আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন যারা

পুণ্ড্রকথা ডেস্ক
প্রকাশ: ২০ ডিসেম্বর ২০১৯ ০৬:১৮ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ১৩৯ বার।

বাংলাদেশের অন্যতম প্রাচীন দল আওয়ামী লীগ। এ দেশের যত অর্জন, আন্দোলন-সংগ্রাম আর ইতিহাসের বাঁকে বাঁকে জড়িয়ে আছে দলটির নাম।

অসাম্প্রদায়িক আর খেটে খাওয়া মানুষের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে যুগে যুগে বহু নেতা তৈরি হয়েছেন এ দলে। তৃণমূল পর্যায় থেকে উঠে আসা এসব নেতাকে ধীরে ধীরে দল পরিচালনায় অন্তর্ভুক্ত করে সফল হয়েছে আওয়ামী লীগও। খবর যুগান্তর অনলাইন

প্রতিষ্ঠার পর থেকে এখন পর্যন্ত ২০টি জাতীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়েছে আওয়ামী লীগের। তবে এসব কাউন্সিলের মধ্য দিয়ে দলটির সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন ১০ জন।

এর মধ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও জিল্লুর রহমান চারবার করে সাধারণ সম্পাদক পদে নির্বাচিত হয়েছেন। এছাড়া তাজউদ্দীন আহমদ তিনবার, আবদুর রাজ্জাক, সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম ও সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী দু’বার করে, প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক শামসুল হক এবং আবদুল জলিল একবার করে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন।

আর বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ২০১৬ সালের ২২ অক্টোবর কাউন্সিল অধিবেশনে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।

১৯৪৯ সালের ২৩ ও ২৪ জুন পুরান ঢাকার রোজ গার্ডেনে গণতান্ত্রিক কর্মী কাউন্সিলের মাধ্যমে জন্ম নেয় পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ।

পরে ১৯৫৫ সালের তৃতীয় জাতীয় কাউন্সিলের মাধ্যমে সব ধর্ম-বর্ণের প্রতিনিধি হিসেবে দলের নাম থেকে মুসলিম শব্দটি বাদ দেয় আওয়ামী লীগ।

পাকিস্তান আমল : আতাউর রহমান খানের সভাপতিত্বে প্রথম জাতীয় কাউন্সিলে প্রতিনিধি ছিলেন প্রায় ৩০০ জন। উদ্বোধনী ভাষণ দেন মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী।

পরে প্রতিনিধিদের সমর্থনে ৪০ সদস্যের কমিটি ঘোষণা করা হয়। এ কাউন্সিলে সাধারণ সম্পাদক হন শামসুল হক।

১৯৫৩ সালের ৩ থেকে ৫ জুলাই মুকুল সিনেমা হলে অনুষ্ঠিত হয় দ্বিতীয় কাউন্সিল। এ কাউন্সিলে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন শেখ মুজিবুর রহমান।

১৯৫৫ সালের ২১ থেকে ২৩ অক্টোবর রূপমহল সিনেমা হলে তৃতীয় কাউন্সিলে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত হয় দলের। দলের নাম থেকে একটি ধর্মের নাম বাদ দিয়ে অসাম্প্রদায়িক দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ ঘটে আওয়ামী লীগের। এ কাউন্সিলে প্রথমবারের মতো পাঁচজন নারীও অংশ নেন। এ কাউন্সিলে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন শেখ মুজিবুর রহমান।

১৯৫৭ সালের ১৩ জুন আরমানিটোলার নিউ পিকচার হাউসে এবং পরদিন গুলিস্তান সিমেনা হলে অনুষ্ঠিত কাউন্সিলে প্রতিনিধি সভায় ভোটে তৃতীয়বারের মতো শেখ মুজিবুর রহমান সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।

দলের পঞ্চম জাতীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয় ১৯৬৪ সালে। ৬ থেকে ৮ মার্চ পর্যন্ত অনুষ্ঠিত এ কাউন্সিলে কাউন্সিলর ও ডেলিগেট ছিলেন প্রায় এক হাজার। এতে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে পুনরায় নির্বাচিত হন শেখ মুজিবুর রহমান।

১৯৬৬ সালের ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিলটি ছিল আওয়ামী লীগের জন্য ঐতিহাসিক একটি কাউন্সিল। এ কাউন্সিলে বঙ্গবন্ধুর ছয় দফা দলীয় ফোরামে পাস হয়।

১৮ থেকে ২০ মার্চ হোটেল ইডেনে অনুষ্ঠিত এ কাউন্সিলের মাধ্যমে দলের সভাপতি নির্বাচিত হন শেখ মুজিবুর রহমান। আর প্রথমবারের মতো সাধারণ সম্পাদক হন তাজউদ্দীন আহমদ। এতে কাউন্সিলর ও ডেলিগেটের সংখ্যা ছিল ১ হাজার ৪৪৩ জন।

১৯৬৮ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যখন আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় কারাগারে আটক তখন অনুষ্ঠিত হয় দলের সপ্তম জাতীয় কাউন্সিল। ১৯ থেকে ২০ অক্টোবর হোটেল ইডেন প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত সভায় সভাপতিত্ব করেন ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম। প্রায় ১ হাজার ৪৫৩ কাউন্সিলর ও ডেলিগেট এতে অংশ নেন। এতে তাজউদ্দীন আহমদ সাধারণ সম্পাদক পুনর্নির্বাচিত হন।

১৯৭০ সালের উত্তাল সময়ের মধ্যে অনুষ্ঠিত হয় আওয়ামী লীগের অষ্টম জাতীয় কাউন্সিল। এ কাউন্সিলের মাধ্যমে ছয় দফা ও ১১ দফা গ্রহণ করে রাজনৈতিক ও সাংগঠনিকভাবে নির্বাচনে অংশ নেয়ার প্রস্তুতি নেয়। ’৭০ সালের ৪ থেকে ৫ জুন হোটেল ইডেন প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত এ কাউন্সিলে কাউন্সিলর ছিলেন ১ হাজার ১৩৮ জন। কাউন্সিলরদের ভোটে তাজউদ্দীন আহমদ পুনরায় সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।

স্বাধীনতাপরবর্তী বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ : ১৯৭২ সালের ৭ থেকে ৮ এপ্রিল স্বাধীন বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের প্রথম এবং সব মিলিয়ে নবম জাতীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয় ১১২ সার্কিট হাউস রোডে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের পুনর্গঠন এবং পুনর্বাসনসহ মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নের জন্য শপথ নিয়ে এ কাউন্সিলটি অনুষ্ঠিত হয়। এ কাউন্সিলে জিল্লুর রহমান সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।

আওয়ামী লীগের ১০ম জাতীয় কাউন্সিল ১১২ সার্কিট হাউস রোডে দলীয় কার্যালয়ে সামনে অনুষ্ঠিত হয় ১৯৭৪ সালের ১৮ থেকে ২০ জানুয়ারি পর্যন্ত। এ কাউন্সিলে একটি সিদ্ধান্ত হয় যে প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রিসভার সদস্যরা দলের পদে থাকতে পারবেন না। এ কাউন্সিলে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন জিল্লুর রহমান।

এরপর ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্টের সেই ভয়াবহ ঘটনা। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব নিহত হন সপরিবারে। সামরিক সরকার ক্ষমতা দখল করে। ১৯৭৫-এর ৩ নভেম্বর কারাগারের ভেতরে নিহত হন আওয়ামী লীগের চার নেতা তাজউদ্দীন আহমদ, সৈয়দ নজরুল ইসলাম, এএইচএম কামরুজ্জামান এবং এম মনসুর আলী। দলটির ইতিহাসে সবচেয়ে বড় দুঃসময় এসে হাজির হয়।

এমন পরিস্থিতিতে ১৯৭৭ সালের ৩ থেকে ৪ এপ্রিল হোটেল ইডেন প্রাঙ্গণে দলের ১১তম কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। এতে কাউন্সিলর ছিলেন প্রায় ১ হাজার ৪শ’ জন এবং ডেলিগেটও সমসংখ্যক ছিলেন। এতে দলের আহ্বায়ক নির্বাচিত হন সৈয়দা জোহরা তাজউদ্দীন।

এর পরের বছর ১৯৭৮ সালে অনুষ্ঠিত হয় দলটির ১২তম জাতীয় কাউন্সিল। ৩ থেকে ৫ মার্চ হোটেল ইডেন প্রাঙ্গণে প্রায় ১ হাজার ৫শ’ কাউন্সিলর এবং সমসংখ্যক ডেলিগেট নিয়ে অনুষ্ঠিত হয় এ কাউন্সিলটি। এতে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন আবদুর রাজ্জাক।

১৯৮১ সালের ১৩তম জাতীয় কাউন্সিলের মাধ্যমে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে আসেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। দলীয় ঐক্য ধরে রাখার জন্য এ কাউন্সিলের মাধ্যমে নেতৃত্বে আনা হয় বঙ্গবন্ধুকন্যাকে। ’৮১ সালের ১৪ থেকে ১৬ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত এ কাউন্সিলে কাউন্সিলর ও ডেলিগেট ছিলেন ৩ হাজার ৮৮৪ জন।

সভায় শেখ হাসিনা সভাপতি ও আবদুর রাজ্জাক সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। পরে ১৯৮২ সালে আবদুর রাজ্জাক দলত্যাগ করলে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হন সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী। দলের নেতৃত্ব পাওয়ার পর দেশে ফেরেন বঙ্গবন্ধুকন্যা।

১৯৮৭ সালের ১ থেকে ৩ জানুয়ারি পর্যন্ত ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশনে অনুষ্ঠিত হয় আওয়ামী লীগের ১৪তম জাতীয় কাউন্সিল। এতে কাউন্সিলর ও ডেলিগেট ছিলেন প্রায় ৪ হাজার। কাউন্সিলে সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।

এরপর ১৯৯২ সালের ১৯ থেকে ২০ সেপ্টেম্বর ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশনে দলের ১৫তম জাতীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। এ কাউন্সিলে কার্যনির্বাহী কমিটির মেয়াদ ২ থেকে বাড়িয়ে ৩ বছর মেয়াদি করা হয়। এতে কাউন্সিলর ছিলেন প্রায় ২ হাজার ৫শ’ ও ডেলিগেটও ছিলেন সমসংখ্যক। এতে জিল্লুর রহমান সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।

১৯৯৭ সালের অনুষ্ঠিত ১৬তম জাতীয় কাউন্সিল আওয়ামী লীগের জন্য ছিল বেশ গুরুত্বপূর্ণ। কারণ প্রায় ২১ বছর পর ক্ষমতায় আসার পর অনুষ্ঠিত হয় জাতীয় কাউন্সিল। ৬ থেকে ৭ মে আউটার স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত কাউন্সিলে কাউন্সিলর ছিলেন ২ হাজার ৫১৬ এবং ডেলিগেটও ছিলেন সমসংখ্যক। এতে পুনরায় সাধারণ সম্পাদক হন জিল্লুর রহমান।

২০০২ সালে আওয়ামী লীগ যখন বিরোধী দলে তখন পল্টন ময়দানে অনুষ্ঠিত হয় দলের ১৭তম জাতীয় কাউন্সিল। এ কাউন্সিলে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন আবদুল জলিল।

২০০৭ সালের পটপরিবর্তনের পর ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় আসে। এরপর ২০০৯ সালের ২৪ জুলাই অনুষ্ঠিত হয় দলটির ১৮তম জাতীয় কাউন্সিল। বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক কাউন্সিল কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত কাউন্সিলে দলের নেতৃত্বে বেশকিছু পরিবর্তন হয়। দল থেকে বাদ পড়েন ‘ওয়ান-ইলেভেন’র বিতর্কিতরা।

এ কাউন্সিলে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। ২০১২ সালের ২৯ ডিসেম্বর রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুষ্ঠিত হয় দলটির ১৯তম জাতীয় কাউন্সিল। কাউন্সিলে পুনরায় সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম।

আওয়ামী লীগের সর্বশেষ কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয় ২০১৬ সালের ২১ ও ২২ অক্টোবর। দলের কাউন্সিল অধিবেশনে তখনকার সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম ওবায়দুল কাদেরের নাম প্রস্তাব করেন। এতে কণ্ঠভোটে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন তিনি। শনিবার শেষ হচ্ছে এ কমিটির মেয়াদ।