১৬টি ট্রেন চলছে ঝুঁকি নিয়ে

বগুড়ায় করতোয়া ও গাইবান্ধার ঘাঘট রেল সেতুর মেরামত কবে শুরু হবে?

পুণ্ড্রকথা রিপোর্ট
প্রকাশ: ০৩ জানুয়ারী ২০২০ ১০:০৭ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ২৮৩ বার।

বগুড়া ও গাইবান্ধায় বড় দু’টি রেল সেতুর মেরামত কাজ এখনও শুরু হয়নি। রেলওয়ের স্থানীয় প্রকৌশল দপ্তর থেকে বার বার তাগাদা এমনকি সেতু বিভাগের কর্মকর্তারা পরিদর্শন করে গেলেও মেরামতের কোন উদ্যোগ চোখে পড়ছে না। কবে নাগাদ কাজ শুরু হবে সে ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা নিশ্চিত করে কিছু বলতেও পারছেন না। ফলে ওই দুই জেলার ওপর দিয়ে রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন গন্তব্যে প্রতিদিন ট্রেনগুলোকে ঝুঁকি নিয়েই চলাচল করতে হচ্ছে।
রেলওয়ের হিসাব অনুযায়ী, উত্তরাঞ্চলে ১৮৯২ সালে রেললাইন স্থাপন শুরু হয়। পশ্চিমাঞ্চলের অধীন লালমনিরহাট বিভাগের আওতায় বগুড়ার সান্তাহার থেকে, গাইবান্ধা, রংপুর, কুড়িগ্রাম, নীলফামারী, লালমনিরহাট, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও ও পঞ্চগড় পর্যন্ত ৯ জেলায় ৫০০ দশমিক ৬১ কিলোমিটার রেলপথ রয়েছে। এর মধ্যে বগুড়া ও গাইবান্ধা হয়ে আন্তঃনগর, মেইল ও লোকাল মিলে বর্তমানে ৮ জোড়া বা ১৬টি ট্রেন চলাচল করছে। এসব ট্রেনে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ যাতায়াত করেন।
রেলওয়ের প্রকৌশল দপ্তরের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, সংস্থাটির লালমনিরহাট বিভাগের অধীনে বৃটিশ শাসনামলে নির্মিত মোট ৪১১টি রেল সেতু রয়েছে। চুন আর সুরকির মিশ্রণযুক্ত ইটের গাঁথুনি দিয়ে তৈরি সেতুগুলোর মেয়াদকাল সর্বোচ্চ ৬০ বছর ধরা হলেও এগুলোর বয়স অনেক আগেই প্রায় ১২০ বছর পেরিয়ে গেছে। মাঝে মাঝেই সেতুগুলোর পিলার দেবে যাচ্ছে নয়তো গার্ডার দুর্বল হয়ে ট্রেন চলাচলে বিঘœ ঘটছে। ২০১৮ সালের ২২ সেপ্টেম্বর সকালে বগুড়ার সুখানপুকুর ও ভেলুরপাড়া রেলস্টেশনের মাঝে চকচকিয়া সেতুর একটি পিলার দেবে যায়। সেটি মেরামতে ২৪ ঘন্টারও বেশি সময় লেগে যায়। ওই সময় পর্যন্ত ট্রেন চলাচলও বন্ধ রাখতে হয়। 
বর্তমানে তিনটি সেতু নানা কারণে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। বগুড়া শহরে করতোয়া নদীর উপর নির্মিত সেতুর গার্ডারগুলো অত্যন্ত দুর্বল হয়ে পড়েছে। পাশাপাশি ওই সেতুর ওপর রেলপথটিও উঁচু করা প্রয়োজন। এছাড়া গাইবান্ধা জেলার বাদিয়াখালিতে এলাই নদীর ওপর নির্মিত সেতুর মাঝের পিলারের নিচ থেকে মাটি সরে গেছে। একই জেলার ভেড়ামারায় ঘাঘট নদীর নির্মিত ২২০ মিটার দীর্ঘ সেতুর এবাটমেন্টে (সেতুর শুরুতে যে পিলার থাকে) ফাটল ধরেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঝুঁকিপূর্ণ ওই তিনটি সেতুর মধ্যে শুধু গাইবান্ধার ভেড়ামারায় ঘাঘট নদীর ওপর নির্মিত রেল সেতুটি মেরামতের জন্য দরপত্র আহবান করা হয়েছে। মেরামত কাজের ব্যয় ধরা হয়েছে দেড় কোটি টাকা। বাকি দু’টি সেতু মেরামতের বিষয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে বগুড়ায় করতোয়া নদীর ওপর নির্মিত সেতুর সর্বশেষ অবস্থা গেল বছরের শুরুতে তৎকালীন সেতু প্রকৌশলী মনিরুজ্জামান দেখেও গেছেন। কিন্তু তার পরেও আজ পর্যন্ত ওই দু’টি সেতু মেরামতের কোন উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।
২০১৮ সালের ২৩ জুন রাতে মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়ায় একটি সেতু থেকে ট্রেন পড়ে গিয়ে ৪ জন নিহত এবং বেশ কয়েকজন আহত হন। তার দু’দিনের মাথায় ২৫ জুন জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রেলের ইঞ্জিন পুনর্বাসন সংক্রান্ত একটি প্রকল্পের অনুমোদন দিতে গিয়ে সারাদেশে নড়বড়ে সব রেল সেতু চিহ্নিত করে দ্রুত সময়ের মধ্যে মেরামতের নির্দেশ দেন। এতে নাগরিক বিশেষত যারা নিয়মিত ট্রেন ভ্রমণ করেন তারা আশাবাদী হয়ে ওঠেন। 
সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) বগুড়ার সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা মাছুদার রহমান হেলাল জানান, বগুড়া শহরে করতোয়া নদীর ওপর নির্মিত সেতুটির গার্ডারগুলো যে নষ্ট হয়ে গেছে তা খালি চোখে দেখলেই বোঝা যায়। গত বছরের মাঝামাঝি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন সারাদেশে রেলের নড়বড়ে সেতুগুলো দ্রæত মেরামতের নির্দেশ দিয়েছিলেন তখন ভেবেছিলাম এবার হয়তো করতোয়া সেতু মেরামতের কাজ শুরু হবে। কিন্তু ৬ মাস পেরিয়ে গেলেও কাজ শুরু হলো না। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, ‘সেতুটির অবস্থা দিন দিন খারাপ হচ্ছে। কিন্তু রেল কর্মকর্তাদের উদাসীনতা দেখে মনে হচ্ছে কোন দূর্ঘটনা না ঘটা পর্যন্ত হয়তো তাদের টনক নড়বে না।’
বগুড়ার সোনাতলা এলাকার ব্যবসায়ী আকমল হোসেন জানান, বগুড়া রেলওয়ে স্টেশনের কাছাকাছি করতোয়া নদীর ওপর নির্মিত সেতুর ওপর যখন ট্রেন ওঠে তখন মনে হয় পুরো সেতুটি যেন কাঁপতে থাকে। প্রচÐ ভয়ও লাগে তখন। তিনি বলেন, ‘সোনাতলা থেকে বগুড়ায় সড়কপথে যানবাহন থাকলেও সময় যেমন বেশি লাগে তেমনি ভাড়াও কয়েকগুণ বেশি গুণতে হয়। যে কারণে জীবনের ঝুঁকি সত্তে¡ও ট্রেনে চলাচল করি।’
বগুড়ায় রেলওয়ের সহকারি নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ আবু মুসা জানান, বগুড়ার সান্তাহার থেকে গাইবান্ধার মহিমাগঞ্জ পর্যন্ত ৭১ কিলোমিটার অংশে মোট ৫৪টি সেতুর মধ্যে ১২টি মেরামত করা প্রয়োজন। এজন্য ৩০ লাখ টাকা ব্যয় ধরে ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে একটি প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। ওই প্রস্তাবের বাইরে করতোয়া নদীর ওপর নির্মিত রেল সেতু মেরামতের প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘করতোয়া নদীর ওপর নির্মিত সেতুর গার্ডারগুলোর দুর্বল হয়ে পড়েছে। সেগুলো পরিবর্তন অথবা শক্তিশালী করা প্রয়োজন। পাশাপাশি সেতুর ওপরে রেললাইনও অন্তত ১৬ ইঞ্চি উঁচু করা প্রয়োজন। গেল বছরের প্রথম দিকে সেতু বিভাগের তৎকালীন প্রকৌশলী মনিরুজ্জামান সেতুটি পরিদর্শন করে গেছেন। আশাকরি খুব তাড়াতাড়ি মেরামত কাজ শুরু হবে।’
 লালমনিরহাটে রেলওয়ের সহকারি নির্বাহী প্রকৌশলী সাইদুর রহমান জানান, গাইবান্ধা জেলার ভেড়ামারা ও বাদিয়াখালি এলাকায় দু’টি সেতু মেরামত করা প্রয়োজন। এর মধ্যে ঘাঘট নদীর ওপর নির্মিত সেতুটি মেরামতের জন্য এরই মধ্যে দরপত্র আহবান করা হয়েছে। তার আশা বাদিয়াখালিতে এলাই নদীর ওপর নির্মিত সেতুর মেরামত কাজও খুব শিগগির শুরু হবে।