সরকার নির্ধারিত ফিতেই স্কুলে ভর্তির দায়িত্ব নেওয়ার ঘোষণা মান্নান আকন্দের

স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশ: ০১ জানুয়ারী ২০২০ ১১:৩৯ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ৩৮২ বার।

উচ্চ আদালতে মামলা করে বিজয়ী সেই আব্দুল মান্নান আকন্দ রায় বাস্তবায়নে আন্দোলনের পর এবার বগুড়ায় সরকার নির্ধারিত সেশন ফিতে সন্তানদের স্কুলে ভর্তির দায়িত্ব নেওয়ার ঘোষণা দিলেন। একই সঙ্গে অতিরিক্ত সেশন ফি আদায়কারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালানরও দাবি জানালেন।
বুধবার দুপুরে বগুড়া প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তৃতায় জেলা ট্রাক মালিক সমিতির সভাপতি আব্দুল মান্নান আকন্দ অভিভাবকদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘অতিরিক্ত সেশন ফি দিয়ে সন্তানকে ভর্তি না করানোর জন্য আপনাদের প্রতি আহবান জানাচ্ছি। প্রয়োজনে আমাদের দায়িত্বে আপনার সন্তানকে ভর্তি করানো হবে।’ দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বেশ কয়েকজন অভিভাবকও উপস্থিত ছিলেন। এক প্রশ্নের জবাবে আব্দুল মান্নান আকন্দ বলেন, ‘উচ্চ আদালতের রায় বেসরকারি সব স্কুলের জন্য প্রযোজ্য। এমনকি এমপিও ভুক্ত নয় ব্যক্তি মালিকানাধীন স্কুলগুলোও সরকার নির্ধারিত ফি’র বেশি অর্থ নিতে পারবে না।’
শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষার্থীদের ভর্তি এবং সেশন ফি নির্ধারণ করে প্রায় এক বছর আগে ২০১৮ সালের ১৩ নভেম্বর একটি নীতিমালা প্রণয়ন করে। তাতে রাজধানী ঢাকা, ঢাকার বাইরে অন্য মেট্রোপলিটন শহর, জেলা শহর এবং উপজেলা এলাকায় এমপিওভুক্ত ও আংশিক এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর আবেদন ফরম, ভর্তি ফি ও সেশন ফি নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। তাতে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তির আবেদন ফি নির্ধারণ করা হয়েছে ২০০ টাকা। এছাড়া জেলা সদরে সেশনসহ ভর্তি ফি সর্বোচ্চ ২ হাজার টাকা এবং উপজেলা পর্যায়ে তা এক হাজার টাকা গ্রহণ করতে বলা হয়েছে।
তবে বগুড়ায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো মন্ত্রণালয়ের ওই নীতিমালা লংঘন করে ভর্তি ও সেশন ফি’র নামে অতিরিক্ত অর্থ আদায় অব্যাহত রাখে। এর বিরুদ্ধে বগুড়া জেলা ট্রাক মালিক সমিতির সভাপতি আব্দুল মান্নান আকন্দ চলতি বছরের মাঝামাঝি হাইকোর্টে রিট করেন। তাতে অভিযোগ করা হয়, বগুড়ার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো সরকারি নীতিমালা লংঘন করে ভর্তি ও সেশন ফি’র নামে দুই থেকে ৭গুণ বেশি অর্থ আদায় করছে। রিটে শিক্ষা মন্ত্রণালয় নির্ধারিত সেশন ফি’র নামে অতিরিক্ত অর্থ আদায় বন্ধ এবং ইতিপূর্বে আদায় করা অর্থ ফেরত প্রদানের নির্দেশনা চাওয়া হয়। 
শুনানী শেষে বিচারপতি জেবিএম হাসান এবং মোঃ খায়রুল আলমের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ গত ১৭ ডিসেম্বর এক আদেশে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্ধারণ করে দেওয়া ফি’র বাইরে অতিরিক্ত অর্থ আদায়ে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন। এমনকি ইতিপূর্বে আদায় করা অতিরিক্ত ফি ফেরত দেওয়ারও নির্দেশ দিয়েছেন। আদালতের ওই আদেশের পর আব্দুল মান্নান আকন্দ গত ২৪ ডিসেম্বর বগুড়া প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলন করে দ্রুত আদালতের আদেশ বাস্তবায়নের দাবি জানান। অন্যথায় অভিভাবকদের নিয়ে আন্দোলনে নামার হুমকি দেন তিনি। এরপর বাম ঘরানার কয়েকটি ছাত্র ও যুব সংগঠনের নেতা-কর্মীরা আদালতের নির্দেশনা বাস্তবায়নের দাবিতে গত ২৬ ডিসেম্বর শহরের একাধিক স্থানে সমাবেশ করে এবং দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা করেন। 
এরপর ২৮ অক্টোবর অভিভাবকদের নিয়ে শহরের জিরো পয়েন্ট সাতমাথায় সমাবেশ করেন আব্দুল মান্নান আকন্দ। পরদিন ২৯ ডিসেম্বর তিনি রায় বাস্তবায়নের দাবি জানিয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি পেশ করেন। একই দিন বাম ঘরানার কয়েকটি ছাত্র ও যুব সংগঠন এবং সামাজিক সংগঠনের নেতা-কর্মীরাও জেলা প্রশাসককে স্মারকলিপি দেন। তারই পরিপ্রেক্ষিতে জেলা প্রশসাক ফয়েজ আহাম্মদ ওইদিনই সেশন ফি গ্রহণের ক্ষেত্রে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী সরকারি নীতিমালা মেনে চলার জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে চিঠি দেন। চিঠিতে বলা হয়েছে, নির্ধারিত সেশন ফি’র অতিরিক্ত অর্থ আদায় করলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
বুধবার সংবাদ সম্মেলনে আব্দুল মান্নান আকন্দ অতিরিক্ত সেশন ফি আদায় বন্ধে তার লড়াইয়ের কাহিনী বর্ণনা করে অভিভাবকদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো যদি অতিরিক্ত সেশন ফি গ্রহণ করার উদ্দেশ্যে তাড়াহুরা করে ভর্তিও শেষ তারিখ ঘোষণা করে তবুও শিক্ষার্থীদের অতিরিক্ত সেশন ফি দিয়ে ভর্তি না করানোর আহবান জানাচ্ছি।’