পিলখানা হত্যা মামলায় ১৩৯ জনের মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে হাইকোর্টের রায় প্রকাশ

প্রকাশ: ০৮ জানুয়ারী ২০২০ ০৭:০৫ ।
প্রচ্ছদ
পঠিত হয়েছে ৬১ বার।

আলোচিত বিডিআর বিদ্রোহের হত্যা মামলায় হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ হয়েছে। রায়ে ডিএডি তৌহিদসহ ১৩৯ জনকে ফাঁসির আদেশ দেয়া হয়েছে।

বুধবার সংশ্লিষ্ট কোর্টের বিচারপতিদের স্বাক্ষরের পর রায়টি রায় প্রকাশ করা হয়। এর আগে রায়ে স্বাক্ষর করেন বিচারপতি মো. শওকত হোসেনের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিশেষ হাইকোর্ট বেঞ্চ। বেঞ্চের অন্য দুই সদস্য হলেন, বিচারপতি মো. আবু জাফর সিদ্দিকী ও বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার।

২০১৭ সালের ২৭ নভেম্বর বিচারপতি মো. শওকত হোসেন, বিচারপতি মো. আবু জাফর সিদ্দিকী ও বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদারের সমন্বয়ে গঠিত বৃহত্তর বেঞ্চ ১৩৯ জনকে ফাঁসির আদেশ দেন। মামলার ডেথ রেফারেন্স ও আপিল শুনানি শেষ হওয়ার ৭ মাস পর দেয়া রায়ে ১৮৫ জনকে যাবজ্জীবন ও ২০০ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেয়া হয়। এর মধ্য দিয়ে ২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর নিু আদালতের রায় অনুমোদন প্রক্রিয়া চূড়ান্তভাবে সম্পন্ন হতে যাচ্ছে। খবর যুগান্তর অনলাইন 

বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক আসামির ফাঁসির আদেশ সংবলিত পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। সূত্র জানায়, মঙ্গলবার সংশ্লিষ্ট বেঞ্চের ৩ জন বিচারপতি রায় নিয়ে কয়েক দফা বৈঠকও করেছেন। প্রায় ৩৩ হাজার পৃষ্ঠার এই রায়ে কোনো ভুলত্রুটি রয়েছে কি না, তা-ও খতিয়ে দেখা হয়।

জানা যায়, সংশ্লিষ্ট বেঞ্চের সিনিয়র বিচারপতি শওকত হোসেন মূল রায় লিখেছেন। তিনি রায়ের প্রায় সাড়ে ১১ হাজার পৃষ্ঠা লিখে বেঞ্চের অপর দুই বিচারপতির কাছে পাঠান। বিচারপতি আবু জাফর সিদ্দিকী তার অংশের প্রায় ১৬ হাজার পৃষ্ঠা লিখেছেন।

কনিষ্ঠ বিচারপতি নজরুল ইসলাম তালুকদার লিখেছেন ৫৫০ পৃষ্ঠার ওপর। ভুলত্রুটি খতিয়ে দেখার পর তিনজনের লেখা রায় একত্রিত করা হয়। বাংলাদেশের ইতিহাসে কোনো মামলায় সবচেয়ে বেশি সংখ্যক আসামির ফাঁসির আদেশ দেয়া হয় এই রায়ে।

নিয়ম অনুযায়ী হত্যা মামলায় হাইকোর্টের রায় প্রকাশের পর উভয়পক্ষই আপিল বিভাগে আপিল করতে পারবে। আপিলের বিচারের মধ্য দিয়ে বিচার প্রক্রিয়া চূড়ান্তভাবে সম্পন্ন হবে। এরপরও রিভিউ করার সুযোগ থাকবে। ২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর মামলায় ১৫২ জনকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুর আদেশ দেন বিচারিক আদালত। এদের কয়েকজন ছাড়া সবাই তৎকালীন বিডিআরের সদস্য। যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয় ১৬১ জন। সর্বোচ্চ ১০ বছর কারাদণ্ডসহ বিভিন্ন মেয়াদ সাজা পান আরও ২৫৬ জন। অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় খালাস পান ২৭৮ জন আসামি। সাজা হয় মোট ৫৬৮ জনের। এরপর আসামিদের ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদণ্ড অনুমোদন) হাইকোর্টে আসে। সাজার রায়ের বিরুদ্ধে দণ্ডিত ব্যক্তিরা জেল আপিল ও আপিল করেন। ৬৯ জন খালাসের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল করে। পরে ২০১৫ সালের ১৮ জানুয়ারি হাইকোর্টে শুনারি শুরু হয়। শেষ হয় ৩৭০তম দিনে ১৩ এপ্রিল।

২০০৯ সালের ২৫-২৬ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর পিলখানায় বিডিআর সদর দফতরে বিদ্রোহের ঘটনায় ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জন হত্যাকাণ্ডের শিকার হন। এ ঘটনায় প্রথমে রাজধানীর লালবাগ থানায় হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দুটি মামলা হয়। পরে এসব মামলা নিউমার্কেট থানায় স্থানান্তরিত হয়। সিআইডি দীর্ঘ তদন্ত শেষে হত্যা মামলায় ২৩ বেসামরিক ব্যক্তিসহ প্রথমে ৮২৪ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করে।

এছাড়া বিস্ফোরক আইনে করা মামলায় ৮০৮ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয় সিআইডি। পরে আরও ২৬ জনকে অভিযুক্ত করে মোট ৮৩৪ জনের বিরুদ্ধে সম্পূরক অভিযোগপত্র দেয়া হয়। বিচার চলাকালে তৎকালীন বিডিআরের ডিএডি রহিমসহ চার আসামির মৃত্যু হয়। মামলায় আসামিদের মধ্যে বিএনপি নেতা ও সাবেক এমপি নাসির উদ্দিন আহমেদ পিন্টু এবং স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা তোরাব আলীরও দণ্ড হয়।

সাজা ভোগকালীন পিন্টু অসুস্থ হয়ে মারা যান। রক্তক্ষয়ী ওই বিদ্রোহের প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ সীমান্তরক্ষী এ বাহিনীর নাম পরিবর্তন করা হয়। নাম বদলের পর এ বাহিনী এখন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) হিসেবে পরিচিত।