বিমানবন্দরে নিয়ম না মানা ভিআইপিদের কঠোর বার্তা প্রধানমন্ত্রীর

পুণ্ড্রকথা ডেস্ক
প্রকাশ: ২৮ ডিসেম্বর ২০১৯ ১১:০৯ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ৯৫ বার।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিমান পরিবহনের ক্ষেত্রে নিরাপত্তার ওপর গুরুত্বারোপ করে ভিআইপি এবং ভিভিআইপিসহ সব যাত্রীকে বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা মেনে চলার কঠোর নির্দেশনা প্রদান করেছেন।

তিনি বলেন, ‘যদি কেউ এ ক্ষেত্রে বাধা দেন তাহলে ভবিষ্যতে তার বিমান চড়াই বন্ধ হয়ে যাবে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘নিরাপত্তার যে নিয়মাবলি রয়েছে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে, আমাদের সব যাত্রীকে সেটা মেনে নিতে হবে।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শনিবার সকালে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ভিভিআইপি লাউঞ্জের তৃতীয় টার্মিনাল উদ্বোধনকালে প্রধান অতিথির ভাষণে এসব বলেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ দিন বিমানবন্দরের যাত্রী পরিবহন এবং মালপত্র আনা-নেয়ার সক্ষমতা বৃদ্ধিতে ২১ হাজার তিন শ কোটি টাকা ব্যয়ে বহুল প্রতীক্ষিত হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ৩য় টার্মিনালের নির্মাণকাজ উদ্বোধন করেন।

প্রধানমন্ত্রী বিমানের পঞ্চম ও ষষ্ঠ ড্রিমলাইনার ‘সোনার তরী’ এবং ‘অচিন পাখি’ এবং বিশ্বের সব স্থান থেকে বিমানের টিকিট ক্রয়ের সুবিধা সংবলিত একটি মোবাইল অ্যাপসও উদ্বোধন করেন।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘এখানে আমি স্পষ্ট বলতে চাই, এখানে আমাদের সংসদ সদস্য মন্ত্রী, বাহিনী প্রধান বা অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও রয়েছেন। আপনারা যখন বিদেশে যান তখন যেভাবে নিরাপত্তাটা নিশ্চিত করা হয়, ঠিক সেভাবে আমাদের বিমানবন্দরে করতে হবে এবং সেটা সবাইকে মেনে নিতে হবে। সেখানে কেউ কোনো বাধা দিতে পারবেন না।’

তিনি বলেন, ‘একটা কথা মনে রাখবেন, সারা দিন আমি দেশের কাজই করি। কোথায় টুকটাক কী হয় না হয় সে খবরটা নেয়ার চেষ্টা করি। কাজেই কেউ সেখানে কোনো রকম অনিয়ম বা ব্যত্যয় ঘটালে সঙ্গে সঙ্গেই আমার কাছে খবরটা চলে আসে। এটা সবাইকে মনে রাখতে হবে এবং সে অনুয়ায়ী নজরদারিটা বাড়াতে হবে।’

বেসামরিক বিমান পরিবহন এবং পর্যটন প্রতিমন্ত্রী এম মাহবুব আলী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন।

অনুষ্ঠানে বেসামরিক বিমান পরিবহন এবং পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মহিবুল হক, বাংলাদেশে জাপানের রাষ্ট্রদূত নাওকি ইতো ও জাইকার বাংলাদেশ অফিসের চিফ রিপ্রেজেনটেটিভ হিতোসি হিরোকা বক্তৃতা করেন। সিভিল অ্যাভিয়েশনের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মফিদুর রহমান স্বাগত ভাষণ দেন এবং বিমানের সিইও মুকাব্বির হোসেন মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন।

মন্ত্রিপরিষদ সদস্য, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা, সংসদ সদস্য, তিনবাহিনী প্রধান, সরকারের উচ্চ পদস্থ সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তা, বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত এবং বিদেশি কূটনীতিক, উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার সদস্যসহ আমন্ত্রিত অতিথি অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী ভাষণে সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, দুর্নীতি এবং মাদকের বিরুদ্ধে তার সরকারের জিরো টলারেন্স নীতির পুনরুল্লেখ করে বলেন, ‘আজকে আমরা সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, মাদক এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান চালাচ্ছি। যেই দুর্নীতি করবে তাকে কিন্তু ছাড়া হবে না। সে যেই হোক না কেন।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, দিন-রাত পরিশ্রম করব দেশের উন্নয়নের জন্য, আমাদের দেশের সাধারণ মানুষ মাথার ঘাম পায়ে ফেলে অর্থ উপার্জন করবে আর দেশের উন্নয়নের কাজ সঠিক ভাবে হবে না। সেখান থেকে কেউ অসাধু উপায়ে নিজের ভাগ্য গড়তে যাবে। সেটা কখনো সম্ভব হবে না। এটা আমরা কখনো বরদাশত করব না।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশকে সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, দুর্নীতি এবং মাদকমুক্ত করে গড়ে তুলতে চাই।’

তিনি সময়মতো ৩য় টার্মিনালের কাজ শেষ করারও তাগিদ দেন।

’৯৬ সালে সরকার গঠনের পরই বিমানের আধুনিকায়ন এবং সম্প্রসারণে তার সরকারের উদ্যোগ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন,‘অনেকগুলো বেসরকারি সংস্থা এখন বিমান চালাচ্ছে, হেলিকপ্টারকেও বেসরকারি খাতে আওয়ামী লীগ সরকার সুযোগ করে দিয়েছে। পাশাপাশি আমরা চাই বিমানেরও নিজস্ব ব্যবস্থা থাকতে হবে।’

তিনি বলেন, যাত্রীসেবা নিশ্চিত করতে হলে একদম বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেওয়া উচিত নয়,তাহলে সকালে এক রকম বিকেলে অন্য রকম তারা করতে পারে।

আরো তিনটি বিমান আমাদের দেশের অভ্যন্তরীণ রুটের জন্য আসছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘কানাডা থেকে নিয়ে আসা ওই তিন বিমানের সঙ্গে আরো কিছু বিমান যুক্ত করা হবে যাতে দেশের সব বিমানবন্দরে যাত্রী সেবা বৃদ্ধি করা সম্ভব হয়।’

কক্সবাজার বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করার পরিকল্পনা সরকারের রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, যাতে প্রাচ্য থেকে পাশ্চাত্যে এবং পাশ্চাত্য থেকে প্রাচ্যে যত বিমান যাতায়াত করে তাদের একটা ‘হাব’ হতে পারে কক্সবাজার। সেখানে রিফ্যুয়েলিংসহ কয়েক দিন যাতে কেউ প্রয়োজনে বিশ্রাম নিতে পারে। পর্যটন ছাড়াও আরো অনেকভাবে এই কক্সবাজারকে যেন ব্যবহার করতে পারি।

তিনি বলেন,এর নির্মাণকাজ শুরু হয়েছে।

ড্রিম লাইনার দুটি নিজস্ব অর্থে এবং রিজার্ভের টাকাতেই ক্রয় করা হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘অর্থাৎ এগুলো ক্রয় করার মতো সক্ষমতা আমরা অর্জন করেছি।’

তিনি বলেন, বিমানে অনেক সমস্যা ছিল। এগুলো ধীরে ধীরে খুঁজে বের করতে হয়েছে এবং সমাধান করা হয়েছে।

বিমানের নিজস্ব কার্গো বিমান না থাকার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘কাজেই কার্গো বিমান আমাদের প্রয়োজন। ওই ৩য় টার্মিনালের সঙ্গে অত্যাধুনিক কার্গো ভিলেজ নির্মাণ করা হবে। যাতে আমাদের মালামাল প্রেরণ বা আমদানি-রপ্তানি ব্যবসার সুবিধা হয় এবং এগুলো আধুনিক প্রযুক্তি সম্পন্ন হবে।’

তিনি বলেন, ‘ভবিষ্যতে কার্গো ভিলেজের সঙ্গে আমরা দুটি কার্গো বিমানও ক্রয় করব। কারণ কার্গো বিমান ছাড়া বিমান লাভজনক হবে না।’

এ সময় তিনি বিমানের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দিকে গুরুত্বারোপ করে বিমানবন্দরে বিদেশিসহ প্রবাস ফেরত বাংলাদেশিদের আগমনের সময়কার নানা হয়রানি বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণেও সংশ্লিষ্ট মহলকে নির্দেশনা প্রদান করেন।

প্রধানমন্ত্রী বিমান নিয়ে অতীতের নানা সমস্যার প্রসঙ্গ টেনে বলেন,‘সিট খালি অথচ টিকিট নাই বা এ রকম বহু কিছু হতো।’

বিমানে চোরাচালানের প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি এক সময় ‘বিমানকে স্বর্ণ প্রসবা’ আখ্যায়িত করেও এর অতীত স্মরণ করিয়ে দিয়ে এগুলোও বন্ধ করার নির্দেশ দেন। যাতে করে বিমানের সেবা আন্তর্জাতিকভাবে বৃদ্ধি পায়।

শেখ হাসিনা বলেন, ইতিমধ্যে আমরা বিমানের যাত্রীসেবা আরো অন্যান্য দেশে বাড়ানোর চেষ্টা করছি। আমরা সে ক্ষেত্রে অন্যান্য এয়ারলাইনসের সঙ্গে কোর্ট শেয়ারিংয়ের মধ্যমে অনেকগুলো গন্তব্যে আমাদের যাত্রী পাঠাতে পারি। সেটাও আমরা ভবিষ্যতে করব।

শুধু বিমান ক্রয় নয়, এটা যেন যথাযথভাবে চলে এবং বিমানের যাত্রীসেবা বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে যাত্রীদের ও তিনি যত্নবান হওয়ার আহ্বান জানান।

তিনি বলেন,‘যাত্রীদেরও মনে রাখতে হবে যে বিমানটা আমাদের নিজেদের, নিজস্ব অর্থে কেনা কাজেই তারই রক্ষণাবেক্ষণে সবাইকে বিশেষভাবে দৃষ্টি দিতে হবে।’

প্রধানমন্ত্রী ৩য় টার্মিনাল নির্মাণ হলে দেশের বিমানের যাত্রী পরিবহন পরিসর আরো বৃদ্ধি পাবে উল্লেখ করে একে আমাদের ‘অর্থনৈতিক স্বাবলম্বিতা অর্জনের একটি সূচক’ হিসেবেও আখ্যায়িত করেন।

খবর: বাসস।