দল-আদর্শের প্রশ্নে যে কোনো ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত আ’লীগের কাউন্সিলররা

পুণ্ড্রকথা ডেস্ক
প্রকাশ: ২১ ডিসেম্বর ২০১৯ ১৩:২৭ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ৮৮ বার।

দল ও আদর্শের প্রশ্নে যে কোনো ত্যাগ স্বীকারে নিজেদের প্রস্তুতির কথা জানিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ থাকার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন দলটির কাউন্সিলরা। একই সঙ্গে তৃণমূল পর্যন্ত সংগঠনকে চাঙ্গা ও তৃণমূলের উন্নয়নকে জোরদার করার আহ্বান জানিয়েছেন তারা। শনিবার দুপুরে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউট মিলনায়তনে দলের ২১তম জাতীয় কাউন্সিলের দ্বিতীয় অধিবেশনে তারা এ সব কথা বলেন। খবর যুগান্তর অনলাইন 

সভার এই পর্ব সঞ্চালনা করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় তৃণমূল থেকে আসা কাউন্সিলরদের পক্ষে ছয় বিভাগের সাত জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের নেতা বক্তব্য রাখার সুযোগ পান।

প্রথমেই বক্তব্য রাখেন রংপুর বিভাগের ঠাকুরগাঁও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাদেক কুরাইশী, এরপর রাজশাহী বিভাগ থেকে রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মেরাজ মোল্লা, এরপর খুলনা বিভাগ থেকে খুলনা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সুজিত অধিকারী, বরিশাল বিভাগ থেকে পটুয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি কাজী আলমগীর, সিলেট বিভাগ থেকে সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মাসুদ উদ্দিন আহমেদ, চট্টগ্রাম বিভাগ থেকে কুমিল্লা উত্তর সভাপতি মোহাম্মদ রুহুল আমিন ও বান্দরবান জেলার সভাপতি ক্য শৈ হ্লা মারমা।

ঠাকুরগাঁও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাদেক কুরাইশী বলেন, বাংলাদেশকে ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ করার মিশন ও ভিশন রয়েছে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে তা বাস্তবায়ন করতে হলে আমাদের সংগঠনকে তৃণমূল পর্যন্ত শক্তিশালী করতে হবে। আমি বিশ্বাস করি– শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এই মিশন ও ভিশনকে বাস্তবায়ন করে আগামীতে বাংলাদেশ সিঙ্গাপুর-মালয়শিয়ার মতো দেশে পরিণত হবে।

তিনি আরও বলেন, শেখ হাসিনা আমাদের সবার প্রিয় নেত্রী। যাকে ভরসা করে আজকে আমরা রাজনীতি করছি, ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে তিনি আমাদের যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন; একে একে সব প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন হয়েছে। শুধু একটি প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারিনি। সেটি হল একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়। সেই বিষয়ে দ্রুত পরিকল্পনা গ্রহণ করে আমাদের উপকৃত করবেন; সেই আশা ব্যক্ত করছি।

রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মেরাজ মোল্লা বলেন, বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা আমাদের দেশের মানুষের উন্নয়নের জন্য দিন-রাত যে পরিশ্রম করে চলেছেন, আমার কিন্তু তা করতে পারছি না। এটাই সত্য কথা। যদি আমরা তার হাতকে শক্তিশালী করার জন্য এমপি থেকে কাউন্সিলর পর্যন্ত তার নির্দেশকে সক্রিয়ভাবে বাস্তবায়ন করি; তাহলে এতদিন সোনার বাংলা তৈরি হতো।

তিনি বলেন, কিন্তু আমরা সেটা করতে পারিনি। আমি আজকে আমাদের সভাপতির কাছে নেত্রীর কাছে প্রতিশ্রুতি দিয়ে যেতে চাই– রাজশাহীতে আগামীতে ভেদাভেদ ভুলে ৬টি সিটই তাকে উপহার দিতে চাই।

দল ও সরকারকে পৃথক করে তৃণমূল পর্যায় থেকে সংগঠনকে চাঙ্গা করতে হবে এমন মন্তব্য করে খুলনা জেলা অআওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সুজিত অধিকারী বলেন, দল ও সরকার যদি আলাদা না হয়– তাহলে দলও শক্তিশালী হবে না, সরকারেরও উন্নয়ন হবে না।

তিনি বলেন, আমাকে নেত্রী সংগঠনের দায়িত্ব দিয়েছেন। আমি জীবনের শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে সংগঠন গতিশীল করার জন্য যা কিছু করার সব কিছু করব। সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড তুলে ধরে তিনি আরও বলেন, এই উন্নয়ন করা শেখ হাসিনার পক্ষেই সম্ভব ছিল। অন্য কারও পক্ষে নয়। আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতায় থাকে তখন দক্ষিণাঞ্চলের উন্নয়ন হয়। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় না থাকলে দক্ষিণাঞ্চলের উন্নয়ন হয় না।

পটুয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি কাজী আলমগীর বলেন, দক্ষিণাঞ্চলের জন্য আপনি চাওয়ার আগেই সবকিছু দিয়েছেন। আমার দাবি করে আপনার কাছ থেকে কিছু নিতে পারব না। আমাদের এই অঞ্চল কয়েক বছরের মধ্যেই শক্তিশালী অর্থনৈতিক অঞ্চলে পরিণত হবে। এ সময় তার বক্তব্যে পটুয়াখালী জেলায় একটি ক্যাডেট কলেজ প্রতিষ্ঠার দাবি জানান তিনি।

তিনি আরও বলেন, ২০১৩ ও '১৪ সালে জামায়াত-শিবির যখন তাণ্ডবে, আমরা পটুয়াখালীকে হরতালমুক্ত রাখতে সক্ষম হয়েছি। এই পটুয়াখালীর মানুষ ২০০১ সালের পরে প্রথম আপনাকে নিয়ে সভা করেছিল। আপনিও দু'হাত খুলে এই অঞ্চলের মানুষের জন্য উন্নয়ন করেছেন। এর জন্য আমি সবার পক্ষ থেকে কৃতজ্ঞতা জানাই।

সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মাসুদ উদ্দিন আহমেদ বলেন, দেশ স্বাধীন হওয়ার পরে মাত্র সাড়ে তিন বছর বঙ্গবন্ধু ক্ষমতায় ছিলেন। এই সময়ে তিনি বাংলাদেশকে যখন উন্নয়নশীল দেশে নেয়ার কাজ শুরু করেছিলেন; তখন ঘাতকরা ষড়যন্ত্র করে আমাদের কাছ থেকে তাকে নিয়ে যায়। আমরা অভিভাবকহীন হয়ে পরি। পরবর্তী সময়ে যখন নেত্রী আসলেন, দেশে পা রাখলেন। আওয়ামী লীগের দায়িত্ব নিলেন এবং আওয়ামী লীগকে পুনর্গঠন করলেন। তখন থেকেই এখন পর্যন্ত আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে আছি। নেত্রীর কথা ছাড়া চুল পরিমাণ বাইরে যাইনি।

তিনি আরও বলেন, আমাদের মধ্যে সুকৌশলে অনুপ্রবেশকারীরা ঢুকে গেছে। আমাদের ঐতিহ্য ও নীতি সেটা থেকে বিচ্যুৎ করার পাঁয়তারা করছে। আমরা যারা তাদের সহযোগিতা করি, তাদের বিষয়েও সতর্ক থাকতে হবে। প্রয়োজনে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিতে হবে।

আওয়ামী লীগের এই নেতা বলেন, সিলেটের ব্যাপারে কোনো কিছু আমাদের চাইতে হয় না। তিনি আমাদের জন্য সবকিছুই করে দেন। আমরা শুধু চাই আল্লাহ আপনাকে বাঁচিয়ে রাখুন।

কুমিল্লা উত্তরের সভাপতি মোহাম্মদ রুহুল আমিন বলেন, কুমিল্লা উত্তর জেলায় যারা বসবাস করেন, যারা এমপি-মন্ত্রী আছেন সবাইকে অনুরোধ করব– আপনারা আমাকে সহযোগিতা করবেন। আমি সংগঠনকে ভালোবাসি। আমি সংগঠনকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই। আমাদের দলের সাধারণ সম্পাদক যে কথাটা বলেন– সংগঠনকে ভালোবাসলেই আওয়ামী লীগ বাঁচবে। সংগঠনকে ভালোবাসলেই দেশ বাঁচবে। সংগঠনকে ভালোবাসলেই শেখ হাসিনাকে বাঁচাতে পারব।

এ সময় কুমিল্লা উত্তর জেলাকে একটি প্রশাসনিক জেলা হিসেবে রূপান্তরের দাবি জানান। ‘শোন একটি মুজিবরের থেকে লক্ষ্য মুজিবরের কণ্ঠ স্বরের ধ্বনি প্রতিধ্বনী আকাশে-বাতাসে’ গানটির প্রথম চার লাইন গেয়ে নিজের বক্তব্য শেষ করে আওয়ামী লীগের এই নেতা।

বান্দরবান জেলার সভাপতি ক্য শৈ হ্লা মারমা বলেন, নেত্রী আপনি পার্বত্য জেলার অনেক উন্নয়ন করেছেন। নিজেও দুর্গম এলাকায় গিয়েছেন। উন্নয়নের কথা বলে শেষ হবে না। আমরা না চাইতেই আপনি সবকিছু দিয়েছেন। আমরা বান্দরবানবাসী আপনার কাছে কৃতজ্ঞ।

তিনি আরও বলেন, এখানে ১১টি জাতির বসবাস। বিভিন্ন ভাষা ও সংস্কৃতি রক্ষা করার জন্য আপনি পদক্ষেপ নিয়েছেন। এই ১১ জাতি সম্প্রীতির সঙ্গে এখানে বসবাস করছে। এ সময় দেশে একটি কারাতে কমপ্রেক্স করার দাবি জানান তিনি।