রতি জাতিসংঘের আদালতে মিয়ানমারের বিপক্ষে অভিযোগ দায়ের হয়েছে। এছাড়া আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত রোহিঙ্গা গণহত্যার তদন্ত নিয়ে তৎপর হয়েছে।

এসব বিষয় থেকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি ভিন্ন দিকে ঘোরানোর জন্যই মিয়ানমার প্রতিনিধি দল রোহিঙ্গা ক্যাম্পে এসেছে বলে তিনি মনে করেন।

এই রোহিঙ্গা প্রতিনিধি বলেন, রোহিঙ্গারা মনে করে মিয়ানমার সরকার তাদের ফিরিয়ে নিতে চায় না। সেজন্য তারা নানা ‘টালবাহানা এবং সময় ক্ষেপণের’ আশ্রয় নিয়েছে।

তিনি বলেন, ‘আমাদের বাপ-দাদা সবাই ওখানকার। আমাদের এখানে থাকতে ইচ্ছা করে না। কিন্তু নিরাপত্তা নিশ্চিত না হলে আমরা কীভাবে ফেরত যাব?’

মিয়ানমার প্রতিনিধি দলের সফর প্রসঙ্গে বাংলাদেশের শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন বিষয়ক বিষয়ক কমিশনার মাহবুব তালুকদার বলেন, রোহিঙ্গারা ফিরে যেতে রাজি এবং সে কথা তারা জানিয়েছে। তবে রোহিঙ্গারা তাদের নিরাপত্তা এবং অধিকার চায়।

তিনি বলেন, ‘তারা (মিয়ানমার দল) রোহিঙ্গাদের দাবি শুনে গেছে। এরপর দেশে ফিরে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত জানাবে। গত বছর যে আলোচনা হয়েছিল, এ সফর সেটার ধারাবাহিকতা।’

নাগরিকত্ব ও নিরাপত্তার নিশ্চয়তা না পাওয়ায় রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফিরিয়ে নেওয়ার প্রচেষ্টা এরই মধ্যে দুই দফা ব্যর্থ হয়েছে। তৃতীয় দফায় আবারও রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের চেষ্টা করছে বাংলাদেশ।

শরণার্থী বিষয়ক কমিশনার বলেন, প্রত্যাবাসনের জন্য মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশ সরকার আলোচনা অব্যাহত রেখেছে।