নওগাঁয় গ্রাম্য চিকিৎসকের অবহেলায় নবজাতকের মৃত্যু

নওগাঁ প্রতিনিধি
প্রকাশ: ৩০ ডিসেম্বর ২০১৯ ১১:১৫ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ১৪৪ বার।

নওগাঁর রাণীনগর উপজেলার একডালা ইউনিয়নের বড়চাপড়া গ্রামে গ্রাম্য চিকিৎসকের অবহেলায় ওই গ্রামের ফয়াজ উদ্দিনের নবজাতক কন্যা সন্তানের মৃত্যু হয়েছে বলে তিনি অভিযোগ করেছেন। গতকাল সোমবার তিনি সাংবাদিকদের বিষয়টি জানিয়ে ওই চিকিৎসকের বিচার দাবি করেছেন। এদিকে গ্রাম্য চিকিৎসক সুবোদ চন্দ্র ওই নবজাতকের মৃত্যুতে তার কোন অবহেলা নেই বলে দাবি করেছেন। তবে উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগের মতে ওই চিকিৎসকের এধরনের কোন প্রসূতীর সন্তান ভূমিষ্ঠ করার কোন যোগ্যতা রাখেন না। তার কাজ প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে রোগীকে হাসপাতালে পাঠানোর। এদিকে ৫ দিনের এই নবজাতকের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে ওই এলাকায় সাধারন মানুষের মাঝে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে।
জানা গেছে বড়চাপড়া গ্রামের ফয়াজ উদ্দিনের স্ত্রীকে সন্তান প্রসব করার জন্য গত রোববার উপজেলার বড়গাছা ইউনিয়নের কাটরাশইন বাজারের গ্রাম্য চিকিৎসক ডা: সুবোধ চন্দ্রকে ডেকে নিয়ে যায়। সন্তানটি মায়ের পেটেই নিউমোনিয়া রোগে আক্রান্ত ছিলো। এছাড়াও সন্তানটি ছিলো পুষ্টির অভাবে অপরিপূর্ন। কিন্তু ডা: সুবোধ চন্দ্র ওই প্রসূতির সন্তান প্রসব করান। ফয়াজ উদ্দিন বলেন অত্র এলাকার সকল গ্রামের মানুষ ওই ডাক্তারের চিকিৎসা নিয়ে আসছে। তাই সন্তান প্রসবের জন্য সুবোধ ডাক্তারকে ডাকি। কিন্তু আমার সন্তান মায়ের পেটেই ছিলো অপরিপূর্ন। জন্মের তৃতীয় দিনের বেলায় নবজাতকের পেটের মধ্যে শব্দ হওয়ার কারণে সুবোধ ডাক্তার এসে ফ্লাকোল সিরাপ খাওয়ানোর জন্য দিয়ে যায়। চতুর্থ দিনে সন্তানটি আরো নিস্তেজ হয়ে পড়লে সুবোধ ডাক্তার উন্নত চিকিৎসার জন্য নওগাঁ সদর হাসপাতালে নিতে বলেন। আমরা প্রথমে শিশু বিশেজ্ঞ স্বপন কুমার হালদারকে দেখালে তিনি সদর হাসপাতালে নিতে বলেন। হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক বলেন সন্তানটি মায়ের পেটেই নিউমোনিয়া রোগে আক্রান্ত ছিলো। হাসপাতালের চিকিৎসকরা অনেক চেষ্টা করেও আমার সন্তানকে আর বাঁচাতে পারেনি। সুবোধ ডাক্তার যদি প্রসবের সঙ্গে সঙ্গেই আমাদেরকে বলতো যে আমার সন্তানটি নিউমোনিয়া রোগে আক্রান্ত তাহলে তখনই আমরা উন্নত চিকিৎসার জন্য সন্তানকে ভালো কোন হাসপাতালে নিতে পারতাম। সুবোধ ডাক্তারের অবহেলার কারণেই আমার সন্তানটি মরে গেছে। 
গ্রাম্য চিকিৎসক সুবোধ চন্দ্র বলেন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স অনেক দূরে হওয়ায় গ্রামের মানুষরা আমার কাছেই চিকিৎসা নিতে আসে। আমি বহুদিন যাবত এই চিকিৎসা সেবা দিয়ে আসছি। ওই নবজাতক জন্ম নেওয়ার পর ভালোই ছিলো। শুধুমাত্র পেটের সমস্যা ছিলো। তাই আমি গ্যাসের একটি সিরাপ দিয়েছিলাম। এরপর যখন শিশুটির অবস্থা খারাপ হলে আমি তাকে রেফার্ড করে দিই। তবে শিশুটি মায়ের পেটে পুষ্টির অভাবের কারণে অপরিপূর্ন ছিলো। কিন্তু শিশুটি মায়ের পেটেই নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত ছিলো কি না তা আমি জানতাম না। এতে আমার কোন অবহেলা নেই।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তঅ ডা: কেএইচএম ইফতেখারুল আলম খাঁন বলেন একজন পল্লী কিংবা গ্রাম চিকিৎসক শুধুমাত্র একজন রোগীকে প্রাথমিক চিকিৎসা সেবা দিতে পারেন। কিন্তু একজন পল্লী কিংবা গ্রাম্য চিকিৎসক নবজাতককে ডেলিভারী করা কিংবা তার চিকিৎসা দিতে পারেন না। এমনকি কোন রোগীকে কোন প্রকারের ব্যবস্থাপত্রও দিতে পারেন না। যদি কেউ প্রশাসনকে বিষয়টি জানায় তাহলে প্রশাসন ওই সব হাতুড়ে চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বাধ্য।