টনক নড়েছে প্রশাসনের

বগুড়ায় আন্দোলনের মুখে সরকার নির্ধারিত ফি আদায়ে স্কুলগুলোতে চিঠি যাচ্ছে

স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশ: ২৯ ডিসেম্বর ২০১৯ ১২:০৭ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ১০৩৯ বার।

ভর্তি ও সেশন ফি’র নামে অতিরিক্ত অর্থগ্রহণ বন্ধে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা বাস্তবায়নের দাবিতে বগুড়ায় অভিভাবক, বাম ঘরানার কয়েকটি ছাত্র ও যুব সংগঠন এবং সামাজিক সংগঠনের নেতা-কর্মীদের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে টনক নড়েছে স্থানীয় প্রশাসনের। রোববার দুপুরে আন্দোলনকারীদের কাছ থেকে স্মারকলিপি গ্রহণ করে জেলা প্রশাসক ফয়েজ আহাম্মদ জানিয়েছেন নির্ধারিত ফি গ্রহণের বিষয়ে যেহেতু আদালতের নির্দেশনা রয়েছে তাই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে এ ব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য চিঠি দেওয়া হচ্ছে। আন্দোলনকারীরা জেলা প্রশাসকের বক্তব্যে আশ্বস্ত হয়েছেন। তবে তারা বলেছেন এরপরেও যদি কোন প্রতিষ্ঠান আদালতের আদেশ অমান্য করে তবে তারা পরবর্তীতে কঠোর কর্মসূচী গ্রহণ করবেন।

অভিভাবক ও বাম ঘরানার কয়েকটি ছাত্র এবং যুব সংগঠনের পক্ষ থেকে পৃথকভাবে রোববার দুপুরে মিছিলসহ জেলা প্রশাসকের দপ্তরে স্মারকলিপি প্রদান করা হয়। সাধারণ অভিভাবকদের পক্ষে রোববার দুপুর ১টার দিকে মিছিলসহ জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি দেন বগুড়া জেলা ট্রাক মালিক সমিতির সভাপতি ও আওয়ামী লীগের পৌর কমিটির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল মান্নান আকন্দ। স্মারকলিপি প্রদানের পূর্বে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করা হয়। 

দুপুর ১২টার দিকে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট, জাসদ ছাত্রলীগ, ছাত্র মৈত্রী, যুব ইউনিয়ন, জাতীয় যুব জোট, যুব মৈত্রী, উদীচী শিল্পী গোষ্ঠী ও সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) স্থানীয় নেতৃবৃন্দ একই দাবিতে শহরের জিরো পয়েন্ট থেকে মিছিল বের করেন। পরে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে বটতলায় সমাবেশের মাধ্যমে স্মারকলিপি প্রদান করা হয়। 
শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষার্থীদের ভর্তি এবং সেশন ফি নির্ধারণ করে প্রায় এক বছর আগে ২০১৮ সালের ১৩ নভেম্বর একটি নীতিমালা প্রণয়ন করে। তাতে রাজধানী ঢাকা, ঢাকার বাইরে অন্য মেট্রোপলিটন শহর, জেলা শহর এবং উপজেলা এলাকায় এমপিওভুক্ত ও আংশিক এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর আবেদন ফরম, ভর্তি ফি ও সেশন ফি নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। তাতে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তির আবেদন ফি নির্ধারণ করা হয়েছে ২০০ টাকা। এছাড়া জেলা সদরে সেশনসহ ভর্তি ফি সর্বোচ্চ ২ হাজার টাকা এবং উপজেলা পর্যায়ে তা এক হাজার টাকা গ্রহণ করতে বলা হয়েছে।
তবে বগুড়ায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো মন্ত্রণালয়ের ওই নীতিমালা লংঘন করে ভর্তি ও সেশন ফি’র নামে অতিরিক্ত অর্থ আদায় অব্যাহত রাখে। এর বিরুদ্ধে বগুড়া জেলা ট্রাক মালিক সমিতির সভাপতি আব্দুল মান্নান আকন্দ চলতি বছরের মাঝামাঝি হাইকোর্টে রিট করেন। তাতে অভিযোগ করা হয়, বগুড়ার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো সরকারি নীতিমালা লংঘন করে ভর্তি ও সেশন ফি’র নামে দুই থেকে ৭গুণ বেশি অর্থ আদায় করছে। রিটে শিক্ষা মন্ত্রণালয় নির্ধারিত সেশন ফি’র নামে অতিরিক্ত অর্থ আদায় বন্ধ এবং ইতিপূর্বে আদায় করা অর্থ ফেরত প্রদানের নির্দেশনা চাওয়া হয়। 
শুনানী শেষে বিচারপতি জেবিএম হাসান এবং মোঃ খায়রুল আলমের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ গত ১৭ ডিসেম্বর এক আদেশে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্ধারণ করে দেওয়া ফি’র বাইরে অতিরিক্ত অর্থ আদায়ে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন। এমনকি ইতিপূর্বে আদায় করা অতিরিক্ত ফি ফেরত দেওয়ারও নির্দেশ দিয়েছেন। আদালতের ওই আদেশের পর আব্দুল মান্নান আকন্দ গত ২৪ ডিসেম্বর বগুড়া প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলন করে দ্রুত আদালতের আদেশ বাস্তবায়নের দাবি জানান। অন্যথায় অভিভাবকদের নিয়ে আন্দোলনে নামার হুমকি দেন তিনি। এরপর বাম ঘরানার কয়েকটি ছাত্র ও যুব সংগঠনের নেতা-কর্মীরা আদালতের নির্দেশনা বাস্তবায়নের দাবিতে গত ২৬ ডিসেম্বর শহরের একাধিক স্থানে সমাবেশ করে এবং দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা করেন।
পূর্বঘোষিত রোববার দুপুরে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে স্মারকলিপি প্রদানের আগে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তৃতা করেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) বগুড়া জেলা কমিটির সম্পাদক আমিনুল ফরিদ, উদীচী শিল্পী গোষ্ঠী বগুড়া জেলা সংসদের সভাপতি মাহমুদুস সোবহান মিন্নু, সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন ইসলাম তুহিন, যুব ইউনিয়ন বগুড়া জেলা কমিটির সভাপতি সাজেদুর রহমান ঝিলম, জাতীয় যুব জোটের জেলা কমিটির সভাপতি ওবায়দুল হক, যুব মৈত্রীর জেলা কমিটির সভাপতি তাইজুল ইসলাম রোম, ছাত্র ইউনিয়ন বগুড়া জেলা সংসদের সভাপতি নাদিম মাহমুদ, জাসদ ছাত্রলীগের বগুড়া জেলা কমিটির সভাপতি ওমর ফারুক ও ছাত্র মৈত্রী বগুড়া জেলা কমিটির সভাপতি মহিদুল ইসলাম সোহেল।