ছোটগল্পঃ প্রিয়তা

অসীম কুমার কৌশিক
প্রকাশ: ৩১ ডিসেম্বর ২০১৯ ০৬:২১ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ২৭০ বার।

চারদিকে নিস্তব্ধতা। ঘড়িতে তখন রাত ২ বাজে। ঝিঝিপোকার ডাক শোনা যাচ্ছে। ক্লান্ত শরীরে রাস্তার পাশ দিয়ে হেঁটে বাড়ি ফিরছে অরিন্দম। ঢাকার মোহাম্মদপুরে একটি ফ্লাটে ভাড়া থাকে ওরা। ওরা বলতে দু'জন। অরিন্দম ও তার স্ত্রী সিমলা। ভালোবেসে বিয়ে করেছে দু'জন বছর খানেক হলো। ড্রয়িংরুমে ঢুকতেই একটু চমকে গেলো অরিন্দম। শোবার ঘরটাতে লাইট জ্বলছে। তবে কি জেগে আছে সিমলা!

কি ব্যাপার, ঘরে কেউ নেই কেনো! নেশাটা কি আজ একটু বেশিই হয়েছে নাকি৷ চোখে-মুখে পানির ঝাপটা দিলো অরিন্দম। তারপর বেসিনের আয়নায় দেখলো চোখদুটো লাল হয়ে আছে।

সিমলা, এই সিমলা কোথায় তুমি? টয়লেটে আছো নাকি? একটু এগিয়ে টয়লেটের দরজায় হাত দিতেই খুলে গেলো সেটা। না, এখানেও নেই।

বিছানার পাশে আসতেই একটা কাগজের টুকরো দেখতে পেলো সে। সিমলার হাতের লেখা। চিঠিটা পড়ে ঘর থেকে দৌঁড়ে বেরিয়ে গেলো অরিন্দম। পুরো পৃথিবী ঝাপসা মনে হতে লাগলো। ঝিঝিপোকার ডাক তার কানে আসছে না আর। দোড়াচ্ছে সে, আর চিঠির প্রতিটা লাইন তার চোখের সামনে দৃশ্য হয়ে ভেসে উঠছে৷

একটি হোটেলে এসে থামলো অরিন্দম। হোটেল ম্যানেজার বললো কি হয়েছে স্যার, হাপাচ্ছেন কেন? প্রিয়তা কোথায়? ম্যানেজার রুম দেখিয়ে বললো ওতো ঘরেই আছে। আপনি বেরিয়ে যাওয়ার পর এখনো বাহিরে আসে নি। দৌড়ে দোতলায় গেলো অরিন্দম।

এই সেই হোটেল যেখানে রোজ আসে অরিন্দম। পতিতাদের হোটেল এটা। কত লোক এখানে আসে-যায়। প্রিয়তা, প্রিয়তা, বলে কয়েকবার ডাকলো অরিন্দম। কিন্তু দরজা ভেতর থেকে আটনকানো। কোনো সাড়া শব্দ নেই। জোড়ে ধাক্কা দিতেই দরজাটা খুলে গেলো। মেঝেতে পড়ে গেলো অরিন্দম। নিজেকে সামলে নিয়ে উপরে তাকাতেই দেখলো ঝুলছে প্রিয়তা।

ম্যানেজার লাশটা নামিয়ে বিছানায় রাখলো। ঘর তখনো অন্ধকার। লাইট জ্বালাতেই প্রিয়তার মুখটা দেখতে পেলো অরিন্দম। সিমলা, এই সিমলা ঘুমিয়ে গেলে কেনো? এতবড় শাস্তি দিলে আমায়?

সিমলা আবার কে স্যার? এতো প্রিয়তা, বলে এগিয়ে আসলো ম্যানেজার। পকেট থেকে চিঠিটা বের করে ম্যানেজারের হাতে দিলো অরিন্দম। ম্যানেজার চিঠি খুলে পড়তে লাগলো।

প্রিয় অরিন্দম,
চিঠিটা যখন হাতে পাবে তখন প্রিয়তা আর এপারে থাকবে না। কারণ আমিই প্রিয়তা। যার টানে তুমি সিমলাকে ভুলে গিয়েছো। সিমলা থেকে আমাকে প্রিয়তা হতে বাধ্য করেছো। ভালোবেসে বিয়ে করেছিলাম আমরা। তবে সেদিন বুঝেছিলাম তুমি কখনো ভালোবাসো নি আমায় ! সবটাই তোমার মোহ ছিলো। তুমি রোজ রাত করে বাসায় ফিরতে। কখনো কখনো ফিরতেই না। জিজ্ঞেস করলে বলতে অফিসে কাজ ছিলো। আরও শত অজুহাত। একদিন রাতে তোমার অফিসে গিয়েছিলাম খোঁজ নিতে। অফিসের দারোয়ান বললো কেউ নেই নেই অফিসে। আর তার মুখেই জানলাম তুমি রোজ এই পতিতালয়ে আসো। তখন ভেতরটা যেনো আঘাতে-আঘাতে শেষ হতে লাগলো। বাসায় ফিরে এলাম। সেদিন সারারাত তুমি ওখানেই ছিলে। ভাবলাম তোমাকে ছেড়ে চলে যাবো।কিন্তু অনেক ভালোবাসি যে তোমায়। ছেড়ে যাই কিভাবে? তাই সিদ্ধান্ত নিলাম তোমাকে তোমার মতো করেই ভালোবাসবো। সিমলা থেকে হয়ে উঠলাম প্রিয়তা।

রোজ রাতে তুমি জিজ্ঞেস করতে না, প্রিয়তা ঘর অন্ধকার করে রাখো কেনো? আলো জ্বালাতে দাও না কেনো? এখন নিশ্চয় তার উত্তর পেয়ে গেছো। অন্ধকারের প্রিয়তা তোমায় পেয়েছিলো, দিনের আলোয় দেখা সিমলা না। সে তো অভাগিনী। তুমি সে রাতে আমায় বুকের মধ্যে টেনে নিয়ে বললে প্রিয়তা আমি তোমায় অনেক ভালোবাসি। তাইতো সব ছেড়ে তোমার কাছে ছুটে আসি। আমি তোমাকে বিয়ে করতে চাই প্রিয়তা। আমি বললাম কিছুদিন সময় দাও আমায়। নিশ্চয় তোমার মনে প্রশ্ন জাগছে হোটেল থেকে আমি তোমার আগে কিভাবে বাড়িতে আগে ফিরি? তোমার একটা অভ্যেস আছে শরীর ভোগ করার পর তুমি ঘুমিয়ে যাও। উঠো এক দুই ঘন্টা পর। তুমি যখন ঘুমিয়ে পড় তখন প্রিয়তা নয় সিমলা তোমার কপালে একটা চুমু দিয়ে বাসায় চলে আসে। আজকের পর সিমলা আর বাসায় ফিরবে না। তুমি প্রিয়তাকেও পাবে না। এটাই তোমার শাস্তি। আমি ভালোবেসেছিলাম তোমায়। কিন্তু তুমি ভালোবেসেছো প্রিয়তাকে। সবটাই মোহ ছিলো। সেটা দূর করার জন্যই সিমলা আর অর প্রিয়তা দু'জনই চলে গেলো। এখন তোমার জীবনে শুধু ভালোবাসা থাকবে। যার অনলে পুড়ে ছাড়খার হবে তুমি।

প্রিয়তা

ভোর হতে কিছু সময় বাকি। কার কাছে ফিরবে সে, সিমলা নাকি প্রিয়তা? হেঁটে চলেছে অরিন্দম।