ব্রিটিশ কোম্পানিকে গ্যাসসম্পদ অনুসন্ধানের দায়িত্ব দিয়েছে সরকার

পুণ্ড্রকথা ডেস্ক
প্রকাশ: ০৩ জানুয়ারী ২০২০ ১২:১৬ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ৪৯ বার।

সমুদ্রে গ্যাসসম্পদ অনুসন্ধান করতে একটি ব্রিটিশ কোম্পানিকে দায়িত্ব দিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মেরিটাইস অ্যাফেয়ার্স ইউনিট। পাশাপাশি চলতি বছরের মধ্যে বাংলাদেশের মহীসোপান (কন্টিনেন্টাল সেলফ) নির্ধারণের জন্য জাতিসংঘে জমা দেওয়া ২০১১ সালের প্রস্তাবের সঙ্গে আরও কিছু উপাদান যুক্ত করা হবে। শুধু তাই নয়, বঙ্গোপসাগরে মেরিন জেনেটিক রিসোর্সের বাণিজ্যিক ব্যবহারের জন্য ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানকে সহায়তা দিতে নেদারল্যান্ডসের সহযোগিতায় একটি দল কাজ করছে। খবর বাংলা ট্রিবিউন

এছাড়া, ‘বাংলাদেশ সুমদ্র অঞ্চল আইন’ ইতোমধ্যে কেবিনেটে অনুমোদন পেয়েছে। আইন মন্ত্রণালয়ে যাচাই-বাছাইয়ের পর দ্রুততার সঙ্গে আইনটি সংসদে তোলা হবে।

এবিষয়ে জানতে চাইলে,মেরিটাইস অ্যাফেয়ার্স ইউনিটের সচিব মোহাম্মাদ খোরশেদ আলম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এটি চলমান প্রক্রিয়ার অংশ, কিন্তু কার্যক্রমগুলো মুজিববর্ষের সঙ্গে মিলে গেছে।’ গ্যাসসম্পদ অনুসন্ধানের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘বঙ্গোপসাগরের গোদাবরি এলাকা, যা ভারতের সুমদ্র সীমানায় পড়েছে। সেখানে জমাট বাঁধা মিথেন গ্যাস পাওয়া গেছে। আমরা ধারণা করছি, আমাদের সুমদ্র  অঞ্চলেও একই ধরনের মিথেন গ্যাস পাওয়া যাবে ।’ ইতোমধ্যে একটি ব্রিটিশ কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি হয়েছে এবং তারা কাজও শুরু করেছে বলে তিনি জানান।

খোরশেদ আলম জানান, ওই কোম্পানি সমুদ্রে সরাসরি অনুসন্ধান চালাবে না।বাংলাদেশের কাছে যে তথ্য-উপাত্ত আছে তা বিশ্লেষণ করে তাদের রিপোর্ট দেবে।

উল্লেখ্য, মিয়ানমার ও ভারতের সঙ্গে সুমদ্রসীমা সংক্রান্ত বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য ২০০৯ সালে আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা করার আগে বাংলাদেশ বঙ্গোসাগরের একটি বিস্তারিত জরিপ চালিয়ে সমুদ্র বিষয়ে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে।

কন্টিনেন্টাল সেলফ

২০০১ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের শেষ দিকে জাতিসংঘ কন্টিনেন্টাল সেলফ কনভেনশনে অনুস্বাক্ষর করে বাংলাদেশ। এর ১০ বছর পরে ২০১১ সালে আওয়ামী লীগ সরকার মহীসোপানের দাবিনামা জাতিসংঘে জমা দেয়। বাংলাদেশের আগে মিয়ানমার ২০০৮ সালে এবং ভারত ২০০৯ সালে তাদের দাবিনামা জমা দেয়।

২০১১ সালে দাবিনামা জমা দেওয়ার পর বাংলাদেশ ২০১২ সালে মিয়ানমারের সঙ্গে এবং ২০১৪ সালে ভারতের সুমদ্রসীমানা সংক্রান্ত বিরোধ আন্তর্জাতিক আদালতে নিষ্পত্তি করে।

এ বিষয়ে খোরশেদ আলম বলেন, ‘উভয় মামলার রায়ে কোর্টের সুনির্দিষ্ট কিছু নির্দেশনা আছে এবং সেগুলো অন্তর্ভুক্ত করে আমরা আমাদের দাবিনামা আবার জমা দেবো।’

তিনি বলেন, ‘আমরা এবছরের মধ্যে পরিবর্তিত দাবিনামা জমা দেবো বলে আশা করছি।’ কবে নাগাদ জাতিসংঘ বাংলাদেশের মহীসোপানের দাবি নিষ্পন্ন করবে, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বর্তমানে তালিকার ৪৮ নম্বরে থাকা ভারতের দাবিনামার নিষ্পত্তি চলছে। আমাদের দাবিনামা তালিকার ৫৫ নম্বরে রয়েছে। আশা করছি, আমাদেরটা শিগগিরই নিষ্পত্তি  হবে।’

প্রসঙ্গত,  সুমদ্রতট থেকে ২০০ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত সুমদ্রে বাংলাদেশের সার্বভৌম অধিকার আছে এবং ২০০ নটিক্যালের বাইরে বাংলাদেশের কতটুকু অধিকার আছে, সেটি নির্ধারণ করবে জাতিসংঘ।

বাংলাদেশ সুমদ্র অঞ্চল আইন

১৯৭৪ সালে বঙ্গবন্ধু সরকারের আমলে মেরিটাইম জোন ও টেরেস্ট্রিয়াল ওয়াটার আইন করা হয়। বর্তমান অবস্থার প্রেক্ষাপটে আইনটি সংশোধনের উদ্যোগ নেয় সরকার। ইতোমধ্যে কেবিনেটে অনুমোদন পাওয়া গেছে। আইন মন্ত্রণালয়ের যাচাই-বাছাই শেষে এটি বিল আকারে সংসদে উপস্থাপন করা হবে।

খোরশেদ আলম বলেন,‘আমরা সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আইনটির সংশোধনী এনেছি। আশা করি, এ বছরের মধ্যে এটি সংসদে পাস হবে।’

কী উদ্দেশ্যে নতুন সংশোধনী জানতে চাইলে তিনি বলেন, সরকারের উদ্দেশ্য হচ্ছে— সমুদ্র সম্পদের টেকসই ও উন্নত ব্যবহার। এজন্য যে আইনি কাঠামো প্রয়োজন, সেটির জন্য আইনটিতে সংশোধনী আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।’