বাধ্যতামূলকভাবে ৪ দিনের টেস্ট করার কথা ভাবছে আইসিসি

পুণ্ড্রকথা ডেস্ক
প্রকাশ: ৩১ ডিসেম্বর ২০১৯ ০৫:২১ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ৬৬ বার।

এবার টেস্ট ক্রিকেটে পরিবর্তন আনার কথা ভাবছে ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট কাউন্সিল (আইসিসি)। সাধারণ নিয়মে টেস্ট ম্যাচ হয় পাঁচ দিনের। তবে তা চার দিনে করার কথা ভাবছে বিশ্ব ক্রিকেটের নির্বাহী সংস্থা।

সাধারণত প্রথম শ্রেণির ম্যাচ হয় চার দিনের। তবে আইসিসি ভাবছে, ২০২৩ সাল থেকে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপের মাঝেই টেস্ট ম্যাচ খেলা হবে চার দিনের। নতুন নিয়ম বিশ্ব ক্রিকেটের বার্ষিক সূচি প্রণয়নে বাড়তি সময় দেবে বলে মনে করছে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের অভিভাবক সংস্থা।

তবে আইসিসির প্রাথমিক সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যে দেখা গেছে ভিন্নমত। লংগার ভার্সনের ক্রিকেটে এমন পরিবর্তন আনলে টেস্ট ক্রিকেটের সঙ্গে প্রথম শ্রেণির কোনো পার্থক্য থাকবে না বলে মনে করছেন বিরোধীরা।

মূলত খুবই ব্যস্ত বাৎসরিক সূচি, ক্রমবর্ধমান ঘরোয়া টি-টোয়েন্টি লিগ, দ্বিপক্ষীয় সিরিজ আয়োজনে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিসিআই) বাড়তি চাহিদা এবং টেস্ট সিরিজ আয়োজনে খরচের বিষয়গুলো চিন্তা করেই নতুন নিয়মের কথা ভাবছে আইসিসি। চার দিনের টেস্ট ম্যাচ আয়োজনের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হলে ২০২৩ থেকে ২০৩১ সাল পর্যন্ত সময়ে বেশ ভালো সময় বাঁচবে বলে ধারণা করছে বিশ্ব ক্রিকেটের অভিভাবক সংস্থা।

যেমন ২০১৫ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত আট বছরে পাঁচ দিনের পরিবর্তে বাধ্যতামূলক চার দিনের টেস্ট রাখা হলে অন্তত ৩৩৫ দিন বেঁচে যেত, যা অন্যান্য ইভেন্ট আয়োজনে বাড়তি সময় দিত আইসিসিকে। এ ছাড়া বৃহস্পতি থেকে রোববার পর্যন্ত চার দিনের টেস্ট ম্যাচ হলে এটি বৈশ্বিকভাবে আরও আবেদন সৃষ্টি করবে। কারণ দিনগুলোতে মানুষের ব্যস্ততা কম থাকে।

এ ছাড়া ম্যাচের দৈর্ঘ্য চার দিনে নামিয়ে আনা হলে আরও বেশি তিন থেকে পাঁচ ম্যাচের টেস্ট সিরিজ আয়োজন করা যাবে। কারণ এতে করে আয়োজক বোর্ড ও ব্রডকাস্টারদের পঞ্চম দিনের বাজেট করতে হবে না। ভারতের বিপক্ষে অস্ট্রেলিয়ার সাম্প্রতিক সময়ে চার ম্যাচ টেস্ট সিরিজের জন্যই ২০ দিন বরাদ্দ রাখতে হয়েছে। কিন্তু একই সময়ে চার দিনের টেস্ট হলে পাঁচটি ম্যাচ খেলা যেত।

তবে পাঁচ দিন থেকে ম্যাচের দৈর্ঘ্য চার দিনে নামানো হলে দিনে সর্বনিম্ন ৯০ থেকে বাড়িয়ে ৯৮ ওভার করে খেলানোর কথা ভাবা হচ্ছে। যাতে পাঁচ দিনের ম্যাচ থেকে মাত্র ৫৮ ওভার কম হবে। গত দেড়-দুই বছরে ক্রিকেটের অভিজাত সংস্করণের বেশিরভাগ ম্যাচ চার দিনে শেষ হওয়ায় কার্যত এমন সিদ্ধান্তের যৌক্তিকতা বাড়িয়েছে। ২০১৮ সাল থেকে এখন পর্যন্ত ৬০ শতাংশের বেশি টেস্ট চার দিন বা এর চেয়ে কম সময়ে শেষ হয়েছে।

অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট বোর্ডের (সিএ) প্রধান নির্বাহী কেভিন রবার্টসের মতে, চার দিনের টেস্টের প্রস্তাবটি সবার গুরুত্বের সঙ্গে নেয়া উচিত। স্থানীয় গণমাধ্যমে তিনি বলেন, ‘এটি এমন একটি বিষয় যা গুরুত্বের সহিত বিবেচনা করা উচিত। আবেগ দিয়ে চিন্তা করলে হবে না। বিষয়টি নিয়ে সঠিকভাবে চিন্তা করতে হবে। আমাদের দেখতে হবে গত ৫-১০ বছরে টেস্ট ম্যাচের গড় দৈর্ঘ্য কত ছিল এবং কত ওভার করে খেলা হয়েছে।

তিনি বলেন, ‘আমাদের বিষয়টাকে সচেতনতার সঙ্গে দেখতে হবে। আগামী ১২ বা ১৮ মাসে আমাদের এ জিনিসটা নিশ্চিত করতে হবে, যাতে ২০২৩-২০৩১ ক্রিকেট সূচিটা যথাযথ হয়। আইসিসির সব সদস্য দেশের সঙ্গে বসে এটি করতে হবে। কেউ বলছে না যে কাজটা সহজ। তবে আমরা সার্বজনীনভাবে এটি করতে চাই। এ ব্যাপারে আমরা দৃঢ়প্রত্যয়ী।

তবে এ বিষয়ে ভিন্নমত পোষণ করেন অস্ট্রেলিয়ার টেস্ট অধিনায়ক টিম পেইন। নিজ মাঠে সম্প্রতি নিউজিল্যান্ডকে চার দিনের ভেতরেই ২৪৭ রানের বড় ব্যবধানে হারিয়েছেন অজিরা। এর পর তিনি বলেন, ‘যদি এমন (চার দিনের টেস্ট) হতো, তা হলে অ্যাশেজে হয়তো কোনো ম্যাচেই ফল পাওয়া যেত না। আমার মনে হয়, সব ম্যাচই পঞ্চম দিনে গিয়েছিল। এটিই টেস্ট ক্রিকেটের বিশেষত্ব। এটি মানসিকভাবে কঠিন, শারীরিকভাবেও কঠিন। চার দিনের প্রথম শ্রেণির ম্যাচের চেয়ে এখানে বেশি পরীক্ষা দিতে হয়। আশা করি, এটিই বহাল থাকবে।

তবে ফেডারেশন অব ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেটার্স অ্যাসোসিয়েশনের (ফিকা) প্রধান টনি আইরিশ মনে করেন, টেস্ট ম্যাচের দৈর্ঘ্য চার দিনে নামিয়ে আনা হলে খেলার অনেক সমস্যাই দূরীভূত হবে। একই সঙ্গে বৈশ্বিক সূচিতে তিন ফরম্যাটের ক্রিকেটেরই একটা সামঞ্জস্য আসবে।

তিনি বলেন, চার দিনের টেস্টের ব্যাপারে দুটি বিষয় আসতে পারে বিবেচনায়। প্রথমত মাঠের খেলা ও পরে সূচিগত দিক। চার দিনের টেস্ট হলে সূচি করার ক্ষেত্রে চাপ কমবে। আমাদের চেষ্টা থাকবে মাঝে তৈরি হওয়া খালি সময়টায় আরও বেশি ম্যাচ ঢুকিয়ে দেয়া, যা কাঠামোগতভাবে আরও দৃঢ়তা আনবে।

এখনও বৈশ্বিকভাবে চার দিনের টেস্ট ম্যাচ আলোর মুখ না দেখলেও স্বল্পপরিসরে ঠিকই শুরু হয়েছে এ চর্চা। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দক্ষিণ আফ্রিকা ও আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ইংল্যান্ড চার দিনের টেস্ট ম্যাচ খেলেছে। আগামী গ্রীষ্মে আফগানিস্তানের বিপক্ষে অস্ট্রেলিয়ারও চার দিনের টেস্ট ম্যাচ খেলার কথা রয়েছে।