জাতীয় পার্টির প্রতি কৃতজ্ঞতা ওবায়দুল কাদেরের

পুণ্ড্রকথা ডেস্ক
প্রকাশ: ২৮ ডিসেম্বর ২০১৯ ১০:৫৮ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ৮০ বার।

জাতীয় পার্টির প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ১৯৯৬ সাল থেকে জাতীয় পর্টির সঙ্গে আওয়ামী লীগের মিত্রতা শুরু হয়। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সেদিন আমাদের রাষ্ট্র ক্ষমতায় যেতে জাতীয় পার্টির একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল।

শনিবার দুপুরে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন প্রাঙ্গনে জাতীয় পার্টির নবম সম্মেলনে আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত হয়ে তিনি এসব কথা বলেন।

তিনি আরও বলেন, ওই সময় আমাদের সরকার গঠন করার জন্য কিছু আসন কম ছিল। জেলে বসেও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান আমাদের সমর্থন দিয়েছিলেন। আমরা সরকার গঠন করতে পেরেছিলাম। ৯৬ সালে জাতীয় পার্টির অবদানের কথা আমরা ভুলিনি। আমি জাতীয় পার্টির কাছে কৃতজ্ঞ।

‘জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান বাংলাদেশে পল্লীবন্ধু নামে খ্যাত এরশাদ। তিনি আমাকে ব্যক্তিগতভাবে ছোট ভাইয়ের মতো স্নেহ করতেন, ভালোবাসতেন। তিনি একজন বিনয়ী রাজনৈতিক ছিলেন। জাতীয় পার্টি এবং এইচএম এরশাদ একই বৃত্তে দুটি ফুলের মতো।’

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, এরশাদ বেঁচে থাকলে আজ পরিবেশ আরও ভিন্নমাত্রা পেতো। আজ জাতীয় পার্টির জাতীয় সম্মেলনে তার স্মৃতি বারবার মনে পড়ছে।

তিনি বলেন, জাতীয় পার্টি বিরোধী দলে আসার পর সংসদের কার্যক্রমে নতুন মাত্রা এসেছে। তারা সংসদের ভেতরে ও বাইরে কখনও ভায়োলেন্সের রাজনীতি করেনি। সংসদে জাতীয় পার্টি দায়িত্বশীল, গঠনমূলক বিরোধী দলের ভূমিকা পালন করেছে।

‘গণতন্ত্রে সরকারি দল একা শক্তিশালী হলে হবে না। গণতন্ত্রকে অর্থবহ করতে হলে শক্তিশালী বিরোধী দল প্রয়োজন। জাতীয় পার্টি এ ভূমিকাটি যথাযথভাবে এ পর্যন্ত পালন করে আসছে।’

এদিকে মানুষ এখনও স্বাধীনতার সুফল ভোগ করতে পারছে না উল্লেখ করে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও বিরোধীদলীয় উপনেতা জিএম কাদের বলেছেন, পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের অসমাপ্ত কাজ বাস্তবায়নের প্রয়াসই হবে এই সম্মেলনের অঙ্গীকার।

শনিবার সকালে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (আইইবি) মিলনায়তনে দলটির নবম জাতীয় সম্মেলনে সভাপতির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।

জিএম কাদের বলেন, ৯ বছরের সফল রাষ্ট্রনায়ক পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ব্যতীত সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। কেবল এই সম্মেলনেই এই শূন্যতা বিরাজ করছে না, গোটা দেশ তা অনুভব করছে।

তার মতে, দলের প্রতিটি নেতাকর্মী-সমর্থক এই সম্মেলনে উপস্থিত হয়েছেন পল্লীবন্ধুর শূন্যতা বুকের গভীরে ধারণ করে।

‘আমরা স্বাধীনতার ৪৮ বছর পার করে এসেছি। এখনও স্বাধীনতার সুফল মানুষ ভোগ করতে পারছে না। সর্বাত্মক অর্থনৈতিক মুক্তি আসেনি, সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়নি।’

তিনি বলেন, সন্ত্রাস, দুর্নীতি ও মাদক সমাজ জীবনকে বিপর্যস্ত করে তুলেছে। সাধারণ মানুষের মৌলিক অধিকার পূরণে এখনো অনেক ঘাটতি রয়েছে।

এই জাপা নেতার মতে, বেকারত্ব যুবসমাজকে হতাশাগ্রস্ত করে রেখেছে। রাজনৈতিক ক্ষেত্রে বিরাজ করছে শূন্যতা। সহমর্মিতা ও সহনশীলতার রাজনৈতিক প্রবণতা ক্রমান্বয়ে সংকীর্ণ হয়ে যাচ্ছে।

‘স্বাধীনতা সংগ্রামের অন্যতম মূলমন্ত্র ছিল বৈষম্যহীন ন্যায়বিচারভিত্তিক সমাজ ব্যবস্থা গড়া। সেই লক্ষ্যের পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নই এখন আমাদের রাজনীতি, আমাদের সংগ্রাম, আমাদের যুদ্ধ।’

সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন দলের মহাসচিব ও সংসদ সদস্য (এমপি) মশিউর রহমান রাঁঙ্গা, ঢাকা জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি ও সাবেক মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম এমপি, প্রেসিডিয়াম সদস্য জিয়াউদ্দিন বাবলু, কাজী ফিরোজ রশীদ এমপি, সাবেক মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদার, আবু হোসেন বাবলা এমপি, প্রেসিডিয়াম সদস্য ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ প্রমুখ।

জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের মৃত্যুর পর এবারই প্রথম দলটির কাউন্সিল হচ্ছে। এর আগে ৮টি কাউন্সিলই হয়েছে এরশাদের জীবদ্দশায় এবং তার উপস্থিতিতে।

সর্বশেষ ২০১৬ সালের ১৪ মে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জাতীয় পার্টির সর্বশেষ কাউন্সিল হয়। এতে দলটির প্রায় ৫০ হাজার কাউন্সিলর ও ডেলিগেটসহ লক্ষাধিক প্রতিনিধি যোগ দেন।

জাতীয় পার্টির গঠনতন্ত্রে তিন বছর পরপর কাউন্সিল করার বিধান থাকলেও পার্টির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের মৃত্যুর কারণে ২৮ ডিসেম্বর নবম কাউন্সিলের তারিখ নির্ধারণ করা হয়।

এদিকে কাউন্সিল ঘিরে জমজমাট এখন জাতীয় পার্টির প্রধান দুটি কার্যালয়। বনানীর পার্টি চেয়ারম্যানের কার্যালয়ের পাশাপাশি কাকরাইলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এখন নেতাকর্মীদের পদচারণায় মুখরিত।