অপারেশন টেবিলে লাশ রেখেই ডাক্তার নার্সের পলায়ন;তদন্ত কমিটি গঠন

নওগাঁয় চিকিৎসকের ভুল অস্ত্রোপচারে প্রসূতির মৃত্যুর অভিযোগ

নওগাঁ প্রতিনিধি
প্রকাশ: ০২ জানুয়ারী ২০২০ ১১:৫০ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ৮৫ বার।

নওগাঁয় ভূল অস্ত্রোপচারে রাজিয়া সুলতানা (২৭) নামে এক প্রসূতি অপারেশন টেবিলেই মারা যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে। ঘটনার পর ডাক্তার ও নার্স লাশ অপারেশন টেবিলে রেখেইে পালিয়ে যান বলে জানিয়েছেন প্রসূতির স্বজনরা। গত বুধবার দুপুরে শহরের পার-নওগাঁয় বেসরকারি ‘নওগাঁ ডায়াবেটিক সমিতি’ হাসপাতালে এ ঘটনা ঘটে। নিহত রাজিয়া সুলতানা শহরের চকরামপুর এলাকার মারুফ হোসেনের স্ত্রী। লাশ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে গেলেও  গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেল ৫ টা পর্যন্ত এই ঘটনায় থানায় কোন মামলা দাযের হয়নি বলে পুলিশ জানিয়েছেন। এদিকে এই ঘটনায় জেলা সিভিল সার্জনের পক্ষ থেকে তিন সদস্য বিশিষ্ঠ তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
প্রসূতির পরিবার ও হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, প্রসূতি রাজিয়া সুলতানা সন্তান প্রসবের জন্য বুধবার সকাল ৮টার দিকে নওগাঁ ডায়াবেটিক সমিতি হাসপাতালে ভর্তি হন। সিজারিয়ান অপারেশনের সময় প্রসূতির সকল পরীক্ষা নিরীক্ষা করা হয়। এরপর সকাল সাড়ে ১০টার দিকে অ্যানেসথেসিয়া ডা: মাসুদ আলীর সহযোগীতায় গাইনি চিকিৎসক ডা: আঞ্জুমান আরা সিজারিয়ান অপারেশন করেন। অস্ত্রোপচারে প্রসূতি এক কন্যা সন্তানের জন্ম দেন । নবজাতক সুস্থ্য থাকলেও অস্ত্রোপচারের পর প্রসূতির ব্যাপক রক্তক্ষরণ শুরু হয়। একদিকে রক্তক্ষরন অপরদিকে রোগীর পেশার কমতে থাকে। রক্তক্ষরণ বন্ধ করতে না পারায় প্রায় দুইঘন্টা পর অপারেশন টেবিলেই প্রসূতি মারা যায়। অবস্থা বেগতিক দেখে অপারেশন টেবিলে লাশ রেখেই ডাক্তার ও নার্স পালিয়ে যায়। দীর্ঘ সময় অপারেশন থিয়েটার থেকে প্রসূতিকে বের করে না আনায় একপর্যায় স্বজনরা অপারেশন থিয়েটারে ঢুুকে পড়ে। সেখানে অপারেশন টেবিলে প্রসূতি অচেতন অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখা যায়। ঘটনাটি জানাজানি হলে নিহতের স্বজন ও এলাকাবাসী বিক্ষুদ্ধ হয়ে উঠে। একপর্যায় বিক্ষুদ্ধ লোকজন হাসপাতালের ওপর চড়াও হলে বিষয়টি পুলিশকে জানানো হয়। পুলিশ দুপুর ২টার দিকে ওই ক্লিনিকে গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করে এবং বিকেল ৫ টার দিকে লাশ উদ্ধার করে থানায় নিযে যায়। এদিকে মামলা দায়ের না করেই পুলিশ ওইদিন রাতেই লাশ স্বজনদের নিকট হস্তান্তর করে। এদিকে খোজ নিয়ে জানা গেছে ডাঃ মাসুদ আলী দেওয়ান ওই ক্লিনিকের প্রধান দায়ীত্বে থাকলেও তার কোন এনেসথেসিয়ার কোন যোগ্যতা নেই । এরপরেও তিনি ওই প্রসূতিকে অজ্ঞার করার ইনজেকশন দিয়েছেন। এছাড়াও ক্লিনিকের চিকিৎসা ব্যবস্থা নিয়েও অভিযোগ রয়েছে।
নিহতের স্বামী মারুফ হোসেন বলেন, সন্তান প্রসবের জন্য বাড়ি থেকে সুস্থ মানুষকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। এরপর বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষা করা হয়। সবকিছুই ঠিকঠাক ছিল বলে হাসপাতাল থেকে জানানো হয়। এরপর সিজারিয়ান অপারেশন করে স্ত্রী দ্বিতীয় কন্যা সন্তানের জন্ম দেয় কিন্তু দীর্ঘ সময় অপারেশন থিয়েটার থেকে স্ত্রী বেরিয়ে না আসায় আমাদের সন্দেহ হয়। কেন দেরী হচ্ছে জানতে চাইলে কেউ কোন সদুত্তর দিচ্ছিলেন না। এক পর্যায়ে অপারেশন থিয়েটারে গিয়ে দেখি লাশ টেবিলে পড়ে আছে। কোন ডাক্তার,নার্স নেই। তার অভিযোগ  চিকিৎসকের ভুল অস্ত্রোপচারের কারণে আমার স্ত্রীর মৃত্যু হয়েছে।
এ ব্যাপারে গাইনি চিকিৎসক ডা: আঞ্জুমান আরার সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ না করায় তার কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি। 
ওই ক্লিনিকের দায়ীত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসক ডাঃ মাসুদ আলী দেওয়ান বলেন আমি শুধু মাত্র প্রসুতিকে অজ্ঞান করেছি অপারেশন বিষয়ে আমার কোন কিছু বলার নাই।  জানা যায় ডাঃ মাসুদ আলী দেওয়ান কোন অজ্ঞান বিশেষজ্ঞ নন। তবে সে নিজেকে অজ্ঞান বিশেষজ্ঞ বলে দাবি করেন।
নওগাঁ ডায়াবেটিক সমিতি হাসপাতালের পরিচালনা কমিটির সহ-সভাপতি ও সিভিল সার্জন ডা: মুমিনুল হক বলেন, ঘটনার পর ঘটনাস্থলে ডেপুটি সিভিল সার্জনসহ দুই জনকে পাঠানো হয়েছিল। প্রাথমিক তদন্তের অতিরিক্ত রক্তক্ষরনে রোগী মারা যায় বলে জানা গেছে। এ ঘটনা একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্তে চিকিৎসায় ভূলের কারণে রোগের মৃত্যুর প্রমাণ পাওয়া গেলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। ওই ক্লিনিকের প্যথলজি বিভাগের কোন অনুমোদন আছে কি-না জানতে চাইলে তিনি জানান কোন অনুমোদন নাই তবে আবেদন করেছে। 
নওগাঁ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সোহরাওয়ার্দী হোসেন বলেন, ঘটনার সংবাদ পেয়ে লাশ উদ্ধার করে থানায় নেয়া হয়েছিল। কোনো অভিযোগ না থাকায় পরে রোগীর স্বজনেরা লাশ বাড়িতে নিয়ে যায়। তবে অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
নওগাঁ ডায়াবেটিক সমিতি হাসপাতালের সাধারন সম্পাদক আলহাজ্ব আব্দুস সালাম অপারেশনের সময় রোগীর মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, অতিরিক্ত রক্তক্ষরনে রোগীর মৃত্যু হয়েছে। নিহতের স্বজনরা লাশ নিয়ে গেছেন। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।
এ বিষয়ে নওগাঁর জেলা প্রশাসক ও নওগাঁ ডায়াবেটিক সমিতি হাসপাতালের সভাপতি মোঃ হারুন অর রশীদ জানান আমাকে বিষয়টি জানানো হয়নি তবে পরে জানতে পেরেছি ঘটনাটি তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে বলে তিনি জানান।