ফেল করা ছাত্রী মার্কশিট তুলে দেখলেন ‘এ মাইনাস’
পুণ্ড্রকথা ডেস্ক
বরিশাল মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের উচ্চ মাধ্যমিকের প্রকাশ করা ফলাফলে ফেল করেছিলেন শিক্ষার্থী তাহিরা খানম। নতুনভাবে ফরম পূরণের সময় মার্কশিট তুলতে গিয়ে হতবাক তিনি। রীতিমতো জিপিএ-৩.৮৩ পেয়ে পাস করেছেন তিনি।
কার ভুলে এক বছর পিছিয়ে গেলেন সেটা জানতে চান তাহিরা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ১৭ জুলাই প্রকাশিত এইচএসসি’র ফলাফলে বরগুনা সরকারি কলেজের বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রী তাহিরা খানম ফেল করলেও পরের (২০২০ সাল) বছরের জন্য ফরম পূরণের পর তাহিরা জানতে পারেন তিনি কোনো বিষয়েই অকৃতকার্য হননি। এমনকি মোট ফলাফলেও ফেল করেননি। তিনি পেয়েছেন জিপিএ-৩.৮৩ (এ-)।
বরগুনা জেলার পাথরঘাটা তাছলিমা মেমেরিয়াল একাডেমি থেকে এসএসসিতে বিজ্ঞান বিভাগে ৪.৮২ পেয়ে বরগুনা সরকারি কলেজে বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হন তাহিরা খানম।
গত এপ্রিলে অনুষ্ঠিত এইচএসসি পরীক্ষা দেন তিনি। আশা ছিল ভালো ফলাফল করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হবেন। সে লক্ষ্যে পরীক্ষার পরপরই ঢাকায় বাসা ভাড়া করে প্রায় ৩ মাস বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি কোচিং করেন তিনি। ফল প্রকাশের দিন সরকারি মুঠোফোন অপারেটর কোম্পানি টেলিটকে খুদে বার্তা পাঠিয়ে তাহিরা জানতে পারেন তিনি অকৃতকার্য হয়েছেন। ওই বার্তা দেখে হতবাক হয়ে পড়েন তাহিরা।
তাহিরার বড় ভাই ফেরদৌস খান ইমন জানান, এক বিষয়ে ফেল করলেও উত্তরপত্র পুনর্মূল্যায়নের আবেদন করতেন তারা। কিন্তু ৩ বিষয়ে ফেল দেখে তারা আর উত্তরপত্র পুনর্মূল্যায়নে আগ্রহ দেখাননি। কিন্তু অদম্য বোন কোনোভাবেই তার অকৃতকার্য হওয়ার বিষয়টি মেনে নিতে পারেননি। তিনি আবারও এইচএসসি পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে থাকেন।
গত ১৭ ডিসেম্বর আবারও ফরম পূরণ করেন তিনি। কৌতূহল মেটাতে ওই দিনই কলেজ থেকে ২০১৯ সালের এইচএসসির নম্বর ফর্দ (ট্রান্সক্রিপ্ট) উত্তোলন করেন তাহিরা। দেখেন তিনি কোনো বিষয়েই অকৃতকার্য হননি। জিপিএ-৩.৮৩ (এ-) পেয়েছেন।
এ বিষয়ে জানতে গত ২২ ডিসেম্বর বরিশাল শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানের কাছে গিয়ে তাহিরার ভাই ইমন তার বোনের ফল ফের পরখ করার অনুরোধ করেন।
চেয়ারম্যান তার রোল নম্বর নিয়ে তার নিজের মুঠোফোনে সার্চিং দিয়ে তাহিরা ফেল করেছেন বলে জানান।
এ সময় তাহিরার ভাই ইমন বোর্ডের ট্রান্সক্রিপ্টে পাশের প্রমাণ দেখালে চেয়ারম্যান বোর্ডের সিস্টেম অ্যানালিস্টকে ডেকে পাঠান। তিনি নিজেদের কিছু ভুলত্রুটির কথা জানান চেয়ারম্যানকে। এ সময় চেয়ারম্যান পরবর্তী ১৫ দিনের মধ্যে ভুল সংশোধন করে দেওয়া হয়েছে বলে ইমনকে জানান। তিনি ওই ভুলের দায় টেলিটকের ওপর চাপানোর চেষ্টা করেন।
তাহিরার মা সেলিনা খানম বলেন, তাহিরা সবগুলো পরীক্ষা ভালো হয়েছিল। কোনভাবেই ফেল করার কথা ছিল না। কিন্তু ফল দেখে তিনিসহ পুরো পরিবার খুবই হতাশ হন। কর্তৃপক্ষের ভুলে তার মেয়ের জীবন থেকে হারিয়ে গেছে একটি বছর। এই অপূরণীয় ক্ষতির জন্য যারা দায়ী তাদের কঠোর শাস্তি চান তাহিরার মা।
বরগুনা সরকারি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ প্রফেসর আবদুস সালাম বলেন, ফল প্রকাশের সময় তাহিরাকে ফেল দেখেছি। এখন দেখছি পাস। এটা বোর্ডের বিষয়। বোর্ডের বিরুদ্ধে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি তিনি।
বরিশাল শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক প্রফেসর মো. আনোয়ারুল আজিম বলেন, টেকনিক্যাল মিসটেক হতেই পারে। ফল ঘোষণার ১৫ দিন পর ফের ফল সংশোধন করে দেওয়া হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষার্থী আবেদন করলে যাচাই-বাছাই করে সংশোধনী অনলাইনে দেওয়া হবে বলে তিনি জানান।
এ ব্যাপারে বরিশাল শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর মো. ইউনুস বলেন, এই শিক্ষার্থী অন্য জায়গা থেকে ট্রান্সফার হয়ে এসেছে। এ জন্য কিছু তথ্য বিভ্রাট হয়েছে। টেলিটকের প্রকাশিত ফলে ভুল ছিল। পরে সংশোধন করে রেজাল্ট দেওয়া হয়।